প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২০:৫৪ পিএম
আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২১:২৬ পিএম
প্রবা ফটো
ব্যাংক খাতে সুশাসন ফেরাতে আইএমএফের প্রেসক্রিপশনে এবার ব্যাংকের মালিকানায় কঠোরতা আরোপ করল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রথমবারের মতো বয়স ও অভিজ্ঞতার শর্ত আরোপ করে পরিপত্র জারি করা হয়েছে। ঋণখেলাপিদের জন্যও রয়েছে কঠোর বার্তা। রবিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের জারি করা নীতিমালায় পর্ষদ গঠন এবং পরিচালকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে বিশদ বিবরণ দেওয়া হয়েছে।
নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, ব্যাংক-কোম্পানির পরিচালক হওয়ার সর্বনিম্ন বয়স হবে ৩০ বছর। ইতঃপূর্বে কোনো কোনো ব্যাংকে ২২ বছর বয়সেও পরিচালক পদে নিয়োগ পাওয়ার নজির রয়েছে। ব্যাংক খাতে পরিবারতান্ত্রিক আধিপত্য কমাতে এসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংক-কোম্পানির পরিচালক পদে নিযুক্ত হওয়ার জন্য যেসব যোগ্যতা ও উপযুক্ততা নির্ধারণ করেছে, তার মধ্যে রয়েছে অন্যূন ১০ বছরের ব্যবস্থাপনা বা ব্যবসায়িক বা পেশাগত অভিজ্ঞতা। অভিজ্ঞতা সম্পর্কে আরও বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তির বয়স ১৮ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তার কোনো কাজের অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নেওয়া হবে না।
ব্যাংক–কোম্পানির পরিচালকদের যোগ্যতা সম্পর্কে আরও বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত হতে পারবেন না কিংবা কোনো জাল-জালিয়াতি, আর্থিক অপরাধ বা অন্য অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না বা জড়িত নন, এমন নিশ্চয়তা থাকতে হবে। তার সম্পর্কে কোনো দেওয়ানি বা ফৌজদারি মামলায় আদালতের রায়ে বিরূপ পর্যবেক্ষণ বা মন্তব্য থাকতে পারবে না; আর্থিক খাতসংশ্লিষ্ট কোনো নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের বিধিমালা, প্রবিধান, নীতিমালা বা নিয়মাচার লঙ্ঘনের কারণে দণ্ডিত হওয়া যাবে না।
নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, ব্যাংক-কোম্পানির পরিচালক হতে আগ্রহী ব্যক্তি এমন কোনো কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না, যার নিবন্ধন বা লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে বা প্রতিষ্ঠানটি অবসায়িত হয়েছে; তার নিজের কিংবা স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া ঋণের জন্য খেলাপি নন।
ব্যাংক-কোম্পানির পরিচালক হতে গেলে অন্য কোনো ব্যাংক-কোম্পানি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বীমা কোম্পানি বা তেমন কোম্পানিগুলোর কোনো সাবসিডিয়ারি কোম্পানির পরিচালক বা উপদেষ্টা বা পরামর্শক বা অন্য কোনোভাবে লাভজনক পদে নিয়োজিত থাকা যাবে না। এ ছাড়া তিনি একই ব্যাংক-কোম্পানির বহিঃহিসাব নিরীক্ষক, আইন উপদেষ্টা, উপদেষ্টা, পরামর্শক বা অন্য কোনো লাভজনক পদে থাকতে পারবেন না।
পরিচালকের যোগ্যতা সম্পর্কে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, তিনি কোনো সময়ে আদালত কর্তৃক দেউলিয়া ঘোষিত হননি; তিনি ব্যক্তিগতভাবে অথবা তার ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বা অংশীদারি প্রতিষ্ঠানের জন্য করখেলাপি হতে পারবেন না।
সংশ্লিষ্ট ব্যাংক-কোম্পানিতে কোনো পদে চাকরিরত থাকলে চাকরি অবসায়নের পাঁচ বছর অতিক্রম না হলে সেই ব্যক্তি ব্যাংক-কোম্পানির পরিচালক হতে পারবেন না। কোনো ব্যাংক–কোম্পানি কর্তৃক বা ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন, ২০২৩-এর আওতায় প্রতিষ্ঠিত কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা হিসেবে তালিকাভুক্ত হলে সেই তালিকা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর পাঁচ বছর না পেরোলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি পরিচালক হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবেন না।
স্বতন্ত্র পরিচালকদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রে এসব শর্ত ছাড়াও স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগসংক্রান্ত নীতিমালা পরিপালিত হবে বলে পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রাইম ব্যাংকের চেয়ারম্যান তানজিল চৌধুরি বলেন, ‘করপোরেট সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য এই সার্কুলার জারি করা হয়েছে বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। যেটি আরও আগেই করা উচিত ছিল।’
তিনি বলেন, ‘এই সার্কুলার বাস্তবায়ন হলে ব্যাংক খাতে সুশাসনের ঘাটতি অনেকটাই দূর হয়ে যাবে।’