× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আরও সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৮ জানুয়ারি ২০২৪ ০০:৪৯ এএম

প্রবা ফটো

প্রবা ফটো

দেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বাড়িয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) জন্য সংকোচনমূলক নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অর্থবছরে সরকারের গড় মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৬ শতাংশ থাকলেও নতুন মুদ্রানীতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক তা ধরেছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। সুদহার ছাড়াও নতুন মুদ্রানীতিতে কমেছে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা আর বিনিময় হার নির্ধারণে নতুন পদ্ধতিতে যাওয়ারও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বুধবার (১৭ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের জন্য নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার।

তিনি জানান, বর্তমানে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান চ্যালেঞ্জ। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি সরকারকেও সহযোগিতা করতে হবে। এজন্য নতুন অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করে অর্থনীতির বাইরের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় সহায়তা চান তিনি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৮ শতাংশ করা হয়েছে। এতে ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট আরও বাড়বে। এজন্য বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ১০০ বেসিস পয়েন্ট কমানো হয়েছে। অর্থবছরের প্রথম মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১১ শতাংশ। বর্তমানে তা কমে দাঁড়াবে ১০ শতাংশে। এ ছাড়া বিনিময় হার নির্ধারণে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি প্রয়োগের ঘোষণাও দিয়েছেন গভর্নর।

মুদ্রানীতির খসড়া পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন আকারে উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. হাবিবুর রহমান। এ সময় তিনি উল্লেখ করেন, মূল্যস্ফীতি কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে নামিয়ে আনা, উচ্চহারের খেলাপিতে লাগাম টানা এবং ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করাসহ তিন চ্যালেঞ্জ অগ্রাধিকার পাচ্ছে নতুন মুদ্রানীতিতে।

মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে বাজারে অর্থের জোগান কমানোর দিকে হাঁটছে বাংলাদেশ ব্যাংক। 

নতুন মুদ্রানীতিতে, রেপো রেট বা নীতি সুদহার ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৮ শতাংশ করা হয়েছে। এর আগে সর্বশেষ গত নভেম্বর মাসে নীতি সুদহার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে সাত দশমিক ৭৫ শতাংশ করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। 

নীতি সুদহার বাড়ল

এবার বিশেষ রেপো সুদহারে (স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি-এসএলএফ) নীতি সুদহার করিডোরের ঊর্ধ্বসীমা ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে, বর্তমানে তা ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। পাশাপাশি সুদহার করিডোরের নিম্নসীমা রিভার্স রোপো সুদহার (স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি-এসডিএফ) বিদ্যমান ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ৭৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে সাড়ে ছয় শতাংশ করা হয়েছে। 

নীতি সুদহারের ঊর্ধ্বসীমা ও নিম্নসীমার মধ্যে ব্যবধান ২০০ শতাংশ পয়েন্ট থেকে কমিয়ে ১৫০ শতাংশ পয়েন্টে নামিয়ে আনা হয়েছে। অর্থাৎ নীতি সুদহার ৮ শতাংশের সঙ্গে সর্বোচ্চ ১৫০ বেসিস পয়েন্ট যোগ করে এসএলএফ সুদহার ও নিচে ১৫০ বেসিস পয়েন্ট বিয়োগ করে এসডিএফ সুদহার নির্ধারণ করা হবে।

গভর্নর বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি সহায়তার ফলে ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টের ঘাটতি কমে আসবে। ডলার আসা কমে যাওয়া দেশে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। গত তিন অর্থবছরে অর্থনীতি থেকে ২৮ বিলিয়ন ডলার তুলে নেওয়া হয়েছে। তারল্য সংকটের কারণে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলো ধার করছে। পাশাপাশি প্রতি কার্যদিবসে অন্যান্য ব্যাংকও ৩০ থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা ধার নিচ্ছে। 

তিনি বলেন, নন-পারফর্মিং লোনের বিষয়ে একটি রোডম্যাপ করা হয়েছে। এই রোডম্যাপের আলোকে সামনের দিনগুলোতে কাজ চলমান থাকবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের চিহ্নিত খারাপ ব্যাংকগুলো পরবর্তী সময়ে আর খারপ হয়নি। আর্থিক খাতের সুশাসনের জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। কাজের এই ধারা অব্যাহত থাকবে।

আর্থিক খাতের দুর্বলতা বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা আগেই দুর্বল ব্যাংকগুলোকে চিহ্নিত করেছিলাম। এটা বলতে পারি দুর্বল ব্যাংকগুলো আরও খারাপের দিকে যায়। দেশের ৫২ বছরের ইতিহাসে কোনো ব্যাংক বন্ধ হয়নি, হবেও না। তবে ওই দুর্বল ব্যাংকগুলোর দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগে। তারা খারাপের দিকে যায়নি আর দুর্বলতা কাটিয়ে উঠবে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বর্তমান সময়ে যখন অর্থনীতি অনেকগুলো চ্যালেঞ্জের মুখে আছে। সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য এখন মূলত দরকার হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্যকে উজ্জীবিত করা। বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল ফোকাসটা যেহেতু মূল্যস্ফীতি। এটা ঠিক আছে। কিন্তু অ্যাপ্রোচটা পুরোপুরি গতানুগতিক। মূল্যস্ফীতিটা চাহিদাজনিত কারণে হচ্ছে না। এটা হচ্ছে মূলত সরবরাহজনিত কারণে। তাই এটা নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি তেমন কাজে আসবে না।’ 

তারল্য সংকট কমানোর পদক্ষেপ 

বর্তমানে দেশে মূল্যস্ফীতি চরম আকার ধারণ করেছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৪১ শতাংশে, যা গত ৮ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। আগামী জুনের মধ্যে তা ৭ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের। পাশাপাশি ব্যাংকিং খাত ভুগছে ব্যাপক তারল্য সংকটে। এমন এক পরিস্থিতির মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন মুদ্রানীতিতে এসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

সাধারণত বাজারে টাকার সরবরাহ বাড়িয়ে বা কমিয়ে বাজারে টাকার জোগান নিয়ন্ত্রণ করে থাকে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু আগের মুদ্রানীতি থেকে এরকম মুদ্রা সরবরাহ নীতির বদলে সুদহার ভিত্তিক নীতি নেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ সুদের হার বাড়িয়ে বা কমিয়ে বাজারে মুদ্রার জোগান নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। মুদ্রা সরবরাহের এই নীতি এবারও বহাল রয়েছে।

সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে গভর্নর বলেন, আগের মুদ্রানীতিতে নেওয়া মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। তবে এই সময়ের মধ্যে অনেক বেশি বাড়েনি। সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে একটু সময়ের প্রয়োজন হয়। কারণ এই পদ্ধতিতে মূল্যস্ফীতি কমাতে বেশ সময় লেগে যায়। আগের চেয়ে না বাড়লেও গত নভেম্বর থেকে ক্রমাগত কমছে মূল্যস্ফীতি।

অপরদিকে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতিতে দেখা যায়, ২০২৪ সালের জুন মাসে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ শতাংশ। প্রথমার্ধের মুদ্রানীতিতে ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ১১ শতাংশ। কিন্তু কোনো মাসেই এই খাতের লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি ব্যাংকগুলো। এমনকি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের পাঁচ মাসই প্রবৃদ্ধি ছিল এক অঙ্কের ঘরে। শুধু গত অক্টোবরে প্রবৃদ্ধি বেড়ে ১০ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ হয়েছিল। এ ছাড়া দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতিতে সরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৭ দশমিক ৮ শতাংশ। 

নতুন মুদ্রানীতি কেমন হলো জানতে চাইলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘নতুন মুদ্রানীতিতে তেমন বড় ধরনের পদক্ষেপ আসেনি। আশা করা হয়েছিল কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসবে। রোপো রেট যেটা বাংলাদেশ ব্যাংকের সেটাকে বাড়ানো হচ্ছে। এটার উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে সংকোচনমূলক নীতির সংকেত দিচ্ছি আমরা। কিন্তু এই সংকোচনমূলক নীতি বাজারে প্রভাব ফেলতে গেলে বাজারে যে সুদহারটা নির্ধারণ করা হয় স্মার্ট পদ্ধতিতে, সেখানে তো হাত দেওয়া হয়নি। সেখানে কোনো পরিবর্তন নেই।’ 

বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, এবারের মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মুদ্রা বিনিময় হারের চাপ এবং সরকারের কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় অর্থের সরবরাহ নিশ্চিত করার বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে চলমান অস্থিতিশীলতাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববাজারে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া, মূল্যস্ফীতিকে সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা, নন পারফর্মিং লোন এবং জ্বালানি তেলের দামে অস্থিরতাকে প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। 

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নতুন মুদ্রানীতিতে বিদেশি মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণে ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি ব্যবহারের চিন্তা করা হচ্ছে। তবে এ পদ্ধতিতে ডলারের বিনিময় হার কত হবে, তা বলা হয়নি। পরে তা জানানো হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান, একেএম সাজেদুর রহমান খান, আবু ফরাহ মো. নাছের ও নুরুন নাহার, নির্বাহী পরিচালক খোরশেদ আলম, এজাজুল ইসলামসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা