× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ঋণ পরিশোধ না করা কালচার হয়ে দাঁড়াচ্ছে: গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ২২:১৭ পিএম

বিআইডিএস এর তিন দিনের সম্মেলনের শেষ অধিবেশন। প্রবা ফটো

বিআইডিএস এর তিন দিনের সম্মেলনের শেষ অধিবেশন। প্রবা ফটো

ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করা লাগবে না, এমন চিন্তা একটি কালচারে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। তিনি বলেন, ব্যাংকের ঋণখেলাপি সমস্যা এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শনিবার (৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে বিআইডিএস এর তিন দিনের সম্মেলনের শেষ অধিবেশনে এসব কথা বলেন তিনি।

সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গভর্নর বলেন, ব্যাংকগুলোতে সুশাসন এবং অপর্যাপ্ত সম্পদও একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে ঝুঁকি নিরসনে ঝামেলা হচ্ছে। ঋণ খেলাপি কমানোর জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরি হয়েছে জানিয়ে গভর্নর বলেন, এটা নিয়ন্ত্রণে সামনে থেকে আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ শুরু করব। কারা ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি তা চিহ্নিত করার  চেষ্টা করছি আমরা।

ব্যাংক খাতে এই মুহূর্তে তিনটি সমস্যা আছে। এগুলো হলো - সুশাসনের অভাব, খেলাপি ঋণ এবং ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এভাবেই ব্যাংক খাতের সমস্যা চিহ্নিত করেছে। গতকাল শনিবার বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত তিন দিনব্যাপী সম্মেলনের শেষ দিনের এক অধিবেশনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এসব কথা বলেন। অর্থনীতির নীতি চ্যালেঞ্জ নিয়ে এই অধিবেশন হয়। রাজধানীর এক হোটেলে এই সম্মেলন হয়। এই অধিবেশনে সাবেক মন্ত্রী, আমলা, অর্থনীতিবিদ, গবেষকেরা অংশ নেন।  

খেলাপি ঋণ কেন বাড়ে - এর ব্যাখ্যা দিয়ে বাংলাদেশ গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার জানান, মূলত চার কারণে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোতে সুশাসনের অভাবে অনেক ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। এ ছাড়া বহু পুরনো খেলাপি ঋণ আছে। বছরের পর বছর এসব ঋণ খেলাপি হয়ে আছে। অন্যদিকে ঋণ খেলাপি হওয়ার সংস্কৃতিও আছে। তাদের মনোভাব এমন, ঋণ নিয়ে তা ফেরত না দিলেও চলবে। সর্বশেষ কারণ হলো, কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার ফলে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। খেলাপি ঋণ কমাতে আমরা পরিকল্পনা করছি।

সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, বর্তমান মূল্যস্ফীতির কারণ উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া। চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে এই মূল্যস্ফীতি হয়নি। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হলেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা উচিত।                                                      

অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার জানান, আগামী জুন মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ছয় শতাংশ নেমে আসবে। ব্যাংক খাত থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে প্রতিদিন ৭০০-৮০০ কোটি টাকা ঢুকছে। ঋণ আরো খরুচে করা হয়েছে। এতে গত মাসে মূল্যস্ফীতি কমেছে।                             

এদিকে সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, যেহেতু অর্থনীতি এখন কিছুটা অস্থিতিশীলতার মধ্যে আছে। তাই বিদেশি ঋণ নেওয়ার সময় কিছুটা সতর্ক থাকতে হবে। বিদেশ থেকে বেসরকারি খাতের ঋণ গ্রহণে কিছু সময়ের জন্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সুপারিশ করেন তিনি।                                                     

অধিবেশনের সভাপতি ও বিআইডিএস মহাপরিচালক বিনায়ক সেন বলেন, আশির দশকে আমরা বলতাম, ব্যাংকের পরিচালক হবেন এই খাতের অভিজ্ঞরা। রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংকের পরিচালক হবেন না। কিন্তু এখন শুনি, ৯৫ বছর বয়সী একজন নারীকে ব্যাংকের পরিচালক বানানো হয়েছে। এটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক।

পেঁয়াজ আমদানি নিয়ে দিল্লির সঙ্গে যোগাযোগ : ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় দেশের বাজারে তাৎক্ষণিকভাবে পেয়াজের দাম বেড়েছে বলে মনে করেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ। তিনি বলেন, প্রতি বছর বাংলাদেশকে সাত লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে। তবে দুই দেশের সরকারের মধ্যে দর কষাকষির মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানি করা যেতে পারে। ইতিমধ্যে আমরা দিল্লির সঙ্গে কথা বলেছি।

