রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৬:৪৫ পিএম
আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:৩০ এএম
রূপগঞ্জে ঐতিহ্যবাহী মেলায় বসেছে নানা পণ্যের দোকান। প্রবা ফটো
রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া গ্রামে একশ বছরেরও বেশি সময় ধরে বসছে ঐতিহ্যবাহী মেলাটি। প্রতি বছর ৮ ফাল্গুন চার দিনের এই মেলাটি বসে। শুরুতে মেলাটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য হলেও বর্তমানে তা সব ধর্মের মানুষের উৎসবে পরিণত হয়েছে। প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা এ মেলায় আসেন আশপাশের দশ গাঁয়ের মানুষ। প্রতিবারের ন্যায় এবারও বসেছে মেলা। বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) শুরু হওয়া মেলা শেষ হবে আগামী রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি)।
বুধবার রাতে মেলায় গিয়ে দেখা যায়, পণ্যের পসরা নিয়ে বসেছেন নানা স্থান থেকে আসা ব্যবসায়ীরা। মিষ্টান্ন, খেলনা, চুড়ি, ফিতা, আলতা থেকে ঘর গৃহস্থালির নানা জিনিস। তিলা, কদমা, নিমকি, শখের মিঠাই, চানাচুর, মাসের বোরা, খই, বাতাসা ও হরেক রকম খাবারের ঘ্রাণে ভারি হয়ে আছে মেলার প্রান্তর। জিলাপি ভাজা হচ্ছে কয়েকটি দোকানে। চলছে নাগরদোলা। সেই নাগরদোলায় চেপে মুক্ত বিহঙ্গের মতো ডানা মেলে আনন্দ করছে শিশুর দল। নানা বয়সি মানুষের পদচারণায় মুখর মেলা প্রাঙ্গণ। মেলাকে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে উৎসবের আমেজ।
নগরপাড়া থেকে মেলায় এসেছে রাশেক আহমেদ রাহিদ ও রওনক আহমেদ রাশিদ নামের দুই ভাই। তারা বলেন, ‘প্রতি বছর এ দিনটির জন্য অপেক্ষা করি। গ্রামীণ মেলায় সবার সঙ্গে দেখা হয়, কথা হয়। মেলায় গ্রামীণ ঐতিহ্যের জিনিসপত্র, খাবার-দাবার পাওয়া যায়। ভালো লাগে।’
খাবার বিক্রেতা ইনারউদ্দিন বলেন, ‘নিমকি, জিলাপি, মন্ডা, মিঠাই, বিন্নি ও খইসহ হরেক রকম গ্রামীণ খাবার বিক্রি করতে মেলায় এসেছি। প্রতি বছর আসি। আমার বাপ-দাদারাও এ মেলায় আসতেন।’
এক প্রবীণ বলেন, ‘মেলা থেকে আগে পেতাম মাটির হাঁড়ি ঝুলিয়ে রাখার জন্য পাটের তৈরি শিকি (শিকা)। সেই শিকি এখন আর নেই।’
মেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি বাবু সুনীল সরকার, শংকর চন্দ্র সরকার, সুশীল সরকার, হরি চন্দ্র সরকার জানান, ‘১০০ বছরের বেশি সময় ধরে একই দিনে মেলাটি বসছে। দূরদূরান্তের মানুষ এখনও আসছে মেলায় যোগ দিতে। সে কারণে সবরকমের সুবিধা রাখতে আয়োজক কমিটি প্রায় এক মাস আগে থেকে সব প্রস্তুতি নিয়ে থাকে। এবারও সে রকম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আশপাশের মুসলমানরা মেলায় সহযোগিতা করে থাকেন। মেলা উপলক্ষে প্রতিদিন কীর্তনের আসর বসবে। শনিবার রাতে বসবে অষ্টকালীন লীলা কীর্তন।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য মাসুম আহম্মেদ বলেন, ‘গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী মেলার ইতিহাস ধরে রাখতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে চলেছে কায়েতপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা। প্রতি বছর তারা স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে অব্যাহত রেখেছেন এ মেলাটির আয়োজন।’
রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দীপক চন্দ্র বলেন, ‘মেলায় যাতে কোনো প্রকার জুয়া বা অসামাজিক কার্যক্রম এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি না হয় সে জন্য সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। মেলা কর্তৃপক্ষ অনুমতিও নিয়েছে।’