× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনায় বিদেশি অপারেটর, বে-টার্মিনাল প্রকল্পে এসেছে গতি

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম

প্রকাশ : ০১ জানুয়ারি ২০২৪ ২১:২১ পিএম

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

আগে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে প্রবেশ করত সাড়ে ৯ মিটার গভীরতার সর্বোচ্চ ১৯০ মিটার লম্বা জাহাজ। এটি উন্নীত হয়েছে ২০০ মিটারে। এখন বন্দর জেটিতে ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ প্রবেশ করতে পারে। ২০২৩ সালে বড় জাহাজ প্রবেশের ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়েছে তা নয়; একই সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরে বেড়েছে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং। নানা প্রতিকূলতার পরও কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রে থ্রি মিলিয়নস ক্লাবের সম্মান ধরে রেখেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর পাশাপাশি টুলস পোর্ট থেকে রূপান্তর হতে যাচ্ছে ল্যান্ড লর্ড পোর্টে। 

বন্দর কর্মকর্তারা বলেছেন, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের দিক দিয়ে ২০২৩ সাল ছিল চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য একটি মাইলফলক। এই বছর বন্দর কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েকটি বড় বড় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছে। এসব সিদ্ধান্তের কারণে বন্দর কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা কয়েকগুণ বেড়েছে। বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) দীর্ঘদিন পড়ে থাকার পর এটি পরিচালনার জন্য বিদেশি অপারেটর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। গতি এসেছে বে-টার্মিনাল প্রকল্পে। ভূমি জটিলতায় গত কয়েক বছর ঝুলে থাকার পর ২০২৩ সালে প্রকল্পটির মাস্টারপ্ল্যান চূড়ান্ত করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দরে নির্মিত হয়েছে অত্যাধুনিক কেমিক্যাল শেড, নতুন কার শেড।

টার্মিনাল পরিচালনায় বিদেশি অপারেটর

বন্দর ব্যবস্থাপনায় বেসরকারি অংশীদারত্বের বিষয়টি একটি চ্যালেঞ্জ। বন্দর কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ওই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল অপরেশন ও ব্যবস্থাপনায় সৌদি আরবের রেড-সি গেটওয়ে টার্মিনাল ইন্টারন্যাশনালকে যুক্ত করেছে। ২০২৩ সালের ৬ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। আর এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের বন্দর অপারেশন ও ব্যবস্থাপনায় নতুন দিগন্তের উন্মোচন হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর এতদিন টুলস পোর্ট (ভূমি, টার্মিনাল ও ইকুইপমেন্ট ছিল বন্দর কর্তৃপক্ষের, পরিচালনা করেছে প্রাইভেট কোম্পানি) হিসেবে কাজ করত। এখন ল্যান্ড লর্ড পদ্ধতিতে (কর্তৃপক্ষ শুধু ভূমি দেবে; বন্দর নির্মাণ, ইকুইপমেন্ট কেনা ও পরিচালনা করবে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান। কর্তৃপক্ষকে শুধু বার্ষিক রাজস্ব দেবে) প্রবেশ করছে চট্টগ্রাম বন্দর।

গতি এসেছে বে-টার্মিনাল প্রকল্পে

বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে ২০১৫ সালে বে-টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। এরপর আট বছর পার হতে চললেও এখনও প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাজ শুরু করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। প্রথমে ভূমি অধিগ্রহণসংক্রান্ত জটিলতা, পরে মাস্টারপ্ল্যান তৈরিতে দীর্ঘসূত্রতাসহ নানা কারণে কয়েক বছর মুখ থুবড়ে পড়েছিল প্রকল্পটি। ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা কেটে যাওয়ার পর ২০২৩ সালে প্রকল্পটি আবারও গতি পেয়েছে। দ্বিতীয় দফায় সংশোধনের পর প্রকল্পটির মাস্টারপ্ল্যান চূড়ান্ত করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। গত ১৪ নভেম্বর প্রকল্পটির চূড়ান্ত মাস্টারপ্ল্যানের মোড়ক উন্মোচন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এর মধ্য দিয়ে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে প্রকল্পটি। 

চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল বলেন, বন্দরের অগ্রাধিকার প্রকল্প বে-টার্মিনালের মাল্টিপারপাস টার্মিনালের নির্মাণকাজ ২০২৪ সালের মাঝামাঝি শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ওই টার্মিনাল নির্মাণের জন্য আবুধাবি পোর্ট গ্রুপ (এডি পোর্টস) এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব দাখিল করেছে। বে-টার্মিনালের কন্টেইনার টার্মিনাল-১ ও ২ নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য যথাক্রমে পিএসএ সিঙ্গাপুর ও ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে ২০২৪ সালে চুক্তি স্বাক্ষর হবে। দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বে-টার্মিনালের চতুর্থ টার্মিনাল হিসেবে গ্যাস ও অয়েল টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ওই টার্মিনাল নির্মাণের জন্য একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ ব্যক্ত করে ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব করেছে। 

‘থ্রি মিলিয়নেয়ার’ পোর্ট ক্লাবে বন্দর

ইউক্রেন-রাশিয়ার পর এখন ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধের কারণে বিশ্ব এক ধরনের অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই অস্থিরতা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলছে। যে কারণে অর্থনীতিতে একধরনের মন্দা চলছে। বৈশ্বিক এই প্রেক্ষাপটে বন্দরসংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করেছিলেন ২০২৩ সালে হয়তো থ্রি-মিলিয়নেয়ার ক্লাব থেকে ছিটকে পড়তে পারে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বাস্তবে সেটি হয়নি। অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেই থ্রি মিলিয়নেয়ার পোর্ট ক্লাবের সম্মান ধরে রাখতে পেরেছে চট্টগ্রাম বন্দর। 

নির্মিত হয়েছে অত্যাধুনিক কেমিক্যাল শেড

ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ডেঞ্জারাস গুডস (আইএমডিজি) কোড অনুযায়ী, বিপজ্জনক পণ্য নির্ধারিত তাপমাত্রায় পরিবহন ও সংরক্ষণ করতে হয়। আন্তর্জাতিক নৌ-সংস্থা (আইএমও) প্রণীত আইএমডিজি কোডে এমন নির্দেশনা থাকলেও এতদিন তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত শেড ছাড়াই আমদানি-রপ্তানির বিপজ্জনক পণ্য সাধারণ শেডে রাখত চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। বিপজ্জনক পণ্যের জন্য তৈরি কোনো শেড না থাকায় বন্দরের প্রি-শেডে এসব পণ্য রাখা হতো। বিপজ্জনক পণ্য রাখার ক্ষেত্রে সেখানে ছিল না কোনো রাসায়নিক শ্রেণি বিভাজন। দাহ্য, অদাহ্য সব পণ্য একসঙ্গে ঠাসাঠাসি করে রাখায় প্রতিনিয়ত রয়েছে বিস্ফোরণের ঝুঁকিতে।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিপজ্জনক পণ্য এভাবে ব্যবস্থাপনা করে এলেও এবার চট্টগ্রাম বন্দরে রাসায়নিক পণ্য হ্যান্ডলিংয়ে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। আইএমডিজি কোড অনুযায়ী বিপজ্জনক পণ্য ব্যবস্থাপনায় চট্টগ্রাম বন্দরে নির্মিত হতে যাচ্ছে যুগোপযোগী অত্যাধুনিক তাপ নিয়ন্ত্রিত ‘স্টেট অব আর্ট’ কেমিক্যাল শেড। প্রতিষ্ঠার ১৩৬ বছরে এসে অত্যাধুনিক এই কেমিক্যাল শেডটি নির্মাণ করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে এটি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয়নি।

বন্দরে নতুন বহুতল কার শেড

পর্যাপ্ত কার শেড না থাকায় এতদিন আমদানি করা কারগুলো রাখা নিয়ে জটিলতা তৈরি হতো। অনেক সময় কারগুলো খোলা আকাশের নিচে রাখতে হতো। তাই আমদানি করা গাড়ি রাখার জন্য নতুন একটি আধুনিক কার শেড নির্মাণের উদ্যোগ নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। নতুন বহুতল কার শেডটি নির্মাণের পর ২০২৩ সালের ১৮ এপ্রিল এটি উদ্বোধন করা হয়।

বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, বহুতল কার শেড নির্মাণে খরচ করা হয় ২৮ কোটি ৯৯ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। কার শেডে ট্রাফিক রুম, সিকিউরিটি রুম, পাম্প রুম এবং অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাসহ রয়েছে আধুনিক সকল সুযোগ-সুবিধা। এটির আয়তন প্রায় ২৯ হাজার স্কয়ার ফুট এবং গ্রাউন্ড ফ্লোরে ১০৭টি এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় ১১১টি করে কার পার্কিংয়ের সুবিধা রয়েছে।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা