× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বড় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য বাজেট হতে হবে উচ্চাভিলাষী

জোনায়েদ মানসুর

প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২১:৩২ পিএম

ডিসিসিআইয়ের সভাপতি আশরাফ আহমেদ। প্রবা ফটো

ডিসিসিআইয়ের সভাপতি আশরাফ আহমেদ। প্রবা ফটো

অর্থনীতি বড় করতে হলে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। তাই দেশের অর্থনীতির উচ্চাভিলাষী প্রবৃদ্ধির জন্য বাজেটও উচ্চাভিলাষী হতে হবে। এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই যে, সরকার অর্থনীতি যে রেটে বৃদ্ধি করতে চায় সেটা উচ্চাভিলাষী বলে জানিয়েছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আশরাফ আহমেদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জোনায়েদ মানসুর

প্রবা : দেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী কী?

আশরাফ আহমেদ : দেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় চ্যালঞ্জগুলোর একটি হচ্ছে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ কমে যাওয়া। তারল্য সংকটে ব্যাংকঋণ দিতে পারছে না। ১০ শতাংশ ঋণ প্রবৃদ্ধি দিয়ে অর্থনীতির এত বড় লক্ষ্য অর্জন সম্ভব না। এজন্য চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য কমে যাওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করতে ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের চাহিদা ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেড়ে গেছে। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংক মাত্র ১০ শতাংশ ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ঠিক করেছে। এ অবস্থায় চলতি মূলধনের চাহিদা পূরণ করাই হবে বড় চ্যালেঞ্জ।

প্রবা : দেশকে ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে নিয়ে যেতে আমাদের কী করা দরকার?

আশরাফ আহমেদ : আমাদের অর্থনীতির বর্তমান আকার প্রায় ৪৫৪ বিলিয়ন ডলার। ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হবে বাংলাদেশ। আর ২০৩০ সালে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার এক ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এ লক্ষ্য অর্জনে জিডিপি প্রবৃদ্ধি এখনই ১০ শতাংশে উন্নীত করা প্রয়োজন। ২০২০ সালে ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি হওয়ার লক্ষ্য অর্জনে আমাদের সময় ছিল ১০ বছর। কোভিড মহামারি ও যুদ্ধাবস্থাসহ আন্তর্জাতিক নানা কারণে চার বছর চলে গেছে। এখন লক্ষ্য অর্জনে সময় আছে মাত্র ছয় বছর। এখন থেকে ছয় বছরের মাথায় আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আড়াই গুণ বাড়াতে হবে। 

প্রবা : বেশ কয়েক বছর ধরে বাজেট উচ্চাভিলাষী হয়? এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী?

আশরাফ আহমেদ : বাজেট উচ্চাবিলাষী হতে পারে। উচ্চাভিলাষী প্রবৃদ্ধির বাজেট উচ্চাভিলাষী হতে হবে। এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই যে, সরকার অর্থনীতি যে রেটে গ্রো করতে চায় সেটা উচ্চাভিলাষী। অর্থনীতি গ্রো করতে হলে বিনিয়োগ করতে হবে। বিনিয়োগ করতে হলে বাজেট তো লাগবেই। সমস্যা হচ্ছে, ওই টার্গেটের নিচে যে জিনিসগুলো, যেমনÑ ট্যাক্স বাড়াতে হবে, ভ্যাট বাড়াতে হবে, বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, দক্ষতা বাড়াতে হবে এ রকম আরও অনেক কিছু করতে হবে।

প্রবা : ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়াতে কী কী করা প্রয়োজন বলে আপনি মনে করেন?

আশরাফ আহমেদ : দেশে খুচরা ব্যবসায়ী ২১ লাখ। এর মধ্যে ১০ শতাংশ নিবন্ধিত। ভ্যাট দেয় ১ শতাংশ। ট্যাক্স নেট বাড়াতে হবে। বেইজ বাড়াতে হবে, অন্য কোনো উপায় নাই। দেশে সাড়ে তিন থেকে চার লাখ প্রতিষ্ঠান সর্বনিম্ন ভ্যাটও যদি দেয়, তাহলেও দেশের অর্থনীতি অনেক দূর এগিয়ে যাবে।

প্রবা : দেশে করদাতার হার কেমন? করদাতা বাড়াতে কী কী করা দরকার?

