প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৯:৪৫ পিএম
আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ২০:০৪ পিএম
ফাইল ফটো
সঞ্চয়পত্র কেনার চেয়ে ভাঙানোর প্রবণতা বেড়েছে। এর ফলে গত দুই মাস নিট বিক্রি (বিনিয়োগ) ঋণাত্মক ধারায় রয়েছে। সর্বশেষ অক্টোবর মাসে নিট বিনিয়োগ (বিক্রি) ঋণাত্মক হয়েছে ১ হাজার কোটি টাকারও বেশি। আগের মাসেও নিট বিক্রি ঋণাত্মক ধারায় ছিল। যদিও অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ভাঙানোর প্রবণতা কম থাকায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিনিয়োগ বেশ বেড়েছিল। সবমিলে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) নিট বিক্রি ঋণাত্মক হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়েও নিট বিক্রি ঋণাত্মক ধারায় ছিল, তবে ওই সময় এর পরিমাণ ছিল মাত্র ৬৩২ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টরা জানান, পণ্য ও সেবার দামে লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে জীবনযাপনের খরচ বেড়ে গেছে মানুষের, যার প্রভাব পড়ে সঞ্চয়ের ওপরও। বিশেষ করে নির্দিষ্ট আয়ে যাদের সংসার চলে, তাদের অনেকে এখনও সঞ্চয়পত্র ভেঙে খাচ্ছেন। এ ছাড়া নানা কড়াকড়ির কারণেও এ সঞ্চয়পত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন অনেকে। ফলে এ খাতে আশানুরূপ বিক্রি বাড়ছে না।
নিম্ন মধ্যবিত্ত, সীমিত আয়ের মানুষ, মহিলা, প্রতিবন্ধী ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সঞ্চয়পত্রের বিভিন্ন প্রকল্প চালু রয়েছে। সামাজিক সুরক্ষার কথা বিবেচনায় নিয়ে সঞ্চয়পত্রে তুলনামূলক বেশি মুনাফা (সুদ) দেয় সরকার। তবে কড়াকড়িসহ বিভিন্ন কারণে গত অর্থবছরের ১২ মাসের মধ্যে ৭ মাসই সঞ্চয়পত্রের বিক্রিতে ধস নামে। তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে নিট বিক্রি বেশ বেড়েছিল। এর কারণ এ সময়ে যে পরিমাণ সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল, তার চেয়ে ভাঙানোর পরিমাণ ছিল অনেক কম। আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্র থেকে ভাঙানো বাবদ (নির্দিস্ট মেয়াদ শেষে বা মেয়াদান্তের আগে) আসল পরিশোধের পর যা অবশিষ্ট থাকে তাকে নিট বিক্রি বলা হয়। আর নিট বিক্রিকে সরকারের ধার বা ঋণ হিসেবে গণ্য করা হয়।
গত অর্থবছরের সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। তবে বিক্রি কমতে থাকায় সংশোধিত বাজেটে এই লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ধরা হয় ৩২ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু অর্থবছর শেষে নিট বিক্রি দাঁড়ায় ঋণাত্মক প্রায় ৩ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত অর্থবছরের পুরো সময়ে সঞ্চয়পত্রের মোট বিক্রি হয় ৮০ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা। একই সময়ে সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর পরিমাণ ছিল ৮৪ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। এর মানে পুরো অর্থবছরে এই খাত থেকে সরকার এক টাকারও ঋণ পায়নি। মূলত গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে সঞ্চয়পত্র বিক্রির চেয়ে বেশি ভাঙানোর প্রবণতা বাড়তে থাকে।
২০২১-২২ অর্থবছরেও সঞ্চয়পত্র থেকে তুলনামূলক কম ঋণ পেয়েছিল সরকার। পুরো অর্থবছরে ৩২ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে নিট ঋণ আসে ১৯ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা। অথচ করোনার পরও ২০২০-২১ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের নিট বিনিয়োগ হয়েছিল প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা। এটি তার আগের অর্থবছরে ছিল মাত্র ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা।