প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ ১৬:৫৮ পিএম
আপডেট : ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ ১৭:৩৭ পিএম
ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল টেক্সটাইল অ্যান্ড গার্মেন্টস মেশিনারি এক্সিবিশন বা ডিটিজি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন। প্রবা ফটো
দেশে ডলার, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটের কারণে টেক্সটাইল শিল্পউৎপাদন অনেকটাই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সরকার নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের লক্ষ্যে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরবরাহ ব্যবস্থার কোন উন্নতি হয়নি। এ জন্য পেট্রোবাংলাকেই দায়ী করেছেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মাদ আলী খোকন। সোমবার (২৯ জানুয়ারি) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁও বলরুমে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল টেক্সটাইল অ্যান্ড গার্মেন্টস মেশিনারি এক্সিবিশন বা ডিটিজি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
মোহাম্মাদ আলী খোকন বলেন, কোভিড-১৯ পরবর্তী ইউক্রেন-যুদ্ধ, লোহিত সাগর যুদ্ধ, ডলার ও জ্বালানি সংকটে বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি টালমাটাল পরিস্থতির সৃষ্টি হয়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাবে বাংলাদেশ অর্থাৎ আমরা যারা আগামী ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হতে চাই, তারাই সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হব। আমাদের টেক্সটাইল ও ক্লথিং সেক্টর দুটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত। আমি মনে করি এবারের ১৮তম ডিটিজিতে টেকনোলোজির নতুন কোনো উদ্ভাবনী এ সংকট সমাধানে কোনো না কোনো পথ খুঁজে পেতে পারেন উদ্যোক্তারা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিটিএমএর সহসভাপতি মো. ফজলুল হক, মো. ফায়েজুর রহমান ভূঁইয়া, বিটিএমএ পরিচালক ও মোশারফ গ্রুপের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন, বিটিএমএ পরিচালক ও উত্তরা গ্রুপের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান, বিটিএমএর পরিচালক মো. সালেউদ জামান খান ও ইয়োর্কাস ট্রেড অ্যান্ড মার্কেটিং সার্ভিসেসের প্রেসিডেন্ট জুডি ওয়াং।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিটিএমএর সভাপতি বলেন, টেক্সটাইল ও ক্লথিং থেকে বিগত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে জনশক্তি খাতের পর টেক্সটাইল খাতের অবদানই মুখ্য। বর্তমানে আমাদের স্পিনিং মিলগুলোর বার্ষিক সুতা উৎপাদন ক্ষমতা ৪ হাজার মিলিয়ন কেজি। এ ছাড়াও দেশে ছোট, মাঝারি ও বড় ওভেন ফেব্রিকের মিল রয়েছে প্রায় ২০ হাজারের মতো যাদের বার্ষিক ফেব্রিক উৎপাদন ক্ষমতা ৯ বিলিয়ন মিটার।
অন্যদিকে দেশে ২৫টির মতো হোম টেক্সটাইল মিল রয়েছে যাদের বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ৮০০ মিলিয়ন মিটার এবং ডেনিম মিলের সংখ্যা ৪২ টি যাদের উৎপাদন ক্ষমতা ৯০০ মিলিয়ন মিটার। এ খাতে বর্তমানে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার মতো। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এ খাত দেশের রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের সুতা ও কাপড়ের সিংহভাগ সরবরাহ করছে। পাশাপাশিভাবে দেশের প্রায় ১৭ কোটি লোকের বস্ত্রের মৌলিক চাহিদা সম্পূর্ণ অংশই পূরণে সক্ষম।
তিনি আরও বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমাদের মোট রপ্তানি আয় হয়েছে ৫৫ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, তার মধ্যে তৈরি পোশাক ও ক্লথিং থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ৪৮ দশমিক ০৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থাৎ মোট রপ্তানি আয়ের ৮৬ দশমিক ৬ শতাংশ এসেছে টেক্সটাইল ও ক্লথিং থেকে। এ ছাড়াও ২০১৮-১৯, ২০১৯-২০, ২০২০-২১, ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ খাত থেকে সাশ্রয় হয়েছে যথাক্রমে ২১ দশমিক ৯, ১৮, ২০ দশমিক ৯, ২৮ দশমিক ৫ ও ৩১ দশমিক ০৩ বিলিয়ন ইউএস ডলার অর্থাৎ প্রাইমারি টেক্সটাইল সেক্টরে একটি কার্যকর ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রি থাকার কারণে উল্লিখিত পরিমাণ ডলার সাশ্রয় হয়েছে। অন্যথায় দেশের কষ্টার্জিত ডলার কাঁচামাল আমদানি করতে বিদেশে চলে যেত যা আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে আরো সংকুচিত করত।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশে টেক্সটাইল এবং তৈরি পোশাক খাতে ম্যানমেড ফাইবার ও রিসাইকেল ফাইবারের ব্যাপক ব্যবহারের বিষয়টি বেশ কয়েক বছর যাবৎ গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমাদের দেশে ছোট বড় প্রায় ৪০টির মতো রিসাইকেল ফাইবার ফ্যাক্টরি স্থাপিত হয়েছে যারা গার্মেন্ট ঝুট ও টেক্সটাইলের ওয়েস্ট দ্বারা তুলা তৈরি করে যা পরবর্তীতে সুতা উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু গার্মেন্টস ঝুঁট ও টেক্সটাইলের ওয়েস্ট রপ্তানি কিংবা পাচার এবং ওই ফাইবারগুলোর ওপর প্রায় ২২ শতাংশ শুল্ক ও কর ধার্য থাকায় অপ্রতিযোগী হয়ে পড়ছে। এ ছাড়াও বাংলাদেশের প্রায় ৯টি মিল রয়েছে যারা বিভিন্ন প্লাস্টিক পণ্যকে রিসাইকেল করে ফাইবার তৈরি করছে। এগুলো টেক্সটাইলের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়াও আমাদের সদস্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫০টি মিল বিভিন্ন ধরনের ম্যানমেড ফাইবার দিয়ে সুতা তৈরি করছে। এ সব ফাইবারের আরা ডাইভারসিফাইড পণ্য তথা সুতা, ফেব্রিক দ্বারা তৈরি পোশাক রপ্তানি হচ্ছে। কিন্তু আগামী দিনের বিবেচনায় আমাদের দেশে যে পরিমাণ ম্যানমেড ফাইবার তৈরি এবং ব্যবহার হচ্ছে তা অত্যন্ত অপ্রতুল। রিসাইকেল ফাইবার তৈরিতে ব্যবহৃত যেকোনো ওয়েস্টের রপ্তানি বন্ধ ও ফাইবারের ওপর স্থানীয়ভাবে ধার্যকৃত যেকোনো ধরনের শুল্ক ও কর প্রত্যাহারের জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করছি।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এবারের ১৮তম ডিটিজির আয়োজক বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) ও হংকংয়ের ইয়োর্কাস ট্রেড অ্যান্ড মার্কেটিং সার্ভিসেস কোম্পানি। এই ইভেন্ট আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে টেক্সটাইল ও ক্লথিং ইন্ডাস্ট্রির উদ্যোক্তাদের প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল টেকনোলজির সঙ্গে পরিচিত করানো এবং ক্ষেত্র বিশেষে বাংলাদেশে বসেই এই দুটি খাতে উদ্ভাবিত নতুন প্রযুক্তি তাদের ইন্ডাস্ট্রিতে সংযোজন ও সহজ প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা।
এ ছাড়াও বাংলাদেশের যে সকল টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে টেক্সটাইল খাতে প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির সঙ্গে নিজেদের পরিচিত করে সমৃদ্ধ হবে যা তারা আগামীতে এ খাতকে সমৃদ্ধ করতে ভূমিকা রাখবে। এতে টেক্সটাইল সম্পর্কিত বিষয়ের ওপর এবার চারটি সেমিনারের আয়োজন হচ্ছে।
১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর কুড়িলে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) এ প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে। ১ থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চার দিন প্রদর্শনীটি প্রতিদিন দুপুর ১২টায় শুরু হয়ে রাত ৮ টায় শেষ হবে। প্রদর্শনীটি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) ও হংকংয়ের ইয়র্কার্স ট্রেড অ্যান্ড মার্কেটিং সার্ভিস কম্পানি লিমিটেড যৌথভাবে টেক্সটাইল এবং গার্মেন্টস শিল্পের এই বৃহত্তম প্রদর্শনীটি ২০০৪ সাল থেকে ঢাকায় আয়োজন করে আসছে। এবারের প্রদর্শনীতে বাংলাদেশ, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, ব্রাজিল, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, হংকং, ইতালি, জাপান, কোরিয়া, মালয়েশিয়া, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ডসহ ৩২টি দেশের ১ হাজার ১০০টি টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস মেশিনারি যারা তৈরি পোশাকের বিভিন্ন ব্র্যান্ডকে প্রতিনিধিত্ব করে, তারা আইসিসিবিতে ১ হাজার ৬০০টি বুথ নিয়ে প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করছে।