সরকারি নথির তথ্য
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৯:০৩ পিএম
আপডেট : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৯:১৯ পিএম
প্রতীকী ছবি
মুদ্রাস্ফীতির চাপ সামলাতে নতুন পথে হাঁটছে সরকার। আগামী অর্থবছর মাথায় রেখে সংকোচনমূলক নীতি গ্রহণ করা হচ্ছে। সম্প্রসারণমূলক বাজেট দেওয়া থেকে সরে আসছে অর্থ বিভাগ। কমে আসবে বাজেটে ব্যয় বরাদ্দের হার। এতে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের চেয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের দিকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হবে।
প্রাক-বাজেটসংক্রান্ত একটি নথি পর্যালোচায় দেখা গেছে– আর্থিক খাতে অস্থিরতা ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ– বিষয়গুলো প্রাধান্য দিয়ে আগামী অর্থবছরের (২০২৪-২৫) বাজেট প্রণয়নের চিন্তাভাবনা করছে সরকার। সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে– মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ।
বাজেট প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, সাধারণত বাজেটের আকার ১০ থেকে ১২ শতাংশ বাড়িয়ে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়ে থাকে। এবার তা হচ্ছে না। আগামী অর্থবছরের বাজেট বরাদ্দ বাড়ছে ৮ শতাংশেরও কম। এবার বাজেট প্রণয়নের জন্য রাজস্ব আদায় ও আমদানি-রপ্তানি কমে যাওয়ার বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। বেশ কিছু সামঞ্জস্য করে রাজস্ব আদায়ের আকার হিসাব করা হয়েছে। যে কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোর তুলনায় বড় আকারের বাজেট বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেট ব্যয় বরাদ্দ হতে পারে ৮ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা। সেখান থেকে আয় ধরা হচ্ছে ৫ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতি থাকবে ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি বাজেটের তুলনায় এবার বাড়ছে ৪৩ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়বে ৫১ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) বাজেটে অর্থ ব্যয়ের আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। জিডিপিতে প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। আগের অর্থবছরে (২০২২-২৩) এই লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছিল। চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য রয়েছে সরকারের।
প্রাক-বাজেটসংক্রান্ত সরকারি নথি পর্যালোচনায় দেখা গেছে– আগামী অর্থবছরের জন্য সংকোচনমূলক বাজেট প্রণয়ন করতে যাচ্ছে সরকার। মূল্যস্ফীতির হার কমানো এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য এই লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তা ছাড়া বিদ্যমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে চলতি অর্থবছরের বাজেট পুরোপুরি বাস্তবায়নযোগ্য হবে না। অন্তত ৫২ হাজার কোটি টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক সংকট ও কৃচ্ছ্রসাধন কর্মসূচি হাতে নিয়ে আগামী অর্থবছরে সম্প্রসারণমূলক বাজেট দেওয়া হবে না।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে– আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার হতে পারে ৮ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা। এতে কমানো হচ্ছে বিভিন্ন খাতের ব্যয় বৃদ্ধি। আগের বছরগুলোর তুলনায় ১০ থেকে ১২ শতাংশ কমিয়ে ব্যয় বৃদ্ধি ৮ শতাংশ নির্ধারণ করা হচ্ছে। জিডিপিতে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নামিয়ে আনা হচ্ছে ৬ দশমিক ৯ শতাংশে। মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ করা হবে।
আগামী অর্থবছর ছাড়াও পরবর্তী অর্থবছরগুলোতে সংকোচনমূলক বাজেট বরাদ্দ দেওয়া অব্যাহত রাখা হতে পারে– এমন আভাস দিয়েছেন বাজেট প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট অর্থ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব। তিনি বলেন, ‘বাজেট সংকোচনমূলক করার মূলে রাজস্ব আদায় কম, আমদানি-রপ্তানি পরিস্থিতি ভালো না হওয়া। সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরের বারও এ অবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে।’
বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সম্প্রসারণমূলক বাজেট না দেওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক হয়েছে বলে মনে করেন সাবেক আমলা ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশে আছে– যা কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তাই জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়াটাই যুক্তিযুক্ত।’