প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ জানুয়ারি ২০২৪ ১৫:৫৮ পিএম
আপডেট : ০২ জানুয়ারি ২০২৪ ১৬:০০ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
গত বছর ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম বৃদ্ধি ক্রেতাদের ভোগান্তি শুরু হয়েছিল। সেই ভোগান্তি কমাতে মুরগি ও ডিমের বাজারের সিন্ডিকেট ভাঙতে চায় বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)। এ জন্য নিচ্ছে নতুন উদ্যোগ। রাজধানীসহ দেশের বিভাগীয় ও জেলা শহরে আড়ত খুলে প্রান্তিক খামারিরা মুরগি ও ডিম সরবরাহ করবে। কার্যক্রমটির উদ্বোধন হচ্ছে আগামীকাল বুধবার (৩ জানুয়ারি)।
গত বছর জানুয়ারিতে প্রতি কেজি মুরগির দাম ছিল ১৪০ টাকা। সেই মুরগি মার্চ-এপ্রিলে বিক্রি হয়েছে ৩০০ টাকা কেজিতে, দাম বেড়েছিল ১১৪ শতাংশ। ডিসেম্বরেও মুরগির কেজি ছিল ২০০/২১০ টাকা।
জানুয়ারিতে ফার্মের মুরগির ডিমের হালি ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডিমের হালি উঠে যায় ৬৫/৭০ টাকা। ডিমের দামও বেড়েছিল ১০০ শতাংশের বেশি।
চড়া দামে বাজারে মুরগি ও ডিম বিক্রি হলেও প্রান্তিক খামারিরা এতো দাম পায়নি। এসব টাকা গেছে মধ্যস্বত্ত্ব ও সিন্ডিকেটদের পকেটে।
অল্পদিনেই তারা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল। সরকার গত ১৪ সেপ্টেম্বর ডিমের দাম ৪৮ টাকা হালি নির্ধারণ করে দিয়েও লাগাম টানতে পারেনি করপোরেটগুলোর বিরুদ্ধে।
অবশেষে বিপিএ, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহায়তায় ১৬ অক্টোবর থেকে রাজধানীর ৩০/৩৫টি স্থানে ট্রাকসেলে সরকার নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রি শুরু করলে সপ্তাহের ব্যবধানে কমে আসে ডিমের চড়া দাম। ৭০ টাকা হালির ডিম আবার ফিরে আসে ৩৬/৪০ টাকায়। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এবারও ভোক্তা অধিদপ্তরের সহায়তায় ডিম ও মুরগির আড়ত চালু করছে বিপিএ। তৈরি করবে মুরগির ফিডও।
এ ব্যাপারে বিপিএ সভাপতি সুমন হাওলাদার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘সিন্ডিকেট করে মুরগির বাচ্চা উৎপাদন থেকে শুরু করে ব্রয়লার, সোনালি, লেয়ার মুরগি, ডিম, মেডিসিন ও ফিডের দাম আকাশছোঁয়া করে ফেলে করপোরেটগ্রুপ। তাদের কারণে প্রান্তিক খামারিরা লোকসানে পড়ে।’
তারা প্রথমে দাম কমিয়ে দেয়। এতে প্রান্তিক খামারিরা পথে বসে যায়। তারপর তারা দাম বাড়িয়ে দেয় নিজেদের পণ্যের। এতে করে প্রান্তিক খামারিরা নিঃস্ব হয়ে যায়। ক্রেতাদের পকেট থেকে হাতিয়ে নেয় কোটি কোটি টাকা।
আমরা এ অবস্থা থেকে সরকার নির্ধারিত দামে ডিম ও মুরগি বিক্রি করে ক্রেতাদের স্বস্তি দিতে চাই। এসব সিন্ডিকেট ভাঙতে চাই। এ জন্য নিজেরা সমবায়ের মাধ্যমে ফিড তৈরি করে খামারিদের সরবরাহ করব।
তাদের উৎপাদিত মুরগি ও ডিম সরাসরি আড়তে এনে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করব। তাতে সিন্ডিকেট ভাঙতে সহজ হবে। ক্রেতারাও স্বল্প ও ন্যায্য দামে পণ্য পাবে। আগামীকাল শনির আখড়ার গোবিন্দপুরে ‘নাজিফা পোলট্রি ফিড অ্যান্ড মেডিসিন’ নামে ডিম ও মুরগির পাইকারি আড়তটি উদ্বোধন করবেন ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
এছাড়াও পর্যায়ক্রমে রাজধানীর কাপ্তান বাজার, তেজগাঁও বাজার, কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজার, উত্তরা, মিরপুর, খিলক্ষেত, রামপুরা ও বাড্ডাসহ মোট ১০টি স্থানে আড়ত করা হবে। পরবর্তীতে দেশের বিভাগীয় শহর ও জেলা পর্যায়ে আড়ত করা হবে।
তিনি বলেন, ‘গত বছরের শুরুতে ৫০ কেজির ফিডের বস্তার দাম ছিল ২৫০০/২৬০০ টাকা। বছর শেষে দাম বাড়ানো হয়েছে ৩৬০০/৩৭০০ টাকা, অর্থাৎ ১০০০ টাকা। আমরা ৩২০০/৩৩০০ টাকার মধ্যে ফিড দেব। মানও থাকবে তাদের চেয়ে ভালো। আমরা সরকারের কাছে আহ্বান জানাবো প্রান্তিক খামারিদের ঋণ দিয়ে ও ফিড প্রস্তুতের কাঁচামাল আমদানিতে সহায়তা করার জন্য।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে ১৭ কোটি ১৭ লাখ মানুষের জন্য ৭৫ দশমিক ২০ লাখ মেট্রিক টন আমিষের চাহিদা পূরণ করতে পোলট্রি খাত থেকে আসছে ৩৮ লাখ টন মাংস। আবার ১ হাজার ৭৮৫ দশমিক ৬৮ কোটি পিস ডিমের চাহিদা পূরণে উৎপাদিত হচ্ছে ২ হাজার ৩৩৫ দশমিক ৩৫ কোটি ডিম।