রাজশাহী অফিস
প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৪:১৮ পিএম
আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৫:৫২ পিএম
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়েছে। আমরা ভারতীয় মুদ্রায় ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারব। এতে করে দেশের রিজার্ভের ওপর চাপ কমবে।’
সুলতানগঞ্জ-মায়া নৌরুটের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এই তথ্য জানান।
সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সুলতানগঞ্জে অবস্থিত পদ্মার তীরে এই নৌবন্দরের উদ্বোধন করা হয়। এই নৌবন্দরে ভারতীয় রুপিতে ব্যবসার ভালো প্রতিফলন পড়বে বলে প্রতিমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় রাজশাহীর যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘রাজশাহীতে এখন সড়ক পথের পাশাপাশি রেল, বিমান ও নৌপথ যোগাযোগ রয়েছে। যা একটি অঞ্চলের অর্থনীতির সমৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমদের যোগাযোগব্যবস্থার পরিধি বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাজশাহীর এই নৌপথটি নতুন দিগন্তের উন্মোচন করল। শিক্ষানগরী রাজশাহীর অর্থনীতিও এখন এগিয়ে যাবে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘জীবন এবং জীবিকা দুটো এক সঙ্গে চালাতে হবে। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা এই পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করছি।সুলতানগঞ্জ-ময়া প্রটোকল রুটটি ঢাকার আরিচা পর্যন্ত বিস্তৃত। আমাদের সঙ্গে ভারতের কথা হচ্ছে। রুটটি স্থায়ীভাবে ধরে রাখার জন্য ড্রেজিং প্রয়োজন। আমরা সেটার একটা প্রকল্প গ্রহণ করেছি। ব্যবসায়ীরা এখান থেকে উপকৃত হবে।’
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির কথা উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দীর্ঘ প্রায় ৬০ বছর পর সুলতানগঞ্জ-মায়া রুটটি আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করলাম। এটা শুধু রাজশাহীবাসীর জন্যই নয়; পুরো বাংলাদেশের জন্যই মাহেন্দ্রক্ষণ। আমাদের যে পররাষ্ট্র নীতি তাতে সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু যার পথ দেখিয়েছেন। তাদের সংস্কৃতির সঙ্গে আমাদের অনেক মিল ও বন্ধন রয়েছে। তাছাড়া মহান মুক্তিযুদ্ধের তাদের ভূমিকা রয়েছে। শুধু বন্ধুত্ব বা সংস্কৃতির মধ্যেই আমরা সীমাবদ্ধ নয়। আমরা একে একে ভারতের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানাভাবে আমরা একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাচ্ছি।’
নতুন এই নৌবন্দরে কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘পুরো এলাকা পর্যবেক্ষণ করে সেই অনুপাতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নদীর ভাঙ্গন আছে, এর নিজস্ব চরিত্র আছে। এসব বিবেচনায় নিয়ে আমরা পরবর্তী ব্যবস্থাগ্রহণ করব।’
বিআইডব্লিউটিএর তথ্যমতে, ভারত থেকে স্থলবন্দর দিয়ে প্রতি টন পাথর আনতে খরচ পড়ে ১৩ মার্কিন ডলার। সমুদ্র পখে এই খরচ ২০ ডলার। সুলতানগঞ্জ নৌবন্দর দিয়ে পাথর আমদানি করতে খরচ পড়বে মাত্র ৯ থেকে ১০ ডলার। এছাড়া বাংলাদেশের কার্গো বা জাহাজে পাথর আনা যাবে। বিল দেওয়া যাবে আন্তঃদেশীয় মুদ্রায়। ফলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে। সৃষ্টি হবে বহু কর্মসংস্থান।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মায়া বন্দর থেকে নৌপথে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সুলতানগঞ্জ নৌবন্দরের দূরত্ব মাত্র ২০ কিলোমিটার। সুলতানগঞ্জ থেকে রাজশাহীর দূরত্ব ৩৬ কিলোমিটার। রাজশাহীর সঙ্গে পাবনা, সিরাগঞ্জ, বগুড়া, নওগাঁ, জয়পুরহাট, রংপুর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, খুলনা ও যশোর এমনকি ঢাকার সাথে সড়কপথে সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। ফলে দেশের স্থলবন্দর বা সমুদ্রবন্দরের চেয়ে অনেক সাশ্রয় হবে সুলতানগঞ্জ-মায়া নৌপথ।
বাংলাদেশে মোট পাঁচটি আন্তর্জাতিক নৌপথ চালু আছে জানিয়ে বিআইডাবলুটিএর বৈদেশিক পরিবহন শাখার উপপরিচালক শর্মিলা খানম গতকাল বলেন, এগুলোর মধ্যে সুলতাগঞ্জ থেকে মায়া বন্দরটি সবচাইলে স্বল্প দূরত্বের। নদীর নব্য বৃদ্ধি করতে পারলে এই রুট আরিচা পর্যন্ত দীর্ঘ হবে, যা অনুমোদন হয়ে আছে।