× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ব্যাংক খাত

৩৬ বছরে ব্যাংকের খারাপ সময়

জয়নাল আবেদীন

প্রকাশ : ০১ জানুয়ারি ২০২৪ ১০:০৯ এএম

আপডেট : ০১ জানুয়ারি ২০২৪ ১১:১৭ এএম

ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

বছরজুড়ে মূল্যস্ফীতি ও ডলার সংকট নিরসনে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। একাধিক নীতি পরিবর্তন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তারপরও নিয়ন্ত্রণে আসেনি আর্থিক সংকট। ৩৬ বছরের কখনোই এমন অর্থনৈতিক সংকট দেখেননি বলে এরই মধ্যে মত দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। 

গত ৬ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের নেতাদের সঙ্গে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে একটি মতবিনিময় সভা করেন। ওই সভায় তিনি বলেছেন, ‘আমাদের অর্থনীতি বর্তমানে একটি চ্যালেঞ্জিং সময় অতিক্রম করছে। আমার ৩৬ বছরের চাকরিজীবনে কখনোই এমন অর্থনৈতিক সংকট প্রত্যক্ষ করিনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সব সময় জোড়া ঘাটতি নিয়ে আলোচনা করেছিÑ চলতি হিসাবের ঘাটতি ও রাজস্ব ঘাটতি। গত অর্থবছরে চলতি হিসাবের ঘাটতি এবং আর্থিক হিসাবের ঘাটতি উভয়ই দেখা গেছে, যা ১৪-১৫ বছরে ঘটেনি। আর্থিক হিসাবে আগের অর্থবছরের ১৫ বিলিয়ন ডলারের উদ্বৃত্ত থেকে চলতি অর্থবছরে ২ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতিতে পড়েছে। অর্থাৎ ১৭ বিলিয়ন ডলারের একটি ব্যবধান।’ তবে গভর্নর মনে করেন, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি একেবারে তলানিতে নেমে এসেছে। আর খারাপ হওয়ার সুযোগ নেই। চলতি অর্থবছরেই দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে বলে তিনি মনে করেন। 

পরিস্থিতি সামাল দিতে বিলাসপণ্য আমদানিতে তুলনামূলক কঠিন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি ঋণ বিতরণের সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা তুলে দেওয়া হয়েছে। বছরজুড়ে এক ছন্দপতনের মধ্যেই ছিল দেশের ব্যাংক খাত। ডলার সংকটের মাঝে প্রকৃত রিজার্ভ হিসাব লুকানোর বিষয়টি সমালোচকদের প্রধান আলোচ্যে পরিণত হয়। নানা নাটকীয়তা আর আইএমএফের শর্তে রিজার্ভ গণনায় বেরিয়ে আসে হিসাবের গরমিল। এর মাঝেই খোলাবাজারে নতুন ইতিহাস তৈরি করে ডলারের দর ওঠে ১২৯ টাকায়।

সুযোগ নিয়ে দেশি-বিদেশি ও রাষ্ট্রায়ত্ত ১০ ব্যাংক ডলার কারসাজিতে জড়িয়ে পড়ে। আর রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগে ব্যাংকে রেকর্ড হয় খেলাপি ঋণে। সমালোচনার মাঝেই ‘বিশেষ বিবেচনায়’ বেক্সিমকোকে ২২ হাজার কোটি টাকা ঋণ আলোচনায় আসে নতুন করে। ‘স্মার্ট’ পদ্ধতিতে সুদহার, একই পরিবার থেকে ব্যাংকের পরিচালক ৩ জনে নামিয়ে আনাসহ কয়েকটি ভালো পদক্ষেপও ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।

অর্থ সংকটে চলতে থাকে অর্থনীতি। কমতে থাকে রিজার্ভ, উদ্বেগ তৈরি করে রেমিট্যান্স। এরই মাঝে আশা জাগায় বিধ্বস্ত অর্থনীতির দেশ শ্রীলঙ্কাকে দেওয়া ঋণ ফেরত আসা। দেশের অর্থনীতির সুযোগে নিজেদের ঋণ নিয়ে নাটক মঞ্চস্থ করে আইএমএফ। যদিও একই বছরে তাদের কাছ থেকে পাওয়া দুই কিস্তি ও এডিবি ঋণে কিছুটা বাড়ে রিজার্ভ।

সবশেষ আলোচনায় আসে টাকার সংকটে পাঁচ শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকের লেনদেনসেবা বন্ধের উপক্রম। চলতি হিসাবের স্থিতি ঋণাত্মক থাকায় এসব ব্যাংককে ২০ দিনের মধ্যে অর্থ সমন্বয়ের সময় বেঁধে দিয়েও অস্বীকার করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নিয়ে ওএসডি-ভীতি তৈরি হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতিঝিল অফিসে। তবু ভীতি, রাজনৈতিক চাপ ও অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব আর ডলার সংকট কাটিয়ে ব্যাংক খাতে স্বাভাবিক লেনদেন ফিরুক এমন প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।

২০২৩ সালের ব্যাংক খাতে যত আলোচিত ঘটনা

ডলার সংকট

দেশে বর্তমানে অর্থনীতিতে যে ধরনের সমস্যা রয়েছে, তার মূলে আছে মার্কিন ডলারের সংকট। ডলার সংকট ও দরবৃদ্ধির ফলে উৎপাদন, বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এর ফলে উচ্চমূল্যস্ফীতি হচ্ছে। জিনিসপত্রের বাড়তি ব্যয় মেটাতে মানুষের কষ্ট হচ্ছে। সব মিলিয়ে এ পরিস্থিতি অর্থনীতিকে বিপদে ফেলছে। নীতিনির্ধারকরা দীর্ঘদিন ধরে, ‘অচিরেই’ এর সমাধান হবে বলে এলেও, সেই ‘অচিরেই’ আর আসছে না। এর মধ্যে বাংলাদেশে ব্যাংক জানিয়েছে, আগস্ট মাসে রেমিট্যান্স কমেছে ২১ শতাংশ, যা গত ছয় মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এটি বৈদেশিক মুদ্রার কমতে থাকা রিজার্ভের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করতে পারে।

টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ

২০২২-২৩ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে রেকর্ড সাড়ে ১৩ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। যার ফলে বিপুল পরিমাণ টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে চলে এসেছে। এখনও বিক্রি করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থবছরের শুরুর দিকে টাকা ছাপিয়ে ঋণ দিলেও এখন বন্ধ রয়েছে। গত অর্থবছর ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকার রেকর্ড ১ লাখ ২২ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি সরবরাহ করে ৯৭ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা, যা নতুন টাকা ছাপিয়ে দেওয়া হয়। যা মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির অন্যতম একটি কারণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। 

এমডিদের পদত্যাগ

বিভিন্ন কারণে ২০২৩ সালে পদত্যাগ করেন চারটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। যেসব প্রতিষ্ঠানে পদত্যাগের ঘটনা ঘটে, সেগুলো হলো ব্যাংক এশিয়া, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক ও আভিভা ফাইন্যান্স। এরপর পদ্মা ব্যাংক ও এসবিএসি ব্যাংকের এমডি দায়িত্বে ফিরলেও ব্যাংক এশিয়া এবং আভিভা ফাইন্যান্সের পদত্যাগ করা এমডিরা ফেরেননি। এ দুই প্রতিষ্ঠানে নতুন এমডি নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

সিআইবি রিপোর্টিং পদ্ধতিতে পরিবর্তন 

গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বিভাগ হলো ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো বা সিআইবি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দিষ্ট কর্মকর্তারা ছাড়া আর কেউ এ বিভাগের কোনো বিষয় পর্যবেক্ষণ বা তথ্য পাওয়ার যোগ্য নন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা না পারলেও এতদিন তা পারত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান শাখা। এখন থেকে ব্যাংকগুলোর শাখা অফিসও সিআইবি তথ্য পরিদর্শন ও পরিবর্তন করতে পারবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে এমন একটি সিদ্ধান্ত ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। এতে ব্যাংকারদের ওপর রাজনৈতিক চাপ তৈরির শঙ্কা দেখা দেয়।

সর্বোচ্চ দরে ডলার বিক্রির রেকর্ড 

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ডলার সংকট চলছে দীর্ঘদিন। ডলারের দর নিয়ে কারসাজি করে ১০ ব্যাংক। নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দরে বিক্রির দায়ে জরিমানার মুখে পড়ে একাধিক ব্যাংক। শাস্তির মুখে পড়েন ৬ ব্যাংকের এমডি। সরিয়ে দেওয়া এসব ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানদের। এসবের সুযোগে খোলাবাজারে ডলারের দাম সর্বোচ্চ ১২৭ টাকায় উঠে যায়। অন্যদিকে ডলারে বাড়তি দর রাখায় ৭ মানি চেঞ্জারের লাইসেন্স স্থগিত ও ১০টিকে শোকজ করা হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় একাধিক প্রতিষ্ঠানকে।

ডলার সংকট সমাধানের ভিন্ন পদক্ষেপ হিসেবে প্রথমবারের মতো ডলারের দর তিন ধাপে কমানো হয়। এতে টাকার বিপরীতে ডলারের অবমূল্যায়ন তৈরি করা হয় কৌশলে। রেমিট্যান্স প্রতি ডলারে ১০৯ টাকা ৭৫ পয়সায় আসে।

একই পরিবার থেকে ব্যাংকের পরিচালক কমিয়ে আনা

একই পরিবার থেকে ব্যাংকের পরিচালক ৩ জনে নামিয়ে আনার নির্দেশ দেওয়া হয় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। ব্যাংক কোম্পানি আইন-১৯৯১-এর সংশোধনী অনুযায়ী একটি ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডে একই পরিবারের সর্বোচ্চ ৪ জন সদস্য বসতে পারত। চলতি বছরের ২১ জুন জাতীয় সংসদে পাস হওয়া নতুন আইনে বলা হয়েছে, একক পরিবারের পরিচালকের সংখ্যা ৩ জনের বেশি হতে পারবে না।

‘স্মার্ট’ পদ্ধতিতে ঠিক হবে ঋণের সুদহার

আইএমএফের শর্ত ও ব্যাংকের তারল্য সংকট কাটাতে ৯ শতাংশ সুদহার তুলে আগামীতে ঋণের সুদহার কত হবে তা ‘স্মার্ট’ পদ্ধতিতে ঠিক করা হয়। নতুন এ পদ্ধতি চলতি বছরের জুলাই থেকে কার্যকর হয়। 

খেলাপি ঋণের রেকর্ড

চলতি বছরে খেলাপি ঋণের রেকর্ড তৈরি হয় দেশের ব্যাংক খাতে। চলতি বছরের জুন প্রান্তিক শেষে ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ১০ দশমিক ১১ শতাংশ।

রিজার্ভ নিয়ে লুকোচুরি

আইএমএফের গণনা পদ্ধতিতে দেশের প্রকৃত রিজার্ভের হিসাব প্রকাশ করা হয় চলতি বছরের ১৩ জুলাই। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী প্রায় সাড়ে ৬ বিলিয়ন ডলারের লুকোচুরি খেলা ছিল। ওইদিন আইএমএফের গণনা পদ্ধতিতে দেশের রিজার্ভ ২৩.৫৭ বিলিয়ন ডলার আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে ২৯.৯৭ বিলিয়ন ডলার প্রকাশ করা হয়।

রিজার্ভ কিছুটা বাড়ল

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৬৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলার ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ৪০ কোটি ডলার ঋণের ওপর ভর করে দেশের রিজার্ভ কিছুটা বেড়েছে। এই দুই সংস্থার ঋণ পাওয়ায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ২৫ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার। আর খরচ করার মতো রিজার্ভ অর্থাৎ (বিপিএম৬) ২০ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলার।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা