× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সংকটেও বেড়েছে অধিকাংশ ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ ২১:০৯ পিএম

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

ব্যাংক ঋণের সুদহার বৃদ্ধি ও বৈদেশিক বাণিজ্যের উপর ভিত্তি করে দেশের অনেক ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে। ২০২৩ সালের শেষ ছয় মাসে তুলনামূলক ব্যাংক ব্যবসা বেড়েছে বলে মত ব্যাংকারদের। তাই সার্বিকভাবে হিসাব করলে দেখা যায় ১২ মাসে মুনাফা বেড়েছে বেশিরভাগ ব্যাংকের। দেশের ব্যাংকগুলোর আয়ের বড় একটি অংশ আসে বৈদেশিক বাণিজ্য থেকে। ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) দেশের প্রায় সব ব্যাংকেরই মুনাফার এ উৎস সংকুচিত হয়েছিল। তাছাড়া তারল্য সংকটের কারণে ব্যাংকগুলোর তহবিল সংগ্রহ ব্যয় (কস্ট অব ফান্ড) আগের তুলনায় বেড়ে যায়। ফলে আগের ছয় মাসে কমলেও জুলাই থেকে ডিসেম্বরে ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বৃদ্ধি পেয়েছে।

তবে পরিচালন মুনাফাই একটি ব্যাংকের প্রকৃত মুনাফা নয়। আয় থেকে ব্যয় বাদ দিলে যা থাকে, তা-ই হচ্ছে পরিচালন মুনাফা। আর পরিচালন মুনাফা থেকে খেলাপি ঋণ,সঞ্চিতি, করপোরেট কর বাদ দিলে যা থাকে, তা-ই হচ্ছে নিট মুনাফা। নিট মুনাফা থেকেই লভ্যাংশ দেয় তালিকাভুক্ত ব্যাংক। শুধু পরিচালন মুনাফা দেখে বিনিয়োগ না করতে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের প্রতি গত বছর আহ্বান জানিয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে রাষ্ট্রায়ত্ব রূপালী ব্যাংকের মুনাফা বৃদ্ধি পেয়েছে ৫৬০ শতাংশ। কারণ ২০২৩ সালে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৭০০ কোটি টাকা। কিন্তু এক বছর আগে (২০২২) তা ছিল ১০৬ কোটি। ঋণ আদায় বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এক বছরের ব্যবধানে ৫৯৪ কোটি টাকার পরিচালন মুনাফা বেড়েছে রূপালীর। সদ্য সমাপ্ত বছরে রাষ্ট্রায়ত্বা জনতা ব্যাংকের মুনাফা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২৩ কোটি টাকা। তবে আগের বছর ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ৯২৮ কোটি টাকা।

বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে ১৩৫ কোটি টাকা। কারণ ২০২২ সালে ব্যাংকটির মোট পরিচালন মুনাফা ছিল দুই হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা। তবে এবছর ২০২৩ সালে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৭৮১ কোটি টাকায়। ২০২৩ সালে ৪৫৫ কোটি টাকার পরিচালন মুনাফা অর্জন করেছে ইউনিয়ন ব্যাংক। আগের বছর ব্যাংকটির মুনাফ হয়েছিল ৪১৫ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের লাভ হয়েছে ৬০০ কোটি টাকা। কিন্তু এক বছর আগে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ৫২০ কোটি টাকা। একই সমেয় মেঘনা ব্যাংকের পরিচালর মুনাফা ৭৫ কোটি থেকে ১৬৫ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।

এছাড়া বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ৭৪৯ কোটি, পূবালী ব্যাংক এক হাজার ৭৫৬ কোটি, বিডিবিএল ২৫ কোটি ও মধুমতি ব্যাংক ২২২ কোটি টাকার পরিচালন মুনাফা অর্জন করেছে ২০২৩ সালে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, সব ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে বিষয়টা এরকম নয়। কেননা ২০২১ সালে দেশে করোনার ভয়াবহতা বিরাজ করেছে। এ অবস্থায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সহায়তায় বেশকিছু ছাড় দিয়েছে। ২০১৯ সালে পরিশোধ না করলেও কোন ঋণই খেলাপী করা হয়নি। ২০২০ সালে ২৫ শতাংশ পরিশোধে খেলাপী না করার নির্দেশ দেয়া হয়। এসব ছাড়ের ফলে অধিকাংশ ব্যাংকই প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণ করেনি। এখন সেই সুবিধা না থাকলেও গত কয়েকবছরে অনেক খেলাপি ঋণ বিশেষ সুবিধায় নিয়মিত করা হয়েছে। যার কারণে প্রভিশন রাখতে হয়নি। তাছাড়া এবছর ঋণের সর্বোচ্চ সীমা উঠিয়ি দিয়েছে বাংলাদেশে ব্যাংক। বৈদেশিক মু্দ্রার সংকটের মধ্যেও যাদের হাতে ডলার ছিল তারা ভালোই ব্যবসা করেছে। তাই ওইসব ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে। তবে যারা ডলার সংকটে তার খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। কারণ তারা এখনও অন্য ব্যাংকের কাছে ডলারের জন্য অনুরোধ করছে।

প্রসঙ্গত, পরিচালন মুনাফা বৃদ্ধি সবচেয়ে বড় অন্তরায় খেলাপি ঋণ। কারণ কোনো ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পেলে প্রভিশন বেশি রাখতে হয়। তাই ব্যবসা বাড়লেও খেলাপিতে খেয়ে ফেলে সেই মুনাফা। বিশ্লেষকদের মতে, ব্যাংকগুলোর বর্তমান দুরবস্থার পেছনে মূলত ব্যবস্থাপনার ত্রুটি এবং দুর্নীতি-অনিয়ম দায়ী। ব্যাংকিং খাতে জালিয়াতি ও দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ খাতের সংকট নিরসনে প্রশাসনিক ও আইনি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বটে, তবে পরিস্থিতি যে পর্যায়ে নেমেছে, তাতে সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সাধারণ পদক্ষেপে কাজ হবে বলে মনে হয় না। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য প্রথমত রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংকের অনুমোদন এবং পরিচালনা পর্ষদ গঠন বন্ধ করতে হবে। এ খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে হলে অনিয়ম দেখাশোনার জন্য একটি শক্তিশালী কমিশন গঠন এবং অর্থঋণ আদালতকে আরও শক্তিশালী করা দরকার। প্রয়োজনে আর্থিক অনিয়মের বিচারের জন্য বিচার ট্রাইব্যুনালে দ্রুত আপিল নিষ্পত্তির ব্যবস্থা নিতে হবে। সর্বোপরি প্রশাসনিক ও আইনি সংস্কারের মাধ্যমে এ খাতকে সুশৃঙ্খল কাঠামোর মধ্যে আনা হলে আমানতকারীদের স্বার্থরক্ষার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতির জন্য তা সুফল বয়ে আনবে বলে আশা করা যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১৫ লাখ ৬৫ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা। এটি মোট বিতরণ ঋণের ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এটি গত বছরের (সেপ্টেম্বর-২০২২) একই সময়ের চেয়ে ২১ হাজার কোটি টাকা বেশি। গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা