× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

রংপুরে সিডিআরসির প্রকল্প

‘পানির ব্যবস্থা হয়া হামার চর সবুজ হইছে’

মেরিনা লাভলী, রংপুর

প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১২:৩৩ পিএম

আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২১:৩৫ পিএম

‘পানির ব্যবস্থা হয়া হামার চর সবুজ হইছে’

লেবু মিয়া এবার বালুচরে গম আবাদ করেছেন। প্রায় এক একর জমিতে হৃষ্টপুষ্ট গমের গাছ বাতাসে দোল খাচ্ছে। মাঘের মিষ্টি বিকালে সোলারবিদ্যুৎচালিত পাম্প দিয়ে সেচ দিচ্ছিলেন তিনি। লেবু মিয়া বলেন, চরে ফসল আবাদের অন্যতম বাধা সেচসংকট। এবার তা দূর হয়েছে। তিনি এ বছর ভালো মানের বীজ, সার, কীটনাশক পেয়েছেন জানিয়ে বলেন, জৈব বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তার গমের আবাদও ভালো হয়েছে। ফসল ঘরে তোলার সময় ভালো দাম পাবেন বলে আশা করছেন তিনি।

তিস্তা নদী শুকিয়ে গেলে চর মরুভূমি হয়ে যায়। সেই সমস্যার সমাধান এসেছে সৌরবিদ্যুতে। রংপুরের সীমান্তবর্তী লালমনিরহাট সদর উপজেলার হরিণচরার কৃষক লেবু মিয়া বলেন, ‘পানির অভাবোত হামরা চাষ কইবার পারছিলাম না। অ্যালা সোলার দিছে। মটর দিয়া পুরা চরোত পানি দেওয়া যায়। পানির ব্যবস্থা হয়া হামার চর সবুজ হইছে। মুই এইবার চাইর দোন জমিত গম আর আট দোন জমিত ভুট্টা আবাদ করছি। তামাকের চাইতে গম-ভুট্টাত বেশি লাভ।’ 

পল্লী উন্নয়ন একাডেমি-বগুড়ার চর উন্নয়ন গবেষণা কেন্দ্রের (সিডিআরসি) তথ্যমতে, খাদ্যনিরাপত্তা ও উন্নত পুষ্টিমান নিশ্চিত করতে ও জলবায়ুসহিষ্ণু টেকসই কৃষির প্রসার ঘটাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) সামাজিক দায়বদ্ধতার ১১ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘ভরসার নতুন জানালা’ নামক কৃষি সহায়তামূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সিডিআরসি। রংপুর বিভাগের লালমনিরহাট সদর উপজেলার পূর্বহরিণচরা গ্রামের ২৩০ জন কৃষক, রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার পূর্ব ইচলী গ্রামের ৫০ কৃষক, গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়ার চর গ্রামের ২০ পরিবার ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর গ্রামের ১০০ কৃষককে এ কর্মসূচির আওতায় বিনা মূল্যে বীজ, সার, কীটনাশক, ড্রাইং ম্যাট, সৌর সেচসুবিধা, ভুট্টা মাড়াই যন্ত্রসহ আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের উত্তরাঞ্চলে জলবায়ুর ঝুঁকিতে থাকা প্রায় ৪০০ কৃষক পরিবারের মাঝে কৃষি উপকরণ বিতরণ, নির্বাচিত কৃষক পরিবারের নারী-পুরুষদের কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়ন, কৃষক পরিবারের আয়, খাদ্য নিরাপত্তা ও জীবনমান উন্নয়ন, দেশে গম ও ভুট্টা উৎপাদন বৃদ্ধিতে অবদান রাখা, গম-ভুট্টা আবাদ প্রচলনের মাধ্যমে তামাক চাষ-অধ্যুষিত এলাকার তামাকচাষিদের তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।

সিডিআরসি গত ২০ বছর ধরে চরের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করছে বলে জানান বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমির অতিরিক্ত মহাপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, ‘আমরা চরে লাভজনক কৃষি নিয়ে গিয়েছি এবং কৃষকদের আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তির প্রশিক্ষণ প্রদান করেছি। এখানে সোলারের মাধ্যমে সেচের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সোলার বোর্ডটিতে চাকা সংযুক্ত করায় ভ্রাম্যমাণভাবে পুরো চরে সেচ দিতে পারবে। যদি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের মতো অন্য ব্যাংকগুলো ফান্ড নিয়ে এগিয়ে আসে, তবে দেশের নদীর তীরবর্তী চরের জমিগুলো ফসল আবাদের আওতায় আনা সম্ভব হবে। তাহলে আমরা খাদ্যে সয়ংসম্পূর্ণতা ধরে রাখতে পারব এবং বিদেশে তা রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সুযোগ তৈরি হবে।’

ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী আরিফ কাদরী বলেন, ভরসার নতুন জানালা কর্মসূচির মাধ্যমে তার ব্যাংক দেশের ৬৪টি জেলায় উদ্যোক্তা তৈরি ও প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। দেশের ৫০টি নির্বাচিত এলাকায় নিবিড় প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে মডেল এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। এসব এলাকায় ৬৫০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ১৬০০ বসতভিটা ও ৮০ কিলোমিটার সড়ক, বাঁধে ৫৫ হাজার তাল ও অন্যান্য গাছের চারা রোপণ করা হচ্ছে। ৫০টি মডেল উপজেলার প্রতিটিতে প্রায় ৬০ জন কৃষি উদ্যোক্তাকে মাছ চাষ, পশুপালন, শস্য ও সবজি উৎপাদন বিষয়ে কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদানসহ কৃষকদের জীবনমান উন্নয়নে নানা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে ৪০০ মেট্রিক টনের বেশি গম এবং প্রায় আড়াইশ মেট্রিক টন ভুট্টা উৎপাদিত হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু ফারাহ মো. নাছের। তিনি বলেন, ‘দেশে গমের চাহিদার বিপরীতে গত এক দশকে শতকরা ২০ ভাগ হারে গম উৎপাদন কমে গেছে। তাই বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে ঘাটতি মেটাতে হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে প্রাক্কলনে দেখা যায়, এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে ৪০০ মেট্রিক টনেরও বেশি গম এবং প্রায় আড়াইশ মেট্রিক টন ভুট্টা উৎপাদিত হবে। যার মাধ্যমে কৃষক পৌনে তিন কোটি টাকা আয় করবেন।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা