আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দ্বিতীয় কিস্তির জন্য বাংলাদেশের প্রস্তাবটি মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) সংস্থাটির বোর্ড সভায় তোলা হচ্ছে। কিস্তির প্রায় ৬৮ কোটি ডলার অনুমোদিত হলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ফের সন্তোষজনক অবস্থায় ফিরবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ ডিসেম্বরের তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকে রিজার্ভের পরিমাণ ১৯ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। যদিও ঋণ পেতে আইএমএফ পরিমাণগত কর্মসক্ষমতার মানদণ্ড, রাজস্ব কর, সামাজিক খাতে সরকারের ব্যয়সহ বিভিন্ন বিষয়ে শর্ত জুড়ে দেয়। এ নিয়ে দফায় দফায় আইএমএফের সঙ্গে বৈঠকও হয়।
শর্তের ধরন সম্পর্কে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, কর জিডিপির অনুপাত দশমিক ৫ শতাংশ বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ, রিজার্ভের হিসাবায়ন, বাজারভিত্তিক বৈদেশিক মুদ্রার দর নির্ধারণ, ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাংকিং কার্যক্রমের ওপর নজরদারির কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা ইত্যাদি। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, এই ঋণ কর্মসূচিতে চলতি ডিসেম্বরের মধ্যে জ্বালানির দাম সমন্বয় করার কথা বলা হয়েছে। আইএমএফের ঋণ কর্মসূচি চলাকালে আগামী ২০২৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশকে বিভিন্ন ধরনের শর্ত পরিপালন করতে হবে। একইসঙ্গে সংস্কার কার্যক্রমও অব্যাহত রাখতে হবে। ঋণ ছাড়ের বিষয়ে সর্বশেষ গত ৪ থেকে ১৯ অক্টোবর আইএমএফের এশীয় প্যাসিফিক বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করে। এসব বৈঠকের পর আইএমএফের পক্ষ থেকে বিবৃতিতে বলা হয়, ঋণ কর্মসূচির আওতায় কাঠামোগত সংস্কারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সংস্কার করেছে। তবে এখনও চ্যালেঞ্জ আছে।
এর আগে আইএমএফের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় পেতে সংস্থাটি বাংলাদেশকে যেসব শর্ত দিয়েছিলো তার মধ্যে দুটি গুরুত্বপূর্ণ শর্তই বাংলাদেশ পূরণ করতে পারেনি। ফলে দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ নির্ধারিত সময়ে না পেলে দেশের অর্থনৈতিক সংকট আরও জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে। যদিও সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক আশাবাদী যে যেসব কারণে দুটি খাতে শর্ত পূরণ হয়নি সেগুলো পর্যালোচনার পর আইএমএফের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ পেতে সমস্যা হবে না। গুরুত্বপূর্ণ দুটি শর্ত ছিলো- সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ অন্তত ২৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলারের নেট রিজার্ভ থাকা এবং অর্থ বছরের প্রথম তিন মাসে রাজস্ব আদায় অন্তত ৬১ হাজার কোটি টাকা হতে হবে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজেই স্বীকার করেছে যে এসব বিষয়ে প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ।
উল্লেখ্য, গত বছরের শেষ দিকে আইএমএফের দ্বারস্থ হয়েছিল সরকার। যার প্রেক্ষিতে চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণপ্রস্তাব অনুমোদন করে। সাত কিস্তিতে ৪২ মাসে এ ঋণ পাওয়ার কথা রয়েছে। প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার ছাড়ের সময় কোনো শর্ত ছিল না। তবে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ডলার ঋণ ছাড়ের আগে বাংলাদেশকে দেওয়া হয় ৩৮টি শর্ত।