× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

রিজার্ভের পতন ঠেকাচ্ছে বন্ধকি ডলার

রেদওয়ানুল হক

প্রকাশ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১২:৪৫ পিএম

আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১২:৫৫ পিএম

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বর্তমানে স্থির অবস্থায় রয়েছে। পতনের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে চলতি মাসের শেষের দিকে এসে অবস্থার কিছুটা উন্নতিও হয়েছে। মূলত কারেন্সি সোয়াপ বা ডলার বন্ধক রাখার মাধ্যমে রিজার্ভ বাড়ানোর যে কৌশল নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, এটা তারই সুফল। চলতি মাসের মাঝামাঝিতে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পর মুদ্রা অদলবদল শুরু হয়। সম্প্রতি রেমিট্যান্স ও রপ্তানি কিছুটা বেড়েছে; একই সঙ্গে বেড়েছে আমদানিও। তবে আপাতত রিজার্ভের পতন ঠেকানোর নেপথ্যে সোয়াপই মুখ্য ভূমিকা রাখছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

সূত্রের মতে, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি টাকা-ডলার অদলবদল পদ্ধতি চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তারল্য সংকট মেটাতে কারেন্সি সোয়াপের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ডলার জমা রেখে টাকা ধার নেওয়া শুরু করে। এরই মধ্যে এ প্রক্রিয়ায় ১২টি ব্যাংক ৫৮ কোটি ৮০ লাখ (৫৮৮ মিলিয়ন) ডলার জমা রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। এর বিপরীতে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা ধার নিয়েছে এসব ব্যাংক। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কিছুটা বেড়েছে।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি আইএমএফ স্বীকৃত হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার। ২০ ফেব্রুয়ারি তা বেড়ে হয় ২০ দশমিক ১৯ বিলিয়ন। গত রবিবার রিজার্ভ আরও বেড়ে ২০ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব হিসাব অনুযায়ী ওই দিন শেষে রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার। যদিও রিজার্ভের নিট হিসাব আমলে নেয় আইএমএফ, যা প্রকাশ করে না বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে সূত্র মতে, বর্তমানে নিট রিজার্ভ রয়েছে ১৫ বিলিয়নের ঘরে। হিসাব মতে, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে রবিবার পর্যন্ত রিজার্ভ বেড়েছে ৫৮ কোটি ডলার। এই সময়ে কারেন্সি সোয়াপ হয়েছে ৫৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার। তাই রিজার্ভ বাড়াতে সোয়াপের ভূমিকাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

নতুন এ ব্যবস্থার ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ডলার-টাকা অদলবদল করতে পারছে। এ পদ্ধতিতে টাকা বা ডলার জমা রেখে ৭ থেকে সর্বোচ্চ ৯০ দিনের জন্য দেশীয় মুদ্রা নিতে পারবে ব্যাংক। যে মুদ্রা নেওয়া হবে নির্ধারিত মেয়াদ শেষে সেই মুদ্রা জমা দিয়ে ডলার ফেরত নেওয়া যাবে। তবে ব্যাংক চাইলে মেয়াদ বাড়াতে পারবে। মুদ্রার অদলবদলের জন্য নির্ধারিত সময়ের জন্য সুদ পাবে একটি পক্ষ। প্রচলিত ধারার ব্যাংকের ক্ষেত্রে টাকার নীতি সুদহার রেপো এবং ডলারের বেঞ্চমার্ক রেট সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেটের (এসওএফআর) মধ্যে যে পার্থক্য থাকবে সেই পরিমাণ সুদ পাওয়া যাবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, সাম্প্রতিক কারেন্সি সোয়াপগুলো হয়েছে ৩০ দিন মেয়াদি। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে টাকা জমা রেখে কোনো ব্যাংক এখনও ডলার নেয়নি। কোনো ব্যাংকের ডলারের প্রয়োজন হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার কিনতে হচ্ছে। তবে সরকারি এলসি ছাড়া ডলার ছাড় বন্ধ রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

জানা গেছে, যাদের রেমিট্যান্স বেশি আসছে, তারাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সোয়াপ করতে পারছে। এখন আনুষ্ঠানিকভাবে ১১০ টাকা দরে ব্যাংকগুলো প্রবাসী ও রপ্তানি আয় কিনছে। এই দামেই বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ডলার অদলবদল করেছে ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক প্রতিদিনের 

বাংলাদেশকে বলেন, বেশ কিছু বাণিজ্যিক ব্যাংক ডলার জমা দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা নিয়েছে। মূলত যাদের রেমিট্যান্স বেশি আসছে, তারাই সোয়াপ করছে। আবার যেসব ব্যাংকের তারল্য সংকট রয়েছে তারাও সোয়াপ করছে।

ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টাকা-ডলার অদলবদলের এ ব্যবস্থা উভয় পক্ষের জন্যই লাভজনক। কারণ উদ্বৃত্ত ডলারের বিপরীতে ব্যাংকগুলো তাৎক্ষণিকভাবে টাকা পেয়ে যাবে। আবার নির্ধারিত সময় পর টাকা ফেরত দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সমপরিমাণ ডলার নিতে পারবে। এ ব্যবস্থার আওতায় সর্বনিম্ন ৫০ লাখ ডলার বা তার সমপরিমাণ টাকা অদলবদল করা যাচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো অনেক দিন ধরেই ডলার ও টাকার সংকটে ভুগছে। এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে কোনো কোনো ব্যাংকের কাছে ডলার হোল্ডিং বেশি থাকলেও টাকার সংকট রয়েছে। আবার কারও কাছে নগদ অর্থ আছে, কিন্তু ডলার সংকট রয়েছে। এরকম ক্ষেত্রে যার কাছে যে মুদ্রা থাকবে সাময়িক সময়ের জন্য সে বিপরীত মুদ্রা নিতে পারবে। তুলনামূলক কম সুদ ও সহজ শর্তে অদলবদল সুযোগের কারণে বাজারে তারল্য সংকট কমতে পারে।

দেশে গত দুই বছর ধরে ডলার সংকট চলছে। এর ফলে রিজার্ভ কমে প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। ডলার সংকট সামাল দিতে আমদানি নিয়ন্ত্রণসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়। তাতে চাহিদা কিছুটা কমলেও ডলারের সংকট এখনও পুরোপুরি কাটেনি। ফলে আমদানি দায় মেটাতে এখনও প্রতি ডলারের জন্য ১২৩ টাকা পর্যন্ত গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। আবার কিছু ব্যাংক ঘোষণার চেয়ে বেশি দাম দিয়ে প্রবাসী আয়ের ডলার কিনছে।

ডলারের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যাংকে টাকারও সংকট রয়েছে। কারণ ব্যাংকগুলোকে নগদ টাকা দিয়ে ডলার কিনতে হয়। এ ছাড়া অনিয়ম-দুর্নীতির কারণেও তারল্য সংকটে রয়েছে কিছু ব্যাংক। কোনো কোনো ব্যাংকের কাছে আবার বাড়তি ডলারও রয়েছে। সেসব ডলারই তারা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিয়ে তার বিপরীতে সমপরিমাণ টাকা নিচ্ছে।

জানা যায়, তারল্য সংকট মেটাতে গত রবিবার কয়েকটি ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রায় ১৩ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা ধার নেয়। আর আন্তঃব্যাংক কলমানিতে প্রায় ৩ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা ধার করে।

গত ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া ঋণের শর্ত পূরণে ব্যাংক থেকে ডলার কিনে রিজার্ভ বাড়ানোর কৌশল নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলারের বেশি কিনে রিজার্ভ কিছুটা বাড়ানো হয়। এতেও শর্তের সমপরিমাণ রিজার্ভ সংরক্ষণ সম্ভব হয়নি। উপরন্তু ব্যাংক থেকে ডলার কেনার সমালোচনা শুরু হয়। এরপর ডলার কেনা বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও ডলার বিক্রি না করে তারল্য সহায়তায় বেশি আগ্রহী হয়। এমন প্রেক্ষাপটে সোয়াপ পদ্ধতি বেছে নেওয়া হয়। এতে ডলার বিক্রি না করে বরং বন্ধক রেখে টাকা সংগ্রহ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

এ বিষয়ে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘এই পদ্ধতির ফলে উভয়পক্ষের একটি অপশন বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ বাড়াতে ডলার দরকার আর ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ বাড়াতে দরকার টাকা। এখন যেসব ব্যাংকের কাছে অতিরিক্ত ডলার জমা থাকবে, তারা টাকা এনে বিনিয়োগ করবে; আবার যখন প্রয়োজন হবে টাকা জমা দিয়ে ডলার আনতে পারবে। তবে এ পদ্ধতি বর্তমানে খুব বেশি কাজে আসবে না। কারণ ব্যাংকের হাতে অতিরিক্ত ডলার আছে বলে মনে হয় না। অনেক ব্যাংক ডলার সংকটে এলসি খুলতে সমস্যায় পড়ছে।’

তবে ব্যাংকাররা বলছেন, এ ব্যবস্থার ফলে ব্যাংকগুলো ডলার বিক্রিতে অনাগ্রহী হবে। তারা আন্তঃব্যাংকে বিক্রি না করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সোয়াপ করবে। কারণ প্রয়োজনে তা উত্তোলন করার সুযোগ রয়েছে। ফলে যেসব ব্যাংক এলসি নিষ্পত্তির জন্য অন্য ব্যাংক থেকে ডলার কিনত, তারা বিপাকে পড়বে। কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার কেনা সহজ হবে না। বর্তমানে কেবল জরুরি পণ্যের এলসি নিষ্পত্তিতে ডলার সহায়তা দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

জানতে চাইলে এবিবির সাবেক চেয়ারম্যান আনিস এ খান বলেন, এ পদ্ধতির ফলে আন্তঃব্যাংকে ডলার লেনদেন কমে যেতে পারে। তখন এলসি নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক যেহেতু আইএমএফের প্রেশারে রয়েছে; তাই একটা সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। যদিও ব্যাংকের কাছে এখন অতিরিক্ত ডলার খুব একটা নেই, তবুও ‘যদি থেকে থাকে’, তাহলে সেই সুযোগটাই নিতে চাইছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা