× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

অবলোপন বাড়িয়ে খেলাপি ঋণ কমানোর নতুন কৌশল

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২০:৪০ পিএম

প্রবা ফটো

প্রবা ফটো

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও খেলাপি ঋণ কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ-সংক্রান্ত একটি নীতিমালা ঘোষণা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ব্যাংক খাতে সার্বিক খেলাপি ঋণের হার ৮ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা হবে। একই সঙ্গে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকে খেলাপির হার ১০ শতাংশ এবং বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপির হার ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। 

এ ছাড়া ব্যাংক খাতে করপোরেট সুশাসন নিশ্চিত করার মাধ্যমে সীমাতিরিক্ত, বেনামি স্বার্থসংশ্লিষ্ট এবং জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ বিতরণের পরিমাণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ঋণের শর্তে এসব বিষয় উল্লেখ করেছিল আইএমএফ। 

গতকাল রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যাংকিং খাতের শ্রেণীকৃত ঋণ হ্রাস এবং করপোরেট সুশাসন নিশ্চিত করার রোডম্যাপ ঘোষণা করেন ডেপুটি গভর্নর আবু ফরাহ মো. নাছের। এ সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক এবং সহকারী মুখপাত্র সরোয়ার হোসেন, সাঈদা খানমসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। 

সংবাদ সম্মেলনে সার্বিক খেলাপি ঋণের হার ৮ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার লক্ষ্য সামনে রেখে ১১ দফা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য ৬ দফা নীতিমালা তুলে ধরা হয়েছে। ঘোষিত নীতিমালায় বলা হয়েছে, ২০২৬ সালের জুন মাসের মধ্যে দেশের ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের হার ৮ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা হবে। পাশাপাশি ঋণ পরিশোধে আর কোনো বাড়তি সুবিধা দেওয়া হবে না। শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা হবে বেনামি ঋণ। ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের চিহ্নিত করে তাদের শাস্তি দিতে আরও একটি নীতিমালা তৈরি করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ড সভায় অনুমোদনের পরপরই এ রোডম্যাপ নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন ডেপুটি গভর্নর এবং মুখপাত্র। 

রোডম্যাপে বলা হয়েছে, অর্থঋণ আদালত আইন ২০০৩-এর আওতায় বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) পদ্ধতিতে আদালতের বাইরে মামলা নিষ্পত্তির জন্য ব্যাংকগুলোকে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে ব্যাংকগুলোর বিদ্যমান লিগ্যাল বা আইন বিভাগকে শক্তিশালী করা হবে বলে জানিয়েছেন আবু ফরাহ মো. নাছের। 

রোডম্যাপে খেলাপি ঋণ কমানোর যেসব কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে, ঋণ অবলোপনের ক্ষেত্রে সময়সীমা তিন বছরের পরিবর্তে দুই বছর নির্ধারণ। এক্ষেত্রে শতভাগ প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ) রাখার শর্ত দেওয়া হয়েছে। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, শতভাগ প্রভিশন থাকার কারণে ব্যাংক কোনো ঝুঁকিতে থাকবে না। আর অবলোপন কৌশলের মাধ্যমে ৪৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ কমানো সম্ভব হবে; যা মোট ঋণের ২ দশমিক ৭৬ শতাংশ। সেক্ষেত্রে অবলোপনকৃত ঋণ আদায় জোরদার কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলোতে ঋণ আদায় ইউনিট নামে পৃথক ইউনিট খোলা হবে। একই সঙ্গে এর লক্ষ্য অর্জনকে ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের পারফরম্যান্সে যুক্ত করা হবে।

মন্দ ঋণ এবং অবলম্বনকৃত সম্পদ বিক্রি করে ব্যালান্স শিট ভালো করার জন্য ‘অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি’ প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ইতোমধ্যে একটি খসড়া আইন প্রস্তুত করা হয়েছে। এখন থেকে আদায় হওয়ার আগে ঋণের সুদ আয় খাতে দেখানো যাবে না। আলাদা ব্যালান্স সিটে হিসাব করতে হবে। বর্তমানে স্ট্রেস অ্যাসেটের বিপরীতে আদায় ছাড়াই সুদ আয় খাতে দেখানো হচ্ছে। এর মাধ্যমে আয় বেশি দেখিয়ে কারসাজি করছে ব্যাংকগুলো। 

করোনার অজুহাতে ইতঃপূর্বে দেওয়া বিভিন্ন সুবিধার মেয়াদ আর বর্ধিত করা হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকের তারল্য সংকট কমে আসবে বলে মনে করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পুরাতন ঋণ আদায়ের মাধ্যমে ক্যাশ ফ্লো (তারল্য) বাড়িয়ে নতুন ঋণ দিতে পারবে ব্যাংকগুলো। মেয়াদি ঋণসমূহের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার সংজ্ঞা পরিবর্তন করে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা হবে। এর ফলে দেশের ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার যে সংস্কার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে সেই শর্ত পূরণ হবে। 

অর্থঋণ আদালতে আটকে থাকা মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির মাধ্যমে ঋণ আদায়ের জন্য ব্যাংকের লিগ্যাল টিমকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে অর্থঋণ আদালতে ৭২ হাজার ৫৪৩টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে, যেখানে অনাদায়ী ঋণের অর্থের পরিমাণ ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি বা এডিআর পদ্ধতি অনুসরণ করে আদালতের বাইরে অর্থ উত্তোলনে জোর দেওয়া হয়েছে।


খেলাপিদের নতুন গাড়ি-বাড়ি কেনায় বিধি আসছে 

ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পৃথক নীতিমালা প্রণয়ন করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই নীতিমালায় খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা রাখার কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেÑ ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের নতুন গাড়ি, বাড়ি ও কোম্পানি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপসহ বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তা ছাড়া শ্রেণীকৃত ঋণ আদায়ের জন্য নিয়োজিত কর্মকর্তাদের বিশেষ ভাতা দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে খেলাপি ঋণ আদায় কার্যক্রমে গতি আসবে বলে মনে করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে ঋণ বিতরণের সময় ব্যাংকের নিজস্ব ব্যবস্থার পাশাপাশি তালিকাভুক্ত মূল্যায়নকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জামানত যাচাই করতে হবে; যাতে ত্রুটিপূর্ণ জামানতের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ প্রবণতা হ্রাস পায়। 

ঘোষিত রোডম্যাপে ব্যাংকগুলোতে সুশাসন নিশ্চিতে ছয় দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। ব্যাংকের সামগ্রিক ঋণ ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করার লক্ষ্য সামনে রেখে যোগ্য পরিচালক নির্বাচনের জন্য এ-সংক্রান্ত নীতিমালা হালনাগাদ করা হবে। আমানতকারী ও শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ সংরক্ষণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উপযুক্ত স্বতন্ত্র পরিচালক নিযুক্ত করতে নীতিমালায় পরিবর্তন আনা হবে। একই সঙ্গে স্বতন্ত্র পরিচালকদের জন্য সম্মানী নির্ধারণ করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। 

দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তিদের ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী হিসেবে নিয়োগ দিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ ও পুনঃনিয়োগ বাছাই প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনা হয়েছে; যা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের কাজ মূল্যায়ন করার জন্য পারফরম্যান্স ইন্ডিকেটর যুক্ত করা হবে। এই ইন্ডিকেটরের মাধ্যমে তাদের কাজ মূল্যায়ন করা হবে। কোনো নির্দিষ্ট পরিবারের হাতে ব্যাংকের বিপুল অর্থ জমা হওয়া বন্ধে কোনোভাবেই যাতে একক গ্রাহক ঋণসীমা অতিক্রম না হয় সে লক্ষ্যে কঠোর ব্যবস্থা নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে করপোরেট সুশাসনের মান উন্নত হবে এবং খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। 

তিন বছরের মধ্যে কোনো কর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হবে না এমন শর্তে কয়েকটি দুর্বল ব্যাংককে অপেক্ষাকৃত সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা হবে। এর ফলে পরিচালনা বোর্ড শক্তিশালী এবং মূলধন ঘাটতি দূর হওয়ার পাশাপাশি প্রশাসনিক ব্যয় কমে আসবে। এ ছাড়া ব্যাংক খাতে দক্ষ কর্মকর্তার অভাব পূরণ এবং সার্বিক সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য কর্মকর্তাদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে মৌলিক প্রশিক্ষণ এবং ব্যাংকিং প্রফেশনাল পরীক্ষায় পাস বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ ঘোষিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা। যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। গত বছরের জুন শেষে এ অঙ্ক ছিল ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা