× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

রমজানের পণ্য

আমদানি স্বাভাবিক, সংশয় দাম নিয়ে

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম

প্রকাশ : ১৯ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:৫৪ এএম

আপডেট : ১৯ জানুয়ারি ২০২৪ ১১:২৩ এএম

ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

দুই মাস পরেই রমজান। তাই রমজানে নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে, নাকি স্বাভাবিক থাকবে- এ নিয়ে এখনই দুশ্চিন্তায় আছে সাধারণ মানুষ। গত কয়েক মাসে দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম যে হারে বাড়ছে, তাতে সাধারণ মানুষের আশঙ্কা রমজানে হয়তো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আর কমবে না। তবে সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে কি না, তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। 

পণ্য আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, এবার রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের তেমন কোনো সংকট তৈরি হবে না। রমজানকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে পণ্য আমদানি শুরু হয়েছে। আগামী দুই মাসে প্রচুর পণ্য আসবে। ইতোমধ্যে যে পরিমাণ পণ্য আমদানির অনুমতিপত্র নেওয়া হয়েছে তাতে এবার রমজানে পণ্যের সংকট হবে না।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে উদ্ভিদ সংঘ নিরোধ কেন্দ্রের (চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর) উপপরিচালক ড. মোহাম্মদ শাহ আলম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘খেজুর, ছোলা, ডালসহ রমজানের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি স্বাভাবিক রয়েছে। পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে এবার গতবারের চেয়ে বেশি প্রতিষ্ঠান আমদানির অনুমতিপত্র গ্রহণ করেছে। গত বছর ৮১টি প্রতিষ্ঠান খেজুর আমদানির অনুমতিপত্র (আইপি) নিয়েছিল। এবার ১৩৭টি প্রতিষ্ঠান খেজুর আমদানির অনুমতিপত্র নিয়েছে। ছোলার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। আগের বছরের চেয়ে এবার বেশি প্রতিষ্ঠান ছোলা আমদানির অনুমতিপত্র নিয়েছে। তাই আসছে রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে। সংকট তৈরি হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই।’

ছোলা, চিনি, ডাল, ভোজ্য তেল, পেঁয়াজ, খেজুরসহ মসলাজাতীয় পণ্যের চাহিদা রমজান মাসে বেড়ে যায়। তাই সারা বছর আমদানি হলেও রমজান সামনে রেখে এসব পণ্য বেশি পরিমাণে আমদানি করতে হয়। কারণ চাহিদা অনুযায়ী পণ্য আমদানি করা না গেলে রমজানে পণ্যের সংকট তৈরি হতে পারে। পণ্য আমদানি-রপ্তানির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ডলার সংকটের কারণে গত বছর দেশের সামগ্রিক পণ্য আমদানি কিছুটা কমলেও ছোলা, চিনি, ভোজ্য তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি স্বাভাবিক ছিল। ছোলা, ভোজ্য তেল, চিনিসহ কিছু কিছু পণ্যের আমদানি চাহিদার তুলনায় বেশি হয়েছে। এসব পণ্যের আমদানি এখনও স্বাভাবিক রয়েছে। তাই রমজানকে কেন্দ্র করে এসব পণ্যের কোনো সংকট হবে না। 

এদিকে আমদানি স্বাভাবিক থাকলেও নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক থাকবে কি না সেটি নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। লোহিত সাগরে হুতি বিদ্রোহীদের বাণিজ্যিক জাহাজে হামলার ঘটনায় জাহাজে পণ্য পরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধি এবং ডলারের ক্রমাগত দর বৃদ্ধির কারণে আমদানিতে খরচ বেড়ে যাওয়ায় পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। 

ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করায় দেড় মাস আগে বাজারে পেঁয়াজের যে সংকট তৈরি হয়েছিল, মুড়িকাটা পেঁয়াজ আসায় এখন সেই সংকটও কেটে গেছে। রমজানে দেশীয় পেঁয়াজ পুরোদমে বাজারে আসায় ওই সময় পেঁয়াজের কোনো সংকট তৈরি হবে না। অন্যদিকে এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, জিরাসহ মসলা আমদানিও স্বাভাবিক রয়েছে, তাই রমজানে এসব পণ্যেরও কোনো সংকট হবে না বলে জানিয়েছেন খাতুনগঞ্জের মসলা আমদানিকারকরা। 

তারা জানিয়েছেন, ডলার সংকটের কারণে গত বছর মসলা আমদানি কিছুটা কম হয়েছিল। তবে এখন আমদানি স্বাভাবিক রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক মসলা আমদানির ক্ষেত্রে মার্জিন কম নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে। তাই এখন মসলা আমদানি অনেক বাড়বে। রমজানে বাজারে মসলার কোনো সংকট তৈরি হবে না। 

দেশের আমদানি পণ্যের ৮০ শতাংশই আসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। তবে গত কয়েক বছর মসলাজাতীয় পণ্যের অধিকাংশই আমদানি হচ্ছে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে স্থলবন্দর দিয়ে। তাই মসলাজাতীয় পণ্য ছাড়া ছোলা, চিনি, ভোজ্য তেল, ডাল, খেজুর এসব পণ্যের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ এখনও আমদানি হচ্ছে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে। 

উদ্ভিদ সংঘ নিরোধ কেন্দ্র চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছর চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মোটর ডাল আমদানি হয়েছে ৫০২ মেট্রিক টন। সেখানে চলতি অর্থবছরে গত ছয় মাসে আমদানি হয়েছে এক হাজার ৮৮০ মেট্রিক টন। গত অর্থবছর মসুর ডাল আমদানি হয়েছে ৪ লাখ ৯৫ হাজার ৫৬৯ মেট্রিক টন। সেখানে চলতি অর্থবছরের গত ছয় মাসে মসুর ডাল আমদানি হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৮৪০ মেট্রিক টন। গত অর্থবছর হলুদ মোটর (ইয়েলোপিচ) আমদানি হয়েছে ৪ লাখ ৫৮ হাজার ৬৬১ মেট্রিক টন। সেখানে চলতি অর্থবছরের গত ছয় মাসে আমদানি হয়েছে ২ লাখ ২ হাজার ৪৬৫ মেট্রিক টন। 

গত অর্থবছর খেজুর আমদানি হয়েছে ৮৪ হাজার ১৫১ মেট্রিক টন। সেখানে চলতি অর্থবছরের গত ছয় মাসে খেজুর আমদানি হয়েছে ১২ হাজার ৩৮০ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ৬ হাজার ১৬ মেট্রিক টন খেজুর আমদানি হয়েছে ডিসেম্বর মাসে। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ছোলার চাহিদা বছরে ১ লাখ ৫০ হাজার টন। এর মধ্যে শুধু রমজান মাসে চাহিদা থাকে প্রায় এক লাখ টন। সেই হিসাবে বছরে দেশে প্রতি বছর এক লাখ ৮০ হাজার থেকে দুই লাখ মেট্রিক টন ছোলা আমদানি হয়। ২০২২ ও ২০২৩ দুই বছরেই চাহিদার চেয়ে বেশি ছোলা আমদানি হয়েছে। উদ্ভিদ সংঘ নিরোধ চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের গত ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে ২ লাখ ৬০ হাজার ২৪০ মেট্রিক টন ছোলা আমদানি হয়েছিল। আর ২০২৩ সালে আমদানি হয়েছে ২ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন। 

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে একই বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত গত এক বছরে দেশে ছোলা আমদানি হয়েছে ২ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন। বেশিরভাগ ছোলাই আসছে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালে দেশে আমদানি করা ২ লাখ ৯৪ হাজার টন ছোলার মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছে ২ লাখ ৯৪৫ মেট্রিক টন। বাকি ৯৪ হাজার মেট্রিক টন ছোলার মধ্যে অধিকাংশ ছোলা আসছে প্রতিবেশী দেশ ভারত এবং মিয়ানমার থেকে। মিয়ানমার থেকে যেসব ছোলা আমদানি হয়েছে তার সবই এসেছে ২০২৩ সালের মার্চ মাসে। 

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে চিনির বাৎসরিক চাহিদা ১৯ লাখ থেকে ২০ লাখ মেট্রিক টন। মাসে গড় চাহিদা এক লাখ ৬০ হাজার থেকে এক লাখ ৬৫ হাজার টন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, বার্ষিক ১৯ লাখ টন চাহিদার বিপরীতে ২০২৩ সালের ১১ জুন থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে দেশে চিনি আমদানি হয়েছে ১১ লাখ ৩৪ হাজার টন। সেই হিসাবে গত ছয় মাসে গড়ে প্রতি মাসে চিনি আমদানি হয়েছে এক লাখ ৮৯ হাজার টন। অর্থাৎ গত ছয় মাসে চাহিদার তুলনায় বেশি চিনি আমদানি হয়েছে। এরপর ডিসেম্বর পর্যন্ত গত দেড় মাসে আরও পাঁচ লাখ মেট্রিক টনের বেশি চিনি আমদানি হয়েছে। রমজানকে কেন্দ্র করে চলতি মাসে চিনি নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে কয়েকটি জাহাজ। বর্তমানে ৯৬ মেট্রিক টন অপরিশোধিত চিনি নিয়ে দুটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে আসার অপেক্ষায় রয়েছে। এই হিসেবে এবার রমজানে চিনির সংকট তৈরি হবে না। 

অন্যদিকে ২০২৩ সালে ভোজ্য তেল আমদানি হয়েছে চাহিদার চেয়ে বেশি। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী দেশে বছরে ভোজ্য তেলের চাহিদা রয়েছে প্রায় ২৪ লাখ টন। এর মধ্যে সরিষা, তিল ও সূর্যমুখী থেকে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয় মাত্র ৩ লাখ টন, যা চাহিদার শতকরা ১২ ভাগ। বাকি ভোজ্য তেল আমদানি করতে হয়।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছরে সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে ৭ লাখ ৬৫ হাজার ২৭৩ মেট্রিক টন। অন্যদিকে একই সময়ে পাম অয়েল আমদানি হয়েছে ২৬ লাখ ৮১ হাজার ৫৪৭ মেট্রিক টন। সেই হিসাবে গত এক বছরে দুই ধরনের ভোজ্য তেল আমদানি হয়েছে ৩৪ লাখ ৪৬ হাজার ৮২০ মেট্রিক টন। এতে চাহিদার চেয়ে প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন বেশি ভোজ্য তেল আমদানি বেশি হয়েছে। ভোজ্য তেল আমদানি এখনও স্বাভাবিক থাকায় ব্যবসায়ীরা মনে করছেন রমজানে বাজারে ভোজ্য তেলের কোনো সংকট তৈরি হবে না। 

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বাজারে পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। ছোলা, ডাল, তেল, পেঁয়াজ কোনো পণ্যেরই এখন সরবরাহ ঘাটতি নেই। যে কারণে এখন বাজারে এসব পণ্যের দামও নিম্নমুখী। এক মাসের ব্যবধানে পাইকারিতে ছোলার দাম কমেছে মণপ্রতি অন্তত ৩০০ টাকা। এক মাস আগে যে ছোলা বিক্রি হয়েছিল প্রতি মণ ৩ হাজার ৬০০ টাকায়, সেই ছোলা এখন প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৩০০ টাকায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘রমজানে ছোলার কোনো সংকট হবে না। রমজানকে কেন্দ্র করে প্রচুর ছোলা আমদানি হয়েছে। এসব ছোলা বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে।’

আমদানি করা চিনি, ভোজ্য তেল বিপণনের সঙ্গে জড়িত খাতুনগঞ্জের আরএম এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার মো. শাহেদুল আলম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বাজারে এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। তাই চিনি, সয়াবিন তেলের দামও এখন নিম্নমুখী। তবে রমজানে এসব পণ্যের দাম কেমন হবে সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না।

লোহিত সাগর দিয়ে জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে যে সংকট তৈরি হয়েছে সেটি যদি অব্যাহত থাকে, আমদানিকারকরা যদি চাহিদামতো এলসি খুলতে না পারেন, তাহলে হয়তো রমজানে পণ্য সরবরাহে কিছুটা বিঘ্ন ঘটতে পারে। তবে আমরা আশা করছি, এ ধরনের কোনো সমস্যা তৈরি হবে না। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে রমজান সামনে রেখে পণ্য আমদানিতে ব্যাংকগুলোকে ন্যূনতম মার্জিন রাখার নির্দেশনা দিয়েছে। এতে রমজান সামনে রেখে পণ্য আমদানি বাড়বে। তাই রমজানে দামও স্বাভাবিক থাকবে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা