× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে রেমিট্যান্সে ধস

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২১:৪৭ পিএম

প্রবা ফটো

প্রবা ফটো

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় প্রবাহে ধস নেমেছে। বিশেষ করে অগ্রণী ব্যাংকের রেমিট্যান্স আহরণ ব্যাপক মাত্রায় কমে গেছে। ফলে জরুরী পণ্য আমদানিতে রিজার্ভ থেকে ডলার নিতে হচ্ছে। ফলে ডলারের বাজার অস্থিরতা দেখা দেয়। কিছু বেসরকারি ব্যাংকের অসুস্থ প্রতিযোগিতার ফলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, নিয়ম মানতে গিয়ে বিপাকে আছেন তারা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ছয় মাসে সরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর রেমিট্যান্স প্রবাহ এক তৃতীয়াংশ কমে গেছে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই মাসে দেশে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল এক হাজার ৯৭৩ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের এসেছে ২৪৪ মিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে গত জানুয়ারিতে মোট রেমিট্যান্স এসেছে দুই হাজার ১০০ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১৭১ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ জানুয়ারিতে সার্বিক রেমট্যান্স প্রবাহ বাড়লেও সরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতে কমেছে ৭৩ মিলিয়ন ডলার। যা শতকরা হিসাবে জুলাইয়ের তুলনায় ৩০ শতাংশ কম।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডলার বাজারের অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে কয়েকটি ব্যাংক অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিগত দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে এসব ব্যাংক ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেশি দাম দিয়ে রেমিট্যান্স কিনছে। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংককে ঘোষিত দরে ডলার কিনতে হচ্ছে। তাই প্রত্যাশিতভাবেই ডলারের প্রবাহ কমে গেছে।

তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি ব্যাংকের মধ্যে বিডিবিএল ছাড়া বাকি পাঁচটি ব্যাংক রেমিট্যান্স সংগ্রহ করে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে অগ্রণী ব্যাংকে। দীর্ঘদিন এ ব্যাংকটির অবস্থান সার্বিক খাতে শীর্ষ তিনে ছিল। এক সময় ব্যাংকটি রেমিট্যান্স সংগ্রহে প্রথম স্থানে ছিল। কিন্তু ডলার বাজার উত্তপ্ত হওয়ার পর অগ্রণী ব্যাংকের রেমিট্যান্স কমতে শুরু করে।

অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে অগ্রণী ব্যাংকে রেমিট্যান্স এসেছে ১২৩ মিলিয়ন ডলার। আর গত জানুয়ারিতে এসেছে মাত্র ৬৭ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ ব্যাংকটির রেমিট্যান্স অর্ধেকে নেমেছে। আগের তিন মাসে এটি ৫০ মিলিয়নের ঘরে ছিল। গত জুলাইয়ে জনতা ব্যাংকে এসছে ৬৩ মিলিয়ন ডলার। ব্যাংকটিতে জানুয়ারিতে প্রবাসী আয় কিছুটা বেড়েছে। গত মাসে এসেছে ৭৫ মিলিয়ন ডলার। রুপালী ব্যাংকে এমনিতেই রেমিট্যান্স কম আসে। বর্তমানে আরও কমে গেছে। জুলাইয়ে ১১ মিলিয়ন আসলেও জানুয়ারিতে এসেছে মাত্র ৪ মিলিয়ন ডলার। সরকারি পণ্য আমদানিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখা সোনালি ব্যাংকের রেমিট্যান্সেও পতন হয়েছে। গত জুলাইয়ে আসা ৪৫ মিলিয়ন জানুয়ারিতে নেমেছে ২৫ মিলিয়নে। বেসিক ব্যাংকে সে অর্থে রেমিট্যান্স আসে না। তবে বিডিবিএলের মতো একেবারেই যে আসে না তা নয়। ব্যাংকটিতে দশমিক ১৬ মিলিয়ন প্রবাসি আয় এসেছিল জুলাইয়ে আর জানুয়ারিতে এসেছে দশমিক শুণ্য ৭ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এ ব্যাংকের রেমট্যান্স শুণ্যের কোটায় নেমেছে।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। যোগাযোগ করা হলে ব্যবস্থাপনা পরিচালকেরা কথা বলতে রাজি হচ্ছেন না। নাম প্রকাশ না করে কথা বলেছেন রেমিট্যান্স বিভাগের কর্মকর্তারা। 

অগ্রণী ব্যাংকের রেমিট্যান্স বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ মহাব্যবস্থাপক রেজাউল করিম জানান, ‘মূলত নিয়ম মানতে গিয়ে রেমিট্যান্স সংগ্রহে পিছিয়ে পড়েছে তার ব্যাংক।’ তাছাড়া দিন দিন রেমিট্যান্স সংগ্রহকারি ব্যাংকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় প্রতিযোগিতা বাড়ছে বলে মনে করেন এ কর্তকর্তা। অপর একটি ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জানান, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নমনীয়তায় বেশি দামে ডলার কিনে কম দামে বিক্রির যে প্রথা চালু হয়েছে তা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে ভোগাচ্ছে।’ অনেক ব্যাংক কালোবাজারে ডলার ব্যবসায় মেতে উঠেছে বলে মন্তব্য করেন এ কর্মকর্তা।  

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ২১০ কোটি ৯ লাখ ৫০ হাজার ডলার। গত বছরের জানুয়ারির তুলনায় বেশি। সে বছর এই মাসে  আয় এসেছিল ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ ৭০ হাজার ডলার। জানুয়ারিতে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১৭ কোটি ১৯ লাখ ৩০ হাজার ডলার, দুই বিশেষায়িত ব্যাংকের মাধ্যমে ছয় কোটি ৯৮ লাখ ১০ হাজার ডলার, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১৮৫ কোটি ২৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৬৫ লাখ ৮০ হাজার ডলার প্রবাসী আয় দেশে এসেছে।

অন্যান্য সময়ের মতো এবারে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। জানুয়ারিতে ব্যাংকটির মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৭০ কোটি ১৩ লাখ ১০ হাজার ডলার। এরপরেই রয়েছে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের অবস্থান। ব্যাংকটির মাধ্যমে ১৩ কোটি ৩৪ লাখ ২০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এ ছাড়া আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে আট কোটি ৯২ লাখ ৯০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এছাড়া জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে সাত কোটি ৫২ লাখ ৪০ হাজার ডলার, এনসিসি ব্যাংকের সাত কোটি ৩০ হাজার ডলার, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ছয় কোটি ৯৮ লাখ ১০ হাজার ডলার এবং অগ্রনী ব্যাংকের মাধ্যমে ছয় কোটি ৭১ লাখ ৩০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।

চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৯৮ কোটি ৯৮ লাখ ৭০ হাজার ডলার। আগের মাস নভেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছে ১৯৩ কোটি ৪০ হাজার ডলার, অক্টোবরে ১৯৭ কোটি ১৪ লাখ ৩০ হাজার ডলার, সেপ্টেম্বরে ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ ৫০ হাজার ডলার, আগস্টে ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার এবং জুলাইয়ে ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা