জোনায়েদ মানসুর
প্রকাশ : ১৩ জানুয়ারি ২০২৪ ২২:৩৪ পিএম
আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২৪ ২২:৩৬ পিএম
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. গোলাম মোস্তফা। প্রবা ফটো
দেশের সর্বস্তরের মানুষকে টেকসই সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় আনার লক্ষ্যে চালু হয়েছে সর্বজনীন পেনশন স্কিম। এ স্কিমের আওতায় সরকারি চাকরিজীবী ব্যতীত দেশের সব নাগরিক পেনশন সুবিধা পাবেন। প্রতিটি স্কিমে পেনশনের অর্থ প্রদান করবে সরকার। সম্প্রতি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. গোলাম মোস্তফা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জোনায়েদ মানসুর
প্রবা : সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনায় নতুন কী কী সুবিধা যুক্ত হচ্ছে?
গোলাম মোস্তফা : বর্তমানে একজন নির্বাহী চেয়ারম্যান ও দুই সদস্যের সমন্বয়ে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ কাজ করছে। কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক এবং সিটি ব্যাংক পিএলসির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। ব্যাংকগুলোতে পেনশন স্কিমের হিসাব খোলা হয়েছে। পেনশন স্কিমে যুক্ত হতে আমাদের ওয়েবসাইটে আইটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে। অফিসে না এসে আইটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করা যায়। তা ছাড়া চলতি মাসেই কল সেন্টারের সুবিধা চালু করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
প্রবা : পেনশন কার্যক্রমের আওতায় কতজনকে আনার পরিকল্পনা করছেন?
গোলাম মোস্তফা : সর্বজনীন পেনশন স্কিমের মাধ্যমে প্রায় ১০ কোটি মানুষকে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী একজন নাগরিকের ভবিষ্যৎ আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে, যা ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। গ্রাহকরা চাঁদার ওপর বিনিয়োগ রেয়াত পাবেন এবং প্রাপ্ত পেনশন আয়করমুক্ত থাকবে। এমনকি ‘প্রবাসী’ চাঁদা স্কিমের গ্রাহকরা সরকার ঘোষিত প্রণোদনা পাবেন। প্রাথমিকভাবে আমরা চারটি স্কিম নিয়ে কাজ করছি। নিম্ন আয়ের নাগরিকদের জন্য সমতা স্কিমে ব্যক্তি ৫০০ টাকা প্রদান করলে সরকারও সমপরিমাণ টাকা তার কর্পাস হিসাবে জমা করবে।
প্রবা : কার্যক্রমের শুরু থেকে এ পর্যন্ত কেমন সাড়া মিলছে?
গোলাম মোস্তফা : জনগণের মধ্যে এ কর্মসূচিতে যোগদানের বিষয়ে যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরএ) সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছি। ওই অথরিটির আওতাধীন ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো (এমএফআই) কর্মসূচিগুলোকে পেনশন স্কিমে আনার পাশাপাশি তাদের সুবিধাভোগীদের মধ্যেও প্রচার এবং উদ্বুদ্ধকরণের পথ সুগম হবে। আমরা ভবিষ্যতে এনজিও ব্যুরোসহ অন্যান্য সংস্থার সঙ্গেও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের বিষয়টি বিবেচনায় রেখেছি। ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৭ হাজার ৪৮৯ জন সর্বজনীন স্কিমে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে চাঁদা পরিশোধ করেছেন। চারটি স্কিমে ২২ কোটি ৫০ লাখ ৪১ হাজার টাকা জমা পড়েছে। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগ শীর্ষে এবং স্কিম হিসেবে প্রগতিতে সবচেয়ে বেশি নাগরিক অংশগ্রহণ করেছেন।
প্রবা : শরিয়াহভিত্তিক স্কিম চালুর পরিকল্পনা আছে কি?
গোলাম মোস্তফা : শরিয়াহভিত্তিক স্কিমের বিষয়ে অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ সবেমাত্র কাজ শুরু করেছে এবং চারটি স্কিম নিয়ে কাজ করছে। ভবিষ্যতে পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করা হবে।
জাতীয় পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন এবং এ আইনের অধীনে প্রণীত বিধিমালাসমূহে জমার বিপরীতে মুনাফার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আমরা জমার বিপরীতে প্রাপ্ত অর্থকে মুনাফা হিসেবেই দেখেছি। জমাকৃত টাকা বিনিয়োগের জন্য বিধিমালার খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ২০ কোটি টাকা ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করা হয়েছে। ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগকৃত অর্থ থেকে প্রায় ১১ শতাংশ হারে মুনাফা পাওয়া যাবে।
প্রবা : স্কিম বদলের কি কোনো সুযোগ আছে?
গোলাম মোস্তফা : জাতীয় পেনশন স্কিমের রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হলে প্রত্যেক চাঁদাদাতাকে একটি ইউনিক আইডি প্রদান করা হয়। এ আইডির পাসওয়ার্ড দিয়ে তিনি তার কর্পাস হিসাবে জমাকৃত অর্থ সম্পর্কে জানতে পারবেন। পেশা পরিবর্তন হলেও আইডি নম্বরের কোনো পরিবর্তনের প্রয়োজন হবে না। তা ছাড়া জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের আইটি প্ল্যাটফর্মে এক স্কিম থেকে অন্য স্কিমে এবং চাঁদার হার পরিবর্তনের সুযোগ রাখা হয়েছে। ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়স্ক নাগরিক ৬০ বছর পূর্তিতে আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন। ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে বয়স্ক যেসব নাগরিক স্কিমে অংশগ্রহণ করবেন, তারা নিরবচ্ছিন্নভাবে ১০ বছর চাঁদা প্রদান করলে আজীবন পেনশন প্রাপ্য হবেন। চাঁদা প্রধানরত অবস্থায় কেউ মৃত্যুবরণ করলে নমিনি বা নমিনিরা জমাকৃত টাকা মুনাফাসহ ফেরত পাবেন। পেনশন ভোগরত অবস্থায় কোনো চাঁদাদাতা মৃত্যুবরণ করলে চাঁদাদাতার বয়স ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত নমিনি পেনশন প্রাপ্য হবেন।