মিষ্টি আলুতে মিষ্টিমুখ কৃষকের

জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে চলতি মৌসুমে মিষ্টি আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে চাহিদা ও দাম ভালো থাকায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। চলতি মৌসুমে উপজেলার ৩টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৫৮০ হেক্টর জমিতে মিষ্টি আলুর চাষ হয়েছে। বাজারে টান থাকায় উত্তোলনের পরই ক্ষেত থেকে মিষ্টি আলু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। কৃষকের বাজারজাত করতে বাড়তি শ্রম ও অর্থ অপচয় হচ্ছে না বলে জানান কৃষকরা। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলার ভাটারা ও কামরাবাদ ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি মিষ্টি আলুর চাষ হয়। দুটি ইউনিয়নের ছয়টি গ্রাম ও শুকনো ঝিনাই নদ মিলিয়ে ৫৭০ হেক্টরে মিষ্টি আলুর চাষ হয়েছে।

চাষিরা জানান, মিষ্টি আলুতে বিনিয়োগ কম। প্রতি বিঘায় চাষ করতে খরচ হয় ২৫ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে ১০০ মণ আলু উৎপাদন হয়। যার মূল্য ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। প্রতি মণ মিষ্টি আলুর দাম ১ হাজার ১০০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। অল্প খরচে বেশি লাভবান হন কৃষক। তাই মিষ্টি আলু চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা।

উপজেলার কামরাবাদ ইউনিয়নের ধারাবর্ষা গ্রামের কৃষক নূরুল ইসলাম। কোদাল দিয়ে তার ক্ষেত থেকে আলু তুলছিলেন। এ সময় কথা হলে তিনি বলেন, বিঘাপ্রতি ১০০ মণ উৎপাদন হয়। আর ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়‌। ঢাকা শহরে মিষ্টি আলুর চাহিদা অনেক। ১ বিঘা জমির আলু ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায় বিক্রি করা যায়। 

একই এলাকার কৃষক হেলাল উদ্দিন বলেন, ধান কন (বলেন), আলু কন, গম কন, ভুট্টা কনÑ সব আবাদের চেয়ে আলু আবাদ করা লাভজনক। ৩০ শতক জমিতে আলু চাষ করেছি। ক্ষেতের সব আলু পাইকারের কাছে বিক্রি করে দিলাম। আমার ৩০ শতাংশ জমি চাষ করতে ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আলু বিক্রি করলাম ৫৯ হাজার টাকা। তারাই (ব্যবসায়ীরা) ক্ষেত থেকে আলু তুলে নিয়ে যাবে।

উপজেলার কামরাবাদ ইউনিয়নের ধারাবর্ষা গ্রামের কৃষক আয়নাল হক। ক্ষেতে আলু বস্তাবন্দি করছিলেন তিনি। বাজার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাজারে মিষ্টি আলুর ভালো চাহিদা আছে। ব্যবসায়ীরা ক্ষেত থেকেই আলু সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। তাই বাড়তি ঝামেলায় পড়তে হয় না। বাজারে আলুর টান থাকায় ভালো দামেই বিক্রি করতে পারছি মিষ্টি আলু।

আলু কিনতে কৃষক আয়নাল হকের ক্ষেতে এসেছেন ব্যবসায়ী দেলু মুন্সি। দাঁড়িপাল্লায় আলুর মাপ দিচ্ছিলেন তিনি। এ সময় কথা হলে তিনি বলেন, ঢাকায় নিয়ে আলু বিক্রি করি। ঢাকার বাজারে মিষ্টি আলুর ভালো টান আছে। কৃষকের ক্ষেত থেকে কিনে ঢাকা শহরে বেশ ভালো দামে বিক্রি করছি। ঢাকায় মিষ্টি আলুর বেশ ভালো চাহিদা। 

কথা হলে উপজেলা কৃষি অফিসার অনুপ সিংহ বলেন, বিগত সময়ের মতোই চলতি মৌসুমে মিষ্টি আলুর ভালো ফলন হয়েছে। সরিষাবাড়ীর মাটি মিষ্টি আলু চাষের উপযোগী। কয়েক বছর ধরে এখানে আলুর চাষ বাড়ছে। কম খরচে বেশি লাভবান হওয়ায় কৃষকেরা মিষ্টি আলু চাষে ঝুঁকছেন। আমরা আগামী বছর আরও ভালো ফলনের আশাবাদী।