× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মধু চাষে মধুর জীবন

ইউসুফ আলী, মানিকগঞ্জ

প্রকাশ : ০৬ জানুয়ারি ২০২৪ ২০:২৪ পিএম

মানিকগঞ্জে সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌ বাক্স পরিচর্যা করছেন এক চাষি। প্রবা ফটো

মানিকগঞ্জে সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌ বাক্স পরিচর্যা করছেন এক চাষি। প্রবা ফটো

দিন বদলের সঙ্গে সঙ্গে প্রথাগত কৃষিকাজের বাইরে অভিনব উপায়ে ফসল ফলানোর চেষ্টা করছেন কৃষকরা। চলছে চাষের পদ্ধতি এবং ফসল নিয়ে নানা পরীক্ষানিরীক্ষা। এর মধ্যে এমন অনেক চাষ আছে, যা নিয়ে অতীতে সেভাবে তৎপরতা ছিল না মানুষের মধ্যে। মধু এ বিষয়ে নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদাহরণ। আগে বনাঞ্চল ছাড়া মধু চাষ খুব একটা হতো না। বর্তমানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে মধু চাষ নিয়ে চলছে জোর প্রচার।

মানিকগঞ্জে বাণিজ্যিকভাবে বেশ কয়েক বছর ধরেই সরিষা ক্ষেতে মৌ চাষ করা হয়। মধু সংগ্রহের জন্য জেলার বিভিন্ন স্থানে সরিষা ক্ষেতের পাশেই চাষিরা তাঁবু স্থাপন করেন। চলতি মৌসুমে প্রায় ২০০ টন মধু সংগ্রহের পরিকল্পনা করা হয়েছে। যার বাজারমূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। চলতি মৌসুমে গতবারের চেয়ে জেলায় সরিষার আবাদ বেশি হওয়ায় এবং মৌচাষির সংখ্যা বাড়ায় মধুর উৎপাদনও বাড়বে বলে আশা করছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস। 

জেলার সদর উপজেলার মূলজান, গড়পাড়া এবং ঘিওর উপজেলার পুখুরিয়ায় মৌচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলায় সরিষা চাষ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মৌচাষিদের ভিড়ও বাড়ছে। সরিষার ফুল ফোটার শুরু থেকেই চাষিরা তাদের তাঁবু স্থাপন করেছেন। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন ইতালি, অস্ট্রেলিয়া ও মেলিফেরা প্রজাতির মাছি। তাঁবুর আশপাশে বসিয়েছেন মধু সংগ্রহের জন্য তিন প্রকারের বাক্স। প্রতিটি নিউক্লিয়াস বাক্সে ৫-৬টি, ব্রড বাক্সে ৯-১০টি ও সুপার বাক্সে ১৮-২০টি মৌমাছির ফ্রেম আছে। 

এ ছাড়া প্রতি বাক্সে দলনেতা হিসেবে রয়েছে একটি রানী মৌমাছি। এসব মৌমাছি তাঁবুর আশপাশের তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মধু সংগ্রহ করে নিয়ে আসে। সংগ্রহকৃত প্রতি কেজি মধু বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়। চাষিরা স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন কোম্পানির কাছে এসব মধু বিক্রি করছেন।

মধু ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন মৌসুমে মানিকগঞ্জ, পাবনা, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে মধু সংগ্রহ করে থাকেন। বিশেষ করে ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে মানিকগঞ্জের সরিষার ফুল থেকে, ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জের ধনিয়া, কালিজিরা ও গুজি তিলের ফুল থেকে এবং এপ্রিল-মে মাসে দিনাজপুরের লিচুর ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করা হয়। এসব মধু ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হয়। কিন্তু পাইকাররা সিন্ডিকেট করে ব্যবসা করায় এবং সরকারের কোনো সুনজর না-থাকায় মধুর উৎপাদক মৌচাষিরা তেমন একটা লাভ করতে পারেন না। 

খুলনা থেকে আসা মৌচাষি মো. সেলিম হোসেন জানান, মৌ চাষ একটি লাভজনক পেশা। গত ১৫ নভেম্বর তিন সদস্যের একটি টিম মধু সংগ্রহের জন্য মানিকগঞ্জে এসেছে। তারা মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার মুলজান এলাকায় দুটি ক্যাম্প স্থাপন করেছে। এখান থেকে সংগৃহীত মধু তারা ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করবে। প্রতিবছর নভেম্বর থেকে শুরু করে জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত সরিষা ক্ষেত থেকে মধু সংগ্রহ চলে। আবহাওয়া ভালো থাকলে এসময় একেক মৌচাষি প্রতি সপ্তাহে ১০-১২ মণ মধু আহরণ করতে পারে। ফলে একজন মৌচাষি সরিষার মৌসুমে দুই মাসে ৮০-৯০ মণ মধু সংগ্রহ করতে পারে। পাইকারি দরে যার বাজারমূল্য ১৪ লাখ টাকার বেশি। 

তিনি আরও জানান, মহাজনদের সিন্ডিকেটের কারণে তারা মধুর ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। মহাজনরা তাদের কাছ থেকে কম মূল্যে মধু কিনে তিন-চার গুণ বেশি মূল্যে বিক্রি করছেন। অনেক সময় বাকিতে মহাজনদের মধু দিয়ে টাকা-পয়সা ওঠানো কষ্টকর হয়ে পড়ে।

মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবু মো. এনায়েত উল্লাহ জানান, জেলায় এবার ৭১ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে, যা গতবারের চেয়ে প্রায় ২৪ হাজার হেক্টর বেশি। মৌচাষের কারণে একদিকে সরিষার ভালো ফলন হচ্ছে, অপর দিকে অতিরিক্ত আয় হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে প্রচুর মধু। এবার সরিষার আবাদ, মৌয়াল বা মৌচাষি ও মৌবাক্সের সংখ্যা গতবারের চেয়ে বৃদ্ধি পাওয়ায় মধুর উৎপাদনও বেশি হয়েছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে অর্ধশতাধিক স্পটে ১২ হাজারের বেশি মৌবাক্স নিয়ে মৌচাষিরা তাঁবু স্থাপন করেছেন। এসব মৌবাক্স থেকে এ মৌসুমে আশা করা যাচ্ছে অন্তত ১৮০ থেকে ২০০ টন মধু আহরণ করা যাবে। যার বাজারমূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। 


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা