অনিয়ম
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:০২ এএম
আপডেট : ০৫ জানুয়ারি ২০২৪ ২৩:৪৫ পিএম
অগ্রণী ব্যাংকের এলসির (ঋণপত্র) দায় শোধ করছে না বসুন্ধরা মাল্টি স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। ফলে মেয়াদোত্তীর্ণ গ্রাহকে পরিণত হয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপের এই প্রতিষ্ঠানটি। এতে পুরো প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। কারণ প্রকল্পটির অর্থায়ন করেছে অগ্রণী ব্যাংকসহ মোট আট ব্যাংক। এখন অগ্রণী ব্যাংক অন্য ব্যাংকের অর্থ দিয়ে এই ঋণের দায় পরিশোধের চেষ্টা করছে।
ব্যাংক থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বসুন্ধরা মাল্টি স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ তাদের কারখানা স্থাপনে সিন্ডিকেশনের আওতায় আটটি ব্যাংক থেকে গত বছর ২ হাজার ৩০৫ কোটি ১০ লাখ টাকা ঋণের অনুমোদন পায়। মেশিনারিজ আমদানির জন্য ওই আট ব্যাংক থেকে ১ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা ঋণও নিয়েছে কোম্পানিটি। ঋণ প্রক্রিয়ার সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। এই প্রকল্পের ঋণ থেকেই সম্প্রতি এলসির দায় শোধ না করায় অগ্রণী ব্যাংকে ৬৩৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোরশেদুল কবির প্রতিদিনের বাংলাদেশকে শাখা ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। কিন্তু শাখা ম্যানেজার কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
ব্যাংকের নথি থেকে জানা যায়, প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প ঋণের মধ্যে অগ্রণী ব্যাংক ৪৬০ কোটি ১০ লাখ, সোনালী ব্যাংক ৫০০ কোটি, জনতা ব্যাংক ৫৮০ কোটি, রূপালী ব্যাংক ১৭০ কোটি, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ১৭৫ কোটি, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ১০৫ কোটি, ব্যাংক এশিয়া ২৬০ কোটি এবং সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের বাকি ১০০ কোটি টাকা দেওয়ার কথা রয়েছে।
এই ঋণের আওতায় আট ব্যাংকের কাছ থেকে ২ হাজার ১৪৪ কোটি ৯২ লাখ টাকার এলসি ঋণের অনুমোদন পায় বসুন্ধরা গ্রুপ। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালে ঋণ অনুমোদনের পর থেকে ধাপে ধাপে মেশিনারিজ আমদানির জন্য এলসি সুবিধা নিতে শুরু করে শিল্প গ্রুপটি। নিয়ম অনুযায়ী, সর্বোচ্চ এক বছরের মধ্যে এই অর্থ ব্যাংককে ফেরত দেওয়ার কথা। কিন্তু তা না করে অর্থ ফেরত দিতে গড়িমসি করছে বসুন্ধরা গ্রুপ। এলসি ঋণের অর্থ পরিশোধে ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া সময়ও শেষ হওয়ার পথে। কিন্তু এখনও বসুন্ধরা গ্রুপের দায় রয়েছে প্রায় ১ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা। যার মধ্যে ৬৩৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকার দায় মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে।
অগ্রণী ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকটির মোট বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ এখন ৭২ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে শীর্ষ ৪৪ গ্রাহকের কাছে রয়েছে ৫৩ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা। এসব বৃহৎসংখ্যক গ্রাহকের মধ্যে চারটিই বসুন্ধরা গ্রুপের কোম্পানি। ২০২২ সাল শেষে অগ্রণী ব্যাংকের কাছে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের দায় ৫৯৯ কোটি, শাফিয়াত সোবহানের নামে ৯৭৮ কোটি, সাফওয়ান সোবহানের নামে ১ হাজার ৮২১ কোটি এবং সায়েম সোবহানের নামে ২ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকার ঋণ বা দায় তৈরি হয়েছে। অজানা প্রতিষ্ঠানের নামেও তাদের বিপুল অঙ্কের ব্যাংক লোন রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। যেগুলোর প্রকৃত সুবিধাভোগী বসুন্ধরা গ্রুপ। হিসাব অনুযায়ী, অগ্রণী ব্যাংকে এই গ্রুপের চার প্রতিনিধির নামে ঋণের পরিমাণ ৬ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা। অগ্রণী ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী আরও দেখা যায়, কাগজে-কলমে ব্যাংকটির মোট ঋণের ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ একটি গ্রুপের কাছেই পুঞ্জীভূত।
সংশ্লিষ্ট খাতের তথ্য মতে, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ক্রমেই বাড়ছে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ। নামে-বেনামে ঋণ বের করে নিয়ে সেসব ঋণ এখন আর ফেরত দিচ্ছে না প্রভাবশালী বহু কোম্পানি। ২০২০ সালে অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৪৭২ কোটি, ২০২১ সালে ৯ হাজার ৯৮৭ কোটি, ২০২২ সালে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি এবং ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরের শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ১৬ হাজর ৮৭৪ কোটি টাকায় পৌঁছায়। হিসাব বলছে, খেলাপি ঋণের এই পরিমাণ বিতরণ করা মোট ঋণের ২৪ দশমিক ০৩ শতাংশ।