× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

রাতারাতি বাড়ল পেঁয়াজের ঝাঁজ

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ২২:৪২ পিএম

রাতারাতি বাড়ল পেঁয়াজের ঝাঁজ

ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের সংবাদ প্রকাশের পর কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই রাতারাতি বেড়ে গেছে পেঁয়াজের দাম। মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে পণ্যটির দাম দেশের কোনো কোনো স্থানে দ্বিগুণ হয়েছে। অথচ এখনও বাজারে পেঁয়াজের সংকট দেখা দেয়নি। নতুন কোনো চুক্তির ভিত্তিতে ভারত বা অন্য কোনো রাষ্ট্র থেকে তা আমদানিও করা হয়নি। 

পেঁয়াজের বাজার ব্যবস্থার এমন আচরণকে শুধু ডাকাতি নয়, বরং মহাডাকাতি ও সাগরচুরির সঙ্গে তুলনা করেছেন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ও সাবেক বাণিজ্য সচিব মো. গোলাম রহমান। শনিবার (৯ ডিসেম্বর) প্রতিদিনের বাংলাদেশের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ভারত বা অন্য কোনো দেশ থেকে এখনও পেঁয়াজের নতুন কোনো চালান দেশে আসেনি। পুরোনো যেসব চুক্তি করা আছে, সেগুলো অনুযায়ী পেঁয়াজ আমদানিও এখন শেষ হয়নি। তার মানে নতুন চুক্তি হলে এবং সে অনুযায়ী আমদানি হলেই কেবল দাম বাড়তে পারে। তা ছাড়া ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের পাশাপাশি এ কথাও ঘোষণা করেছে যে, সরকারি পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা করে রপ্তানি অনুমোদনের সুযোগ রয়েছে। এরপরও আমদানিকারক থেকে শুরু করে খুচরা ব্যবসায়ীরা পর্যন্ত পণ্যটির দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে। এটি বাজার ব্যবস্থাপনায় শুধু ডাকাতি নয়, বরং মহাডাকাতি; সাগর চুরি।’ ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফাপ্রবণতার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ক্যাব সভাপতি। তিনি বলেছেন, ‘সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয় এই দায় এড়াতে পারে না। এটি কেনা-বেচার সঙ্গে যুক্ত সব পক্ষেরই উচিত ন্যায্য দাম নেওয়া।’

গত মে মাসে পেঁয়াজ আমদানির জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছিল জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। প্রতিষ্ঠানটি মহাপরিচালক এ.এইচ.এম সফিকুজ্জামানের কাছে এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা গত মে মাসে পেঁয়াজ আমদানির জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলাম। ওই প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে হয়তো এ পরিস্থিতি হতো না। শনিবার (গতকাল) রাতে আমার বাসায় ২৫০ টাকা কেজিতে এক কেজি পেঁয়াজ কিনে আনা হয়েছে।’ 

তালিকার সঙ্গে মিল নেই বাজারের প্রকৃত চিত্রের 

ইতোমধ্যে ভোক্তা অধিদপ্তর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ৫৭টি অভিযান চালিয়ে ১৩৩টি প্রতিষ্ঠানকে ৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। অধিদপ্তর দেশের বিভিন্ন জেলায় কী দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে, তার একটি তালিকা দিয়েছে। সেখানে সর্বোচ্চ দাম দেখানো হয়েছে সিলেটে কেজিপ্রতি ১৯০ টাকা আর সর্বনিম্ন দাম কুষ্টিয়াতে ১৩০ টাকা। তবে তালিকার এই দামের সঙ্গে বাজারের প্রকৃত চিত্রের কোনো মিল নেই। 

এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘আমাদের লোকবলের অভাব আছে। ৮৭ জন জনশক্তি দিয়ে সারা দেশে অভিযান চালাতে হচ্ছে। আমাদের কর্মকর্তারা আড়তে গেলে বিক্রেতারা দাম কম নেয়। কিংবা আমাদের কম দাম দেখানো হয়।’ 

গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজার, শ্যামবাজার, বনানী কাঁচা বাজার, বাড্ডা ও জোয়ারসাহারা বাজারে আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ১৭০-১৮০ টাকায়; শুক্রবার যা ছিল ১১০-১২০ টাকা। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকায়, শুক্রবার যা ছিল ১৩০-১৪০ টাকা।

বনানীর মুদি দোকানি মো. জিয়াউর রহমান বলেন, গত শুক্রবার রাত ৯টায় আড়ত থেকে ভারতীয় পেঁয়াজ কিনেছি ১১০-১২০ টাকা কেজিতে, দেশি পেঁয়াজ ১৩০ টাকা কেজিতে। সেই ভারতীয় পেঁয়াজ রাত ১১টার সময় আড়ত থেকে কিনতে হয়েছে ১৭০ টাকায়, আর দেশি পেঁয়াজ কিনতে হয়েছে ২০০-২০৫ টাকায়। 

পেঁয়াজের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে। প্রতিদিনের বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, এক দিনের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম ১২০ বেড়ে ২৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। শুক্রবার ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১০০-১১০ টাকায়। সেটি গতকাল বিক্রি হয়েছে ২০০-২১০ টাকায়।

সিলেট প্রতিনিধি জানান, এক দিনের ব্যবধানে ভারতীয় পেঁয়াজ ৯০ টাকা থেকে বেড়ে ২০০ টাকায় ও দেশি পেঁয়াজ ১২০ থেকে বেড়ে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

যা বলছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়

পেঁয়াজের দামসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার তদারকির দায়িত্ব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। গতকাল একটি অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্র্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, পেঁয়াজ আমদানি নিয়ে দিল্লির সঙ্গে যোগাযোগ চলছে। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় দেশের বাজারে তাৎক্ষণিকভাবে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে বলে মনে করছেন বাণিজ্য সচিব। তিনি বলেন, প্রতিবছর বাংলাদেশকে সাত লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে। তবে দুই দেশের সরকারের মধ্যে দরকষাকষির মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানি করা যেতে পারে। ইতোমধ্যে আমরা দিল্লির সঙ্গে কথা বলেছি। 

বাণিজ্য সচিব বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আলু, ডিম, মুরগি আমদানি বন্ধ আছে। আমদানি বন্ধ থাকলে এবং উৎপাদন কমে গেলে বাজারে সরবরাহ বিঘ্নিত হয়। তখন এসব খাতের ব্যবসায়ীরা সুবিধা নিতে পারেন। আবার এসব পণ্য আমদানি বন্ধ করার উদ্দেশ্য হলো, দেশে উৎপাদন বাড়িয়ে স্বয়ংসম্পন্ন হওয়া।’ তিনি বলেন, ‘বাইরে নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞার কথা শোনা যায়। এটা নিয়ে বেশি কথা বলব না। আমরা নানা ধরনের সংস্কার করছি।’  

অনুষ্ঠানে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম কেন বাড়ল, বাণিজ্য সচিব তা ভালোভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। কিন্তু সাধারণ মানুষ তো এসব ব্যাখ্যা বুঝবে না। তাদের তো বাজারে গিয়ে বেশি দামে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে।’        

পেঁয়াজ একটি কৃষিপণ্য। তাই এর সরবরাহ এবং বিপণনের সঙ্গে কৃষি মন্ত্রণালয়েরও সম্পর্ক রয়েছে। এ প্রসঙ্গে কথা বলার জন্য কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

প্রতিদিনের বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা প্রতিবেদকও পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির সংবাদ জানিয়েছেন। সাতক্ষীরায় গত শুক্রবার ভারতীয় পেঁয়াজ ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও গতকাল শনিবার তা ১৭০-১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া বান্দরবান, বরিশাল, ফেনী, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, বরগুনা, যশোর, ঠাকুরগাঁও, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বাগেরহাট, দিনাজপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়ায় দেশি পেঁয়াজ ২২০-২৩০ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ ২০০-২১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা