প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ ২১:০১ পিএম
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৬:০৩ পিএম
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী। ছবি : সংগৃহীত
ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিশন অব সাইটস অব কনসায়েন্স হলো ঐতিহাসিক স্থান, জাদুঘর ও স্মৃতি সংরক্ষণ পদক্ষেপের একটি বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্ক। যা অতীতের সংগ্রামকে মানবাধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য বর্তমান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করে। অনুদান, নেটওয়ার্কিং ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে সাইটগুলোকে তাদের সম্প্রদায়ের সঙ্গে আরও ভালোভাবে আবদ্ধ হতে সহায়তা করে।
ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিশন অব সাইটস অব কনসায়েন্সের সদস্য বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিশন অব সাইটস অব কনসায়েন্সের সদস্যদের কাছে গাজায় যা হচ্ছে তা হলো একটি নৈতিক পরাজয় এবং একটি মানবিক বিপর্যয়। যা বিশ্বকে গভীর মেরুকরণ আর সহিংসতার নতুন চক্রে নিমজ্জিত করবে।
মাত্র ছয় সপ্তাহে গাজায় ১২ হাজারেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। যার মধ্যে ৫ হাজার শিশু রয়েছে। গুরুতরভাবে আহত হাজার হাজার মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা গ্রহণে অক্ষম এবং উদ্ধারের অপেক্ষায় ধ্বংসস্তূপের নিচে পড়ে আছে আরও অনেকে। ইসরায়েলের অবরোধ এবং হাসপাতালগুলোতে হামলার কারণে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। যার ফলে হাসপাতালে মারা যাচ্ছে রোগীরা এবং এদের মধ্যে অবুঝ শিশুরাও রয়েছে। একই সঙ্গে হাজার হাজার পরিবার মরিয়া হয়ে অপেক্ষা করছে তাদের নিখোঁজ, অপহৃত বা নিহত প্রিয়জনের খবর পাওয়ার আশায়।
জাতিসংঘ ও বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, এক মাসেরও অধিক সময় ধরে চলমান এই মানবিক বিপর্যয়ে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের পরিমাণ বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে বিশ্ব। এ বিষয়ে তারা অনেকের চোখ বন্ধ করে, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে ইসরায়েলের সহিংসতা বৃদ্ধিকে সমর্থন করাকে কারণ হিসেবে দায়ী মনে করে।
সংঘাত ও মৃত্যুকে স্বাভাবিক বানিয়ে ফেলা, সহানুভূতির অনুপস্থিতি ও নির্দিষ্ট কিছু জীবনকে অন্যদের চেয়ে বড় করে দেখা হলো সামাজিক মানবতা এবং ‘আর কখনও নয়’ প্রতিশ্রুতি রক্ষায় আমাদের ব্যর্থতা।
১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিশন অব সাইটস অব কনসায়েন্স (আইসিএসসি) বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের সংঘাত মোকাবিলা নিয়ে কাজের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষালাভ করেছে এক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক হলো :
১। সহিংসতা কখনোই শান্তি ও নিরাপত্তা বয়ে আনতে পারে না।
কাঠামোগত বা সক্রিয় যেমনই হোক না কেন, সহিংসতা কখনও শান্তি ও নিরাপত্তার সৃষ্টি বা পুনরুদ্ধার করে না। সহিংসতা কেবল আরও সহিংসতার জন্ম দেওয়ার পাশাপাশি অন্যের প্রতি সহানুভূতি ও সমবেদনা হ্রাস করে এবং যুদ্ধরত দলগুলোকে আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে বাধা দেয়।
আত্মরক্ষার নামে গাজার বেসামরিক জনসংখ্যার বিরুদ্ধে ইসরায়েলের চলমান আক্রমণ কেবল বেআইনিই নয়, বরং বিশ্বব্যাপী অস্থিতিশীলতায় অবদান রাখছে। একই সঙ্গে এটি সহিংসতার নতুন চক্রকে ইন্ধন জোগাচ্ছে, কেননা ইতোমধ্যেই আমরা পৃথিবীজুড়ে ক্রমবর্ধমান সংখ্যক আরব-বিরোধী, ইসলামোফোবিক ও ইহুদি-বিরোধী কর্মকাণ্ড দেখতে পাচ্ছি।
ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিশন অব সাইটস অব কনসায়েন্স আহ্বান জানায় :
১. একটি সম্পূর্ণ ও অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি।
২. গাজার জনগণের জন্য জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তার ব্যবস্থা।
৩. ইসরায়েলের কারাগারে নির্বিচারে আটক সব ফিলিস্তিনিদের মুক্তি।
৪. হামাসের হাতে জিম্মি ইসরায়েলিদের মুক্তি এবং
৫. ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি উভয়ের সমান অধিকারের জন্য।