প্রবা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৫ নভেম্বর ২০২২ ১৭:৫৬ পিএম
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২২ ১৮:২০ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজার। বেকারত্বের হার বাড়লেও অক্টোবরে দেশটিতে ২ লাখ ৬১ হাজার কর্মী নতুন নিয়োগ পেয়েছে। খবর বিবিসি।
এদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও উচ্চ জীবনধারণ ব্যয়ে নাকাল বিশ্ববাসী। টুইটার, আমাজন, উবারসহ অনেক করপোরেট প্রতিষ্ঠান কর্মী ছাঁটাই করছে। তবে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশটিতে প্রত্যাশার চেয়ে নিয়োগ বেশি হচ্ছে। অর্থনৈতিক মন্দার ঝুঁকি থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজার ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সেপ্টেম্বরে বেকারত্বের হার যেখানে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ ছিল। মার্কিন শ্রম বিভাগ জানিয়েছে, নতুন নিয়োগের হার প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। এক মাসেই নতুন নিয়োগ পেয়েছে ২ লাখ ৬১ হাজার কর্মী। গত বছরের তুলনায় গড়ে ঘণ্টাপ্রতি বেতন বেড়েছে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। ফলে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সামঞ্জস্য না থাকলেও বেতন কাঠামো শক্তিশালী হয়েছে।
তবে পেমেন্ট ফার্ম স্ট্রাইপ বলেছে, তারা মোট কর্মীর ১৪ শতাংশ ছাঁটাই করতে বাধ্য হচ্ছে। ট্যাক্সি ফার্ম লিফট তাদের ৭০০ জন কর্মী ছাঁটাই করেছে। টুইটার এবং আমাজনও ব্যাপক সংখ্যায় কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এমন পরিস্থিতিতেও কর্মসংস্থান সংকুচিত হওয়ার শঙ্কা মানতে নারাজ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে যা যা করা দরকার আমরা তা করে যাচ্ছি। আমি যতদিন প্রেসিডেন্ট থাকব, ততদিন এমন যুক্তি মেনে নেব না যে, আমেরিকানরা ভালো চাকরি খুঁজে পাচ্ছে না।’ দেশটির সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, শ্রমবাজারে কেবলমাত্র মৃদু সম্ভাবনা এসেছে। অর্থনৈতিক মন্দার পরেই সমৃদ্ধ ও উৎপাদনশীল ক্রিয়াকলাপ শুরু হয় বলেও জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।
বিশ্ববাজারে তিন মাস আগে পণ্যভেদে দাম কমতে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বোর্ড অব ট্রেডে জুলাই মাসে সয়াবিন তেলের দাম কমে ১ হাজার ৪৪৭ ডলারে নেমে আসে। আগস্টে তা কিছুটা বেড়ে ১ হাজার ৫১২ ডলারে উন্নীত হয়। এরপরও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর সময়ের তুলনায় এই দাম কিছুটা কম। একইভাবে ইউক্রেন থেকে শস্য রপ্তানি শুরু হওয়ার পর গমের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। কমোডিটি এক্সচেঞ্জে প্রতি টন গম ২৮৫ ডলারে বেচাকেনা হচ্ছে। আবার মে মাসের তুলনায় আগস্টে পাম তেলের দাম কমেছে ৩৮ শতাংশ।
গতমাসে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ২ শতাংশ। চলতি বছরের জুনে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ, যা ১৯৯১ সালের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ঋণ গ্রহণে সুদের হার বৃদ্ধি করে মূল্যস্ফীতি কমানোর চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। উচ্চ সুদের হারের কারণে এরইমধ্যে আবাসন খাতে বিনিয়োগ কমতে শুরু করেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে জ্বালানিসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে। অনেক দেশ উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রভাব কাটিয়ে উঠতে সুদের হার বাড়ানোর দিকেই মনোযোগ দিচ্ছে।
নিকট অতীতের অর্থনৈতিক মন্দার তুলনায় এবারের মন্দার ধরন সম্পূর্ণ ভিন্ন। অতীতের সব মন্দার পেছনে ছিল অর্থনৈতিক কারণ। তবে এবারের মন্দার কারণ রাজনৈতিক। করোনা মহামারির ধাক্কা সামাল দিতে পারলেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে যে আর্থিক সংকটের সৃষ্টি হয়েছে, তা উন্নত বিশ্ব মোটেই সামলে উঠতে পারেনি। উন্নত ও উন্নয়নশীল উভয় দেশকেই এখন অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। যেহেতু এবারের মন্দার কারণ ভিন্ন, তাই অর্থনীতির স্বাভাবিক তত্ত্ব প্রয়োগ করে এই মন্দা মোকাবিলা করা বেশ কঠিন এবং সে কারণেই পশ্চিমা বিশ্ব আধুনিক মুদ্রানীতি প্রয়োগ করে এই মন্দা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে।