প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৯:৫৩ পিএম
ফাইল ফটো
করোনার সময়ে ব্যাংক থেকে চাকুরিচ্যুত হয়ে এখনও দারে দারে ঘুরছেন শত শত ব্যাংকার। উপায় না পেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন তারা। মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) ব্যাংকারদের পক্ষে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি চাকরি ফিরে পেতে গভর্নরকে চিঠি দিয়েছেন ব্যাংকাররা।
এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে চাকরিহারা ব্যাংকাররা জানান, ‘করোনা মহামারীর ব্যাপকতা এবং লকডাউনের মতো বিশ্বব্যাপী দুর্যোগের সময়ে কর্মী ছাঁটাই বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনা থাকা স্বত্ত্বেও আমরা বহু সংখ্যক ব্যাংক কর্মকর্তা এখন অসহায়। কারণ তাদেরকে কোন কারন ছাড়াই বেশ কিছু ব্যাংক হঠাৎ চাকুরি হতে বলপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য এবং ছাঁটাই করে। আমরা সবাই করোনাকালীন সময়ে আকস্মিক এবং অন্যায়ভাবে চাকুরি হারিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়ি এবং সম্মানহানির শিকার হই।’
উল্লেখ্য যে, আমাদের অভিযোগ ও পত্র পত্রিকায় খবর প্রকাশের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন ভাবে তদন্তের পর বাংলাদেশ ব্যাংক সুনির্দিষ্ট ও প্রমাণিত অভিযোগ ছাড়া পদত্যাগে বাধ্য ও ছাঁটাইকৃত কর্মকর্তাদেরকে চাকুরিতে পুনর্বহালের জন্য সকল ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয়। তারপর ২ বছর সময় পার হয়ে গেলেও আমাদেরকে চাকুরিতে পুনর্বহাল করেনি ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা নিজ ব্যাংকের চাকুরিতে পুনর্বহালের জন্য আবেদনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংকে গভর্ণর বরাবর আবেদন সহ একাধিক মানব বন্ধন পালন করি। তাতেও প্রতিকার না পেয়ে গত বছরের শেষ দিকে আমরা মহামান্য হাইকোর্টে রীট আবেদন দাখিল করি।,
‘রীটের প্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট, আবেদনকারীদের (আমাদেরকে) কেন চাকুরিতে নিজ পদে পুনর্বহাল করা হবে না মর্মে সব ব্যাংকগুলোর প্রতি রুল জারি করেন। কয়েক মাস শুনানি শেষে সম্প্রতি মহামান্য হাইকোর্ট, রীটকারী ব্যাংক কর্মকর্তাদেরকে চাকুরিতে নিজ পদে পুনর্বহাল চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদনের নির্দেশ দেন এবং বাংলাদেশ ব্যাংককে রীটের বাদী আবেদনকারী কর্মকর্তাদের আবেদন বিবেচনা পুর্বক সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের চাকুরিতে পূনর্বহালের জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেন।,
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদত্যাগ বিষয়ে বিভিন্ন গনমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যাংক খাতের অভিভাবক হিসেবে আপনার ব্যক্তিগত উদ্যোগে পদত্যাগী এমডিদেরকে নিজ ব্যাংকের দায়িত্বে ফিরিয়ে অভূতপূর্ব নজির স্থাপন করেছেন। যা সর্বমহলে প্রসংশিত হয়েছে। কিন্তু, নজীরবিহীন করোনা মহামারীকালে চাকুরি হতে পদত্যাগে বাধ্য এবং ছাঁটাইকৃত বহুসংখ্যক ব্যাংক কর্মকর্তাগণ চাকুরিতে পুনর্বহাল চেয়ে নিজ ব্যাংকের এমডি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগসহ আপনার বরাবরে আবেদন দাখিলের পাশাপাশি অবৈধভাবে চাকুরিচ্যুতি এবং চাকুরিতে পুনর্বহালে ভূক্তভোগী কর্মকর্তাদের মানব বন্ধন সংক্রান্ত খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হলেও দীর্ঘদিন যাবৎ চাকুরি ফেরত না পেয়ে পরিবার পরিজনসহ অমানবিক ও মানবেতর জীবন যাপন করছি। তবে উল্লেখিত রীট পিটিশনের নির্দেশনার পর আমরা নতুন করে আশান্বিত হয়েছি যে, আপনার আন্তরিক উদ্যোগে এবার আমরা নিজ ব্যাংকের চাকুরিতে পুনর্বহাল হতে পারব, ইনশাআল্লাহ। এর মাধ্যমে ব্যাংক কর্মকর্তাদের চাকুরির নিরাপত্তা বিধান সহ ব্যাংক খাত শক্তিশালী করনে আপনার বলিষ্ঠ ভূমিকা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
উল্লেখ, ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ৯ আগস্ট পর্যন্ত বেসরকারি ছয় ব্যাংকের তিন হাজার ৩১৩ কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরি ছেড়েছেন। এর মধ্যে ‘স্বেচ্ছায়’ পদত্যাগ করেছেন তিন হাজার ৭০ জন। ১২ কর্মকর্তাকে ছাঁটাই, ২০১ কর্মকর্তাকে অপসারণ এবং ৩০ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে ২০২২ সালের ১৫ জুন করোনায় চাকরি হারানো ব্যাংকাররা রাজধানীর মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে মানববন্ধন করেন। এতে চাকরি হারানো অর্ধ শতাধিক কর্মী অংশ নেন। এ সময় তাঁরা চাকরি ফেরত চেয়ে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড নিয়ে মানববন্ধনে অংশ নেন।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা জানান, সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ ছাড়াই করোনাকালে কয়েক হাজার ব্যাংকারকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এমনকি গুরুতর অসুস্থ অবস্থায়ও কিছুসংখ্যক কর্মকর্তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। পরে বাংলাদেশ ব্যাংকে জোরপূর্বক পদত্যাগের বিষয়ে অভিযোগ জানানো হয়। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তেও কয়েকটি ব্যাংকের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।
এ অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে চাকরিচ্যুত ব্যাংকারদের চাকরিতে পুনর্বহালের আদেশ জারি করে। ওই নির্দেশনার পর চাকরিচ্যুত অনেক ব্যাংকার চাকরিতে পুনর্বহালের আবেদন করেন। কিন্তু ব্যাংকগুলো চাকরিচ্যুত কর্মীদের পুনর্বহালে কার্যকর তেমন কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না বলে দাবি তাদের।