তিনি আরো বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আলু, ডিম, মুরগি আমদানি বন্ধ আছে। আমদানি বন্ধ থাকলে এবং উৎপাদন কমে গেলে বাজারে সরবরাহ বিঘ্নিত হয়। তখন এসব খাতের ব্যবসায়ীরা সুবিধা নিতেই পারেন। আবার এসব পণ্য আমদানি বন্ধ করার উদ্দেশ্য হলো, দেশে উৎপাদন বাড়িয়ে স্বয়ংসম্পন্ন হওয়া। তিনি আরো বলেন, বাইরে নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞার কথা শোনা যায়। এটা নিয়ে বেশি কথা বলব না। আমরা নানা ধরনের সংস্কার করছি।                                  

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, পেঁয়াজের দাম কেন বাড়লো, তো ভালোভাবে ব্যাখ্যা করেছেন বাণিজ্য সচিব। কিন্তু সাধারণ মানুষ তো বাজারে গিয়ে বেশি দামে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। মানুষ তো এসব ব্যাখ্যা বুঝবে না। অন্যদিকে ব্যাংকে খেলাপি ঋণ কিভাবে কমানো হবে, সেই বিষয়ে সমাধান কি জানতে চাই।                                                                      

নির্বাচনের পর বড় সংস্কার চাই : নির্বাচনের পর শক্তিশালী অর্থনৈতিক সংস্কার করার তাগিদ দেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। তার মতে, আর্থিক খাতের প্রায় সব জায়গায় ব্যবস্থাপনার সমস্যা আছে। এজন্য অর্থনীতি ভুগছে। নির্বাচনের পর সংস্কারের জন্য ক্ষমতাসীনদের একটি শক্তিশালী দল করা উচিত। ওই দলকে ক্ষমতা দেওয়ার পাশাপাশি জোর করে সংস্কারের মনোভাব থাকতে হবে। এছাড়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) যেসব সংস্কারের পরামর্শ  দিয়েছে, সেসব সংস্কার নিজেদের প্রয়োজনেই করা উচিত। তার মতে, মুদ্রা বিনিময় হার, সুদের হার, মূল্যস্ফীতি - এসব ঠিক করা জরুরি। এটি তাৎক্ষণিক সংস্কার। আর মধ্যমেয়াদে রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে।

ইকনোমিক রিসার্চ গ্রুপের (ইআরজি) নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদ জহির বলেন, সংস্কারের জন্য প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে হবে। একটি ভাবাদর্শের ভিত্তিতে এই সংস্কার হওয়া উচিত। তিনি আরো বলেন, সংসদে দ্বৈত নাগরিক বসে থাকবেন, তিনি ঋণ পেতে আগ্রহী হবেন। এই সহজে দেশের বাইরে চলে যাবে।                               

অনুষ্ঠানের অন্যতম বক্তা ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হাবিবুর রহমান। কিন্তু তিনি আর্থিক খাতের সমস্যা নিয়ে কোনো কথা বলেননি। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংক কিভাবে ছোটো-বড় বিনিয়োগকারীদের সহায়তা করতে যেসব তহবিল আছে, এর বিবরণ দেন। তার বক্তব্যে উঠে আসে আর্থিক খাতের অন্তর্ভুক্তি, সবুজ অর্থায়ন এসব বিষয়।                                                          

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ে (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় নির্বাচনের পরে রাজনৈতিক সদিচ্ছা লাগবে। কিন্তু এ বিষয়ে রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছ থেকে কোনো পরিকল্পনা দেখছি না। তাহলে কিভাবে সংস্কার কিভাবে হবে?

তিনি আরও বলেন, খেলাপি ঋণ কমছে না, বরং বাড়ছে। কোনো উন্নতি দেখছি না। আবার অনেক সময় নিয়মের মধ্যেই ঋণ খেলাপি হচ্ছে, তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু করার থাকে না।  তিনি আরো বলেন, রাজস্ব খাতের সংস্কারে বাধা আসে অনেক সময়ে রাজস্ব প্রশাসন থেকেই। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারপারসন মাসুদা ইয়াসমিন মনে করেন, বর্তমান সংকট মোকাবিলায় নীতি নির্ধারণে সরকারি -বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণেএকটি স্বতন্দ্র ও স্বাধীন কমিটি গঠন করা উচিত। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কানাডার কনকর্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সৈয়দ মইনুল আহসান, ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিস রিসার্চ, বাংলাদেশে (আইসিডিআরবি ) নির্বাহী পরিচালক তাহমিদ আহমেদ প্রমুখ।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা