প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০২৪ ২২:১২ পিএম
প্রবা ফটো
ব্যাংক খাতে সুশাসন নিশ্চিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বড় ধরণের সংস্কার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে ‘প্রমোম্পট কারেক্টিভ অ্যাকশন (পিসিএ)’ নামের একটি কাঠামোর আওতায় দুর্বল ব্যাংক চিহ্নিত করে সেসব ব্যাংককে ভাল ব্যাংকের সঙ্গে মার্জ (একীভুত) করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের এসব উদ্যোগের বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা দিয়েছেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এসব উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীরা। বুধবার (৩১ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত নিয়মিত ব্যাংকার্স সভা শেষে এমন বক্তব্য তুলে ধরেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।
তিনি বলেন, বর্তমানে সংস্কার প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক পূর্ণ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রমম্পট কারেক্টিভ অ্যাকশন (পিসিএ) নীতিমালা ঘোষণা করা হয়েছে। তবে ভালো ফলাফল পেতে হলে সংস্কার কার্যক্রম ধীরে ধীরে পরিচালনা করতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
তাছাড়া ডলার সংকট সমাধানে ক্রলিং পেগ নামে যে নতুন পদ্ধতি চালু করা হচ্ছে তা বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্বস্তি ফেরাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করেন ব্যাংকাররা। সৈয়দ মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, নীতিমালার আলোকে দুর্বল হিসেবে যেই চিহ্নিত হোক না কেন তাকেই সংস্কারের আওতায় আনতে হবে। রাজনৈতিক ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের মালিকানাধীন ব্যাংকের বিষয়ে এমন ইঙ্গিত করেন তিনি। খেলাপি ঋণসহ অন্যান্য সমস্যা জর্জরিত ব্যাংকগুলোকে ব্যাংকের সঙ্গে মার্জ (একীভুত) করা হতে পারে বলে জানান এমটিবির এমডি।
এসময় অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা ইতিমধ্যে কাজ করতে শুরু করেছে। আগামী মার্চ থেকে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এটি কার্যকর হলে ডলার বাজারও ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসবে। ইতোমধ্যে নানাভাবে ডলার হাতে ধরে রাখার প্রবণতা কমেছে।’
তিনি বলেন, ‘পিসিএ বাস্তবায়নের কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। আগামী বছরের মার্চ থেকে এটি কার্যকর হবে। এটি শুরু হলে ব্যাংকগুলো নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে আসবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত মান সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হলে ওইসব ব্যাংকের বিরুদ্ধে নানা ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে। যেমন- নতুন শাখা খোলা বন্ধ হতে পারে, লভ্যাংশ ঘোষণায় নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। ঋণ বিতরণ বন্ধ হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে একটি সুন্দর ছক নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এখন থেকে ব্যাংকগুলো সেই ছকে তথ্য আপলোড করে নিজেদের অবস্থান জানতে পারবে। যেসব জায়গায় দুর্বলতা দেখা যাবে সেগুলো সংস্কারে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।’
রপ্তানি তহবিলে বরাদ্দ কমানোর বিষয়ে এবিবি চেয়ারম্যান বলেন, ‘এতে ব্যাংক খাতে কোন প্রভাব পড়বে না। কারণ দীর্ঘ সময় ধরে ভর্তুকি দেওয়া কোন সরকারের পক্ষেই সম্ভব নয়। বর্তমানে বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকারকে নানাভাবে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। অনন্তকাল ধরে ভর্তুকি দিয়ে যাওয়া উচিতও নয়।’ সবাইকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। আসন্ন রমজান উপলক্ষে পর্যাপ্ত এলসি খোলা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গত রমজানেও কোন পণ্যের ঘাটতি হয়নি এবারও হবে না।’
দুর্বল ব্যাংকগুলোকে মার্জ করা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চলতি বছরের ডিসেম্বরভিত্তিক তথ্যের ভিত্তিতে যদি দুর্বল হিসেবে চিহ্নিত হয় তাহলে ওই সব ব্যাংককে মার্জ করা হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গভর্নরের পক্ষ থেকে, বিতরণকৃত ঋণ আদায়ের বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক শীর্ষ ২০ খেলাপির ব্যাপারে তদারকি চালিয়ে যাচ্ছে।’
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের উদ্দেশে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ‘চলতি বছরের ডিসেম্বর ভিত্তিক প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে আগামী বছরের মার্চ মাসে পিসিএ নীতিমালা বাস্তবায়ন হবে। সে লক্ষ্যে
ব্যাংকগুলো এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে পারে যাতে তারা ফেইল না করে।’
তিনি বলেন, ‘অর্থঋণ আদালতে মামলা সংখ্যা কমাতে এডিআর পদ্ধতি জোরদার করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে কেউ যাতে এ পদ্ধতির অপব্যবহার করতে না পারে সেদিকেও খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংকারদের জন্য পৃথক হাসপাতাল তৈরীর বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে এমডিদের সামনে প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়েছে।’
মুখপাত্র আরও বলেন, বাণিজ্যের আড়ালে অর্থপাচার কমে এসেছে। এক্ষেত্রে শক্তভাবে নেতৃত্ব দেয়ার কারণে ব্যাংকের এমডিদের বিশেষ ধন্যবাদ দেওয়া হয়েছে গভর্নরের পক্ষ থেকে। বিপদে থাকা ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা দেয়া অব্যাহত থাকবে বলে জানান মুখপাত্র। এ ক্ষেত্রে সোয়াপ পদ্ধতি বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ পদ্ধতির মাধ্যমে ব্যাংকের কাছ থেকে ডলার জমা রেখে এর বিপরীতে তারল্য সহায়তা দেয়া হবে।
মুখপাত্র জানান, বেশ কিছু ব্যাংকের কাছে অতিরিক্ত বৈদেশিক মুদ্রা জমা রয়েছে। যেসব ব্যাংকের কাছে বৈদেশিক মুদ্রা আছে কিন্তু দেশীয় মুদ্রার ঘাটতি রয়েছে তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে নির্ধারিত মেয়াদে ডলার জমা রেখে টাকা ধার নিতে পারবে। পরবর্তীতে সক্ষমতা ফিরে আসলে ডলার ফেরত নিতে পারবে ব্যাংক।