প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২১:৩৮ পিএম
আইএমএফ পরীক্ষায় পাশ করার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। প্রবা ফটো
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ কর্মসূচীতে আরোপিত বেশকিছু শর্তে এখনো পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। এমন অবস্থায়ও তৃতীয় কিস্তির ঋণ পেতে আশাবাদী সরকার। অপর্যাপ্ত রিজার্ভ, মাত্রাতিরিক্ত খেলাপি ঋণ আর ব্যাংক খাতে সুশাসন নিশ্চিতের মতো গুরুত্বপূর্ণ সূচকে পিছিয়ে থেকেও আইএমএফ পরীক্ষায় পাশ করার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশে আইএমএফের আবাসিক প্রতিনিধি জায়েন্দু দের সঙ্গে বৈঠক শেষে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সামনে এমন ঘোষণা দেন তিনি। এ সময় নির্ধারিত সময়ে তৃতীয় কিস্তি ছাড় হবে এমন প্রত্যাশার কথাও জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আইএমএফের শর্তপূরণের পরীক্ষায় বাংলাদেশ পাস করেছে। তাই সময়মতো ঋণের তৃতীয় কিস্তি পাওয়া যাবে। তারা যেসব শর্ত দিয়েছে, বাংলাদেশ তার বেশিরভাগই পূরণ করেছে। নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তারা আজ (গতকাল বৃহস্পতিবার) এসেছিল। তারা আবার মার্চ মাসে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে। আশা করছি, বাংলাদেশ ঋণের তৃতীয় কিস্তি পেয়ে যাবে।’
আইএমএফের শর্তের মধ্যে রিজার্ভ ও রাজস্ব আয়ে বাংলাদেশের ঘাটতি ছিল। এ নিয়ে আইএমএফ কিছু বলেছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘তারা যেসব লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছিল, বাংলাদেশ সেগুলো মোটামুটি পূরণ করেছে।’ কিস্তির বাইরে নতুন কোনো বাজেট সহায়তার আশ্বাস পাওয়া গেছে কি না জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখবে। পরিস্থিতি ভালো, দেখা যাক, কী হয় বাংলাদেশ পরীক্ষায় পাস করেছে।’
এ সময় ভালো করার লক্ষণগুলো কী, এমন প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ভালো করছি এটাই তো ইতিবাচক বিষয়; ফেল করলে কি আমরা বলব যে পাস করেছি।’
এ ছাড়া ডলারে বিনিময় হার নির্ধারণের প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাজারভিত্তিক নয়, যে ক্রলিং পেগ পদ্ধতির কথা হয়েছে, সেটাই চলবে। দুর্বল ব্যাংকগুলোর বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপের বিষয়েও কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘দুর্বল ব্যাংকগুলো সংস্কার করে আগামীতে সবল কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরই মধ্যে এ পদক্ষেপ বাস্তবায়নে ব্যাংকগুলোকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। দুর্বল ব্যাংককে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা ভালো। দু’একটা ব্যাংক এমন আছে, তারা একেবারে কাজই করতে পারছে না। তাদের শক্তিশালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করাই ভালো।’
উন্নত অর্থনীতিতে অহরহ একীভূত করা হয় উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এক্ষেত্রে সময় দিতে হবে। তবে এখনো তেমন সিদ্ধান্ত নেওয়া কিংবা এটি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎপরতা থাকলেও এটি সময়সাপেক্ষ। এখন পর্যন্ত ব্যাংক একীভূতকরণের প্রস্তাব আসেনি; প্রস্তাব আসুক, তারপর দেখা যাবে।’
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সাল শেষে আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী নিট বা প্রকৃত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। আইএমএফ বাংলাদেশের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের যে ঋণ কর্মসূচি চালু রেখেছে তার শর্ত অনুযায়ী, ডিসেম্বর শেষে প্রকৃত রিজার্ভ থাকার কথা ছিল এক হাজার ৭৭৮ কোটি ডলার। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রের তথ্য বলছে, বছর শেষে প্রকৃত রিজার্ভ দাঁড়ায় প্রায় ১ হাজার ৬৭৫ কোটি ডলার। তবে বর্তমানে এর পরিমাণ আরও কম। আগামী মার্চের শর্ত পূরণের মতো কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। আকু পেমেন্টের চাপে নতুন বছরের প্রথম মাসে রিজার্ভ প্রায় দুই বিলিয়ন ডলার কমে গেছে। সংস্থাটির শর্ত অনুযায়ী, আগামী মার্চ শেষে রিজার্ভ রাখতে হবে ১ হাজার ৯২৬ কোটি ডলার। এর আগে গত বছরের জুলাই ও সেপ্টেম্বরে কাঙ্খিত রিজার্ভ সংরক্ষণে ব্যর্থ হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপর লক্ষ্য কমিয়ে দেওয়ার পরও ডিসেম্বরে ফের লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ।
তবে আগের দুই প্রান্তিকে শর্ত পূরণ না হলেও ডিসেম্বর শেষে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়েছে। গত ডিসেম্বর শেষে এনবিআর ও এনবিআরবহির্ভূত কর রাজস্ব আহরণ হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। শর্ত কমিয়ে আইএমএফের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ ৪৩ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ছয় মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে।
ব্যাংকের সুশাসন ও খেলাপি ঋণ সূচকে পিছিয়ে আছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের নিচে রাখার শর্ত আরোপ করা হলেও বর্তমানে এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ১৫ শতাংশের আশেপাশে রয়েছে। এ ছাড়া প্রায়ই বেনামি ও জালিয়াতির ঋণ, অর্থপাচারসহ নানা ইস্যুতে প্রশ্নের মুখে আছে বেশিরভাগ ব্যাংক। আন্তর্জাতিক রেটিংয়েও ব্যাংক খাতের অবনমন হয়েছে।