প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:৪৩ এএম
আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:৫১ এএম
পুরো শীতেই এবার শাকসবজির দাম ছিল চড়া। তবে গত কয়েকদিনে সেই চড়াভাব কিছুটা কমেছে। কিন্তু এই কমের স্বস্তি কেড়ে নিচ্ছে হু হু করে বাড়তে থাকা পেঁয়াজের দাম। ফলে ক্রেতার মাথার ওপর দ্রব্যমূল্যের চাপ রয়ে গেছে আগের মতোই। এই অবস্থার মধ্যে চালের বাজারে লাগাম পড়তে দেখা যাচ্ছে। দেড় মাস বাড়তি দামে বিক্রির পর একটু একটু করে কমতে শুরু করেছে চালের দাম।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে কলমিলতা বাজার, শেরেবাংলা নগর কাঁচাবাজার ও মহাখালী বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে। সেই সঙ্গে প্রতি কেজি চালে কমেছে ২ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত।
সবজিতে দাম কমেছে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা
গত ৪ ফেব্রুয়ারি বাজারভেদে লম্বা বেগুন বিক্রি হয় ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে। গতকাল তা বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৭০ টাকায়। শিম ছিল মানভেদে ৬০ থেকে ১০০ টাকা, গতকাল বিক্রি হয়েছে শিম ৫০ থেকে ৮০ টাকায়। লম্বা ও গোল বেগুন ছিল ১১০ থেকে ১২০ টাকা, গতকাল বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। প্রতি পিস লাউ ছিল ৮০ থেকে ১০০ টাকা, গতকাল বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে। কাঁচামরিচ ৮০/১০০ টাকা কেজি থেকে কমে বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৯০ টাকায়।
শেরেবাংলা কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা মিমজাল শিকদার বলেন, পুরো শীতকালে সবজির দাম ছিল বেশি। ক্রেতারা চাহিদামতো সবজি কিনতে পারেননি। আমরাও বেশি লাভ করতে পারিনি। কয়েকদিন ধরে সব ধরনের সবজি কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। এতে বেচাকেনাও কিছুটা বেড়েছে।
সপ্তাহখানেক যাবৎ আলুর দাম কিছুটা কমেছে। বর্তমানে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। মহাখালীর মুদি দোকানি মুহিবুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বাজারটিতে সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২৫ টাকা বেড়ে ১১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি নতুন রসুন ১৪০ টাকা, আমদানি করা মসুর ডাল (বড়) ১১০ টাকা, ছোট মসুর ডাল ১৪০ টাকা ও মুগডাল ১৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ভোজ্যতেলে সরকার শুল্ক কমালেও বাজারে তার কোনো প্রভাব পড়েনি। প্রায় প্রতিটি বাজারেই ৫ লিটার সয়াবিন তেলের বোতল বিক্রি হচ্ছে ৮৩০ টাকায়, আধা লিটার সয়াবিনের দাম ৯০ টাকা। এক লিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৭৩ টাকায়।
কমছে চালের দাম
জানুয়ারির শুরু থেকে হঠাৎ করেই বেড়ে যায় চালের দাম। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে তৎপরতা শুরু করে খাদ্য মন্ত্রণালয়। ১৬ জানুয়ারি থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত জেলায় জেলায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন মজুদদার ও মিলমালিকদের থেকে আদায় করা হচ্ছে জরিমানা। প্রায় এক মাস পর চালের দাম কেজিতে ২ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত কমতে দেখা গেছে।
শেরেবাংলা নগর কাঁচাবাজারের চাল বিক্রেতা আব্দুল হাকিম বলেন, নাজিরশাইল চাল কেজিতে ২ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৬৮ টাকায়, মিনিকেট চাল ৩ থেকে ৪ টাকা কমে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়, বিআর২৮ চাল ২ থেকে ৪ টাকা কমে ৫২ টাকায়, স্বর্ণা ৩ টাকা কমে ৪৫ টাকায়, চিনিগুড়া চাল ১০ টাকা কমে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মহাখালী বাজারের চাল ব্যবসায়ী মুস্তাকিম আহমেদ জানান, বিআর২৮ চাল কেজিতে ৫ টাকা কমে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিনিগুড়া চাল বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়।
তিনটি বাজারেই ফার্মের ডিমের হালি ৪৮ টাকা। এক ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। কলমিলতা ও মহাখালী বাজারে সপ্তাহখানেক ধরে ডিমের হালি ৪৮ টাকা। শেরেবাংলা নগরের বাজারে হালি ৪৫ টাকা থাকলেও তিন দিন ধরে ৪৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সেখানকার ডিম বিক্রেতা নাদিম হোসেন বলেন, আগে আমরা ৪৫ টাকা হালিতে ডিম বিক্রি করেছি। ফার্মের সাদা ডিমের হালিও এখানে ৪৮ টাকা। তা ছাড়া হাঁসের ডিম বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা হালিতে।
বাজারভেদে মাছের দাম কেজিতে ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। ছোট আকারের তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়, বড় তেলাপিয়া ২৪০ থেকে ২৫০ টাকায়। ছোট আকারের পাঙ্গাশ প্রতি কেজি ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, বড় পাঙাশ কেজি ২২০ থেকে ২৩০ টাকা। রুইয়ের পোনার কেজি ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা, দেড় থেকে দুই কেজি ওজনের রুইয়ের কেজি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, তিন থেকে চার কেজি ওজনের রুই ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। মৃগেলের কেজি ২২০ থেকে ২৪০ টাকা। পাবদার কেজি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, কই ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা, শিং আকারভেদে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, টেংরা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, মাঝারি আকারের চিংড়ি কেজি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারভেদে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজিতে। পাকিস্তানি মুরগি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা ও লেয়ার মুরগি ২৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে বাজারভেদে গরুর মাংসের দাম কেজিতে ৩০ টাকা কমে ৭২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রস্তুতি সভা করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. আবদুর রহমান। গতকাল নিজ মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত ওই সভায় তিনি বলেন, রমজান মাসে প্রাণিজ আমিষ পণ্য মাংস, দুধ, ডিম, ড্রেসড ব্রয়লার ইত্যাদির সরবরাহ বাড়িয়ে দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখা হবে। নিম্ন আয়ের মানুষকে স্বস্তি দিতে রাজধানীর ২৫টি স্থানে ড্রেসড ব্রয়লার, গরু ও খাসির মাংস, দুধ ও ডিম সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রি করা হবে।