আশরাফ আহমেদ : দেশের ১৮ কোটি লোকের মধ্যে করদাতার হার অত্যন্ত কম। মাত্র ৪৪ লাখ মানুষ কর দেন, যা মোটেও কাম্য নয়। এনবিআরের তথ্যানুযায়ী দেশে টিআইএনধারী রয়েছেন প্রায় ১ কোটি, যেখানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রায় ৩২ লাখ করদাতা রাজস্ব প্রদান করেছে। যে কারণে দেশে কর-জিডিপির হার অনেক কম। এমন বাস্তবতায় আগামী ১০ বছরে করদাতার সংখ্যা এক-দুই কোটিতে উন্নীত করতে এনবিআরকে একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

প্রবা : করজাল আরও সম্প্রসারণ করতে এনবিআরের কোন বিষয়টিতে সবচেয়ে বেশ মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন বলে আপনি মনে করেন? 

আশরাফ আহমেদ : দেশের ইনকাম ট্যাক্সের (আয়কর) ৬০ শতাংশ আসে ১০ হাজারেরও কম করদাতার কাছ থেকে। তাই সরকারের কর নেটের আওতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। আর আয়কর ও মূল্য সংযোজন কর প্রদান-সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় সহজে সমাধানের লক্ষ্যে ইন্টিগ্রেটেড ট্যাক্স অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সিস্টেম (আইটিএএস) এবং ইন্টিগ্রেটেড ভ্যাট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সিস্টেম (আইভিএএস) প্রবর্তন প্রয়োজন। রাজস্ব প্রদান প্রক্রিয়া অটোমেশন হলে যেমন কমবে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের হয়রানি, তেমনি বাড়বে রাজস্ব আয়। 

প্রবা : আগামী বাজেটে আপনাদের প্রত্যাশা কী?

আশরাফ আহমেদ : আগামী বাজেটে ব্যবসাবান্ধব আয়কর ব্যবস্থা, ভ্যাটের আওতা বাড়ানোসহ বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি। পাশাপাশি আগামী বাজেট থেকে উৎসে কর এবং ন্যূনতম করের খাত ধাপে ধাপে কমিয়ে আনা, সরকারি ও বেসরকারি খাতে করদায়ের অসমতা হ্রাস, আইন অনুযায়ী ৬০ দিনের মধ্যে কর রিফান্ড করা প্রয়োজন। এ ছাড়া কাস্টমস প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয় দরকার। আর আমদানি পর্যায়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কেটে নেওয়া ৫ শতাংশ অগ্রিম কর মওকুফ অথবা দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমন্বয়ে বিদ্যমান জটিলতা নিরসন দরকার। ভ্যাটের আওতাবহির্ভূত ব্যবসায়ীদের টার্নওভারের ঊর্ধ্বসীমা ৩ কোটি টাকা থেকে ৪ কোটি টাকায় উন্নীতকরণ প্রয়োজন। আমরা সরকারি বিনিয়োগ চাই, আমাদের অবকাঠামো, জ্বালানি এবং শিক্ষা খাতে। এই বিনিয়োগ যে কর রাজস্ব থেকে আসতে হবে তা নয়, পিপিপির মাধ্যমে আমরা বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে পারি আবার একই সঙ্গে সরকারি ব্যয়ের দক্ষতা বাড়ুক, সেটাও চাই।

প্রবা : গত বাজেটের অর্জন কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

আশরাফ আহমেদ : ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ কম অর্জিত হয়েছে। আবার ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ২০২২-২৩ অর্থবছরের অর্জিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৩৫ শতাংশ বেশি, যা অর্জন করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে শুধু টাকার অঙ্কে বাজেটের সফলতা বা ব্যর্থতা নির্ভর করা ঠিক নয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে নেওয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্তের দিকে যদি আমরা লক্ষ করি, তাহলে পরিলক্ষিত হয় যে, সরকারের নেওয়া পলিসির কারণে আমরা দ্রুততম সময়ে কোভিড-১৯ মহামারি থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরতে সক্ষম হয়েছি।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা