জোনায়েদ মানসুর
প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০২৪ ২১:২৬ পিএম
বিএফএসএ চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাইউম সরকার। প্রবা ফটো
সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতে নিরাপদ খাদ্য পরিবেশন করা জরুরি। ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের লক্ষ্যে পৌঁছতে আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো সচেতনতা তৈরি করা। কারণ চাপ প্রয়োগ করে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের (বিএফএসএ) চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাইউম সরকার সম্প্রতি প্রতিদিনের বাংলাদেশের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন।
আইন কাগজে বা ফাইলে বন্দি থাকলে চলবে না জানিয়ে বিএফএসএর চেয়ারম্যান বলেন, ‘কৃষি ও মৎস্য খাতে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের চর্চা আরও বাড়াতে হবে। খাদ্যের মান উন্নত করা গেলেই দেশে রপ্তানি আয় বাড়বে। রপ্তানি ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে।’
সপ্তম ‘জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস-২০২৪’ উপলক্ষে আমরা নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছি উল্লেখ করে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বলেন, ‘২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস। এ দিবসকে কেন্দ্র করে সারা দেশে সভা-সেমিনার আয়োজন করছি। সচেতনতা জোরদারের লক্ষ্যে এ কাজ অব্যাহত থাকবে। শুক্রবার সকালে রাজধানীতে একটি র্যালিও বের করা হবে। প্রাথমিকের বইতে নিরাপদ খাদ্যের বিষয়ে একটি অধ্যায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে; ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে ইতোমধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।’
আব্দুল কাইউম সরকার বলেন, “খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে সরকার ২০১৩ সালে ‘নিরাপদ খাদ্য আইন’ এবং ২০১৫ সালে ‘বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ’ প্রতিষ্ঠা করে। এর বাস্তবায়নের জন্য সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাও জরুরি। কিন্তু এটি কঠিন কাজ। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে একা সম্ভব নয়। কৃষি, মৎস্য, বিএসটিআই, পরিবেশ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকারসহ সবার অংশগ্রহণ জরুরি। ইতোমধ্যে মানুষকে সচেতন করতে বেশ কিছু কর্মসূচি পরিচালনা করছি।”
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে স্টেকহোল্ডারদের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিএফএসএ গত তিন বছরে ৪০০টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ ৩২ হাজার খাদ্য স্থাপনা পরিদর্শন করেছে। দুই ক্যাটাগরিতে ১০০টি হোটেল রেস্তোরাঁকে গ্রেডিং প্রদান করেছি। ডিজিটাল মনিটরিংয়ের লক্ষ্যে অ্যাপস আনা হয়েছে। খাদ্যমানের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য ঝুঁকিভিত্তিক ৪ হাজার ৪০০টি খাদ্য নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে এবং মোবাইল ল্যাবরেটরির মাধ্যমে ৩২৪টি তাৎক্ষণিক খাদ্য নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সম্ভাব্য অর্জনসমূহ হচ্ছেÑ দেশব্যাপী ৫ হাজার ৫০০টি খাদ্য স্থাপনা ও বাজার পরিদর্শন এবং ৬৫টি হোটেল-রেস্তোরাঁর গ্রেডিং প্রদান। ঝুঁকিভিত্তিক ১ হাজার ৩৫০টি খাদ্য নমুনা পরীক্ষা ও মোবাইল ল্যাবরেটরির মাধ্যমে তাৎক্ষণিক ২৫০টি নমুনা পরীক্ষা। খাদ্যে ভেজাল ও দূষণবিরোধী ১৬৫টি অভিযান পরিচালনা করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘উন্নত দেশগুলোতে পণ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তাপর্যায়ে যাওয়া পর্যন্ত কয়েকটি ধাপ থাকে। তা ছাড়া উৎপাদনকারীরা উৎপাদিত পণ্যে নিজের ট্যাগ লাগিয়ে তা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে পাঠায়। সেখান থেকে সরাসরি ভোক্তার কাছে চলে যায়। ফলে খাদ্য অনিরাপদ হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় অনেক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি জড়িত থাকে। তাই আইনে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় করার কথা বলা হয়েছে।’
শুধু নজরদারি বা খবরদারি করলেই হবে না উল্লেখ করে আব্দুল কাইউম সরকার বলেন, ‘আমাদের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন দরকার। বেশি পরিমাণ শাকসবজি ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। স্ট্রিট ফুড যারা বিক্রি করে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। নিরাপদ খাদ্যের বিষয়ে উচ্চশিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করা যায় কি না, এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সঙ্গে আমাদের আলোচনা আরও জোরদার করতে হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গেও বৈঠক হয়েছে। শিগগিরই সাতটি গবেষণার ফল হাতে পাব। সেটি হয়ে গেলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও আমাদের কাজের সুযোগ তৈরি হবে। আমরা স্থায়ী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনেরও উদ্যোগ নিয়েছি। প্রতিটি জেলায় প্রতিটি স্কুলের একজন শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। যারা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবেন।’