প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৬:২৮ পিএম
প্রবা ফটো
দেশের তৈরি পোশাক খাতে সুবাতাস পরিলক্ষিত হয়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই–সেপ্টেম্বরে তৈরি পোশাক খাতে মোট রপ্তানির প্রায় ৭১ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে এ খাতে মোট রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল সাড়ে ৫১ শতাংশ। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে রপ্তানি আয় বেশি বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গবেষণা বিভাগ এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, চলতি ২০২৩–২৪ অর্থবছরের জুলাই–সেপ্টেম্বরে পোশাক খাতের প্রকৃত রপ্তানি বা মূল্য সংযোজন ছিল ৮২২ কোটি মার্কিন ডলারের। পোশাকের মোট রপ্তানি আয় থেকে কাঁচামাল আমদানি বাবদ খরচ বাদ দিয়ে প্রকৃত আয়ের এ হিসাব করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জুলাই–সেপ্টেম্বরে পোশাক রপ্তানি বাবদ মোট আয় ছিল ১ হাজার ১৬২ কোটি ডলার। তার বিপরীতে আমদানির পরিমাণ ছিল মাত্র ৩৩৯ কোটি ডলার। তাতে এ খাতের মোট রপ্তানি আয় দাঁড়ায় ৮২২ কোটি ডলারে, যা এ খাতের মোট আয়ের প্রায় ৭১ শতাংশ। অথচ ২০২২–২৩ অর্থবছরের একই সময়ে (জুলাই–সেপ্টেম্বর) ১ হাজার ২৭ কোটি ডলারের রপ্তানি আয়ের বিপরীতে কাঁচামাল আমদানি বাবদ ব্যয় ছিল ৪৯৮ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে এ খাতে প্রকৃত রপ্তানি আয় ছিল ৫২৯ কোটি ডলার, যা মোট আয়ের সাড়ে ৫১ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, চলতি বছরের শুরু থেকে পোশাক খাতের প্রকৃত রপ্তানি হঠাৎ করে বেড়ে ৭০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। বছরের প্রথম প্রান্তিকে মোট পোশাক রপ্তানি আয়ের ৭১ শতাংশই ছিল প্রকৃত আয়। এপ্রিল–জুন প্রান্তিকে তা বেড়ে হয় সাড়ে ৭১ শতাংশ।
এ বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানির বিপরীতে আমদানি খরচ কমার কয়েকটি কারণ হতে পারে । প্রথমত- পণ্যের চাহিদা কম থাকায় আমদানিও কমতে পারে। দ্বিতীয়ত- বিশ্ববাজারে পোশাকের কাঁচামালের দাম কিছুটা কমেছে তাই এ বাবদ খরচ কমে গেছে। তৃতীয় কারণ - ডলার–সংকটের কারণে আমদানি কম হয়েছে। যেহেতু পোশাক খাতে আমদানি করা কাঁচামাল এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্যবহার করা যায়, তাই এ সময় রপ্তানিতে খুব বেশি সমস্যা হয়নি।
এদিকে ওভেন পোশাক রপ্তানি করে যে আয় হয় তার প্রায় ৬০ শতাংশ কাঁচামাল আমদানির পেছনে ব্যয় হয়ে যায়। আর নিট পোশাকের ক্ষেত্রে রপ্তানি আয়ের ১৫ শতাংশের মতো খরচ হয় কাঁচামাল আমদানিতে। এ কারণে দেখা যাচ্ছে, কয়েক বছর ধরে ওভেনের তুলনায় নিট পোশাক রপ্তানিতে ভালো করছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জুলাই–সেপ্টেম্বরে পোশাক খাতের ১ হাজার ১৬২ কোটি ডলারের রপ্তানির মধ্যে নিট পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৬৭৬ কোটি ডলার। আর একই সময়ে ওভেন পোশাকের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪৮৫ কোটি ডলার। চলতি বছরের জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে পোশাক রপ্তানি আয়ের প্রায় সাড়ে ৪৯ শতাংশই ছিল নিট পোশাকের, আর ওভেনের সাড়ে ৩৫ শতাংশ।
গত ২০১৯–২০ অর্থবছরেও নিট এবং ওভেন পোশাকের রপ্তানি ছিল প্রায় সমান সমান। ২০২০–২১ অর্থবছর থেকে ওভেনকে ছাড়িয়ে যায় নিট পোশাকের রপ্তানি। এরপর প্রতি অর্থবছরই নিট পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে। সর্বশেষ ২০২২–২৩ অর্থবছরে পোশাক খাতের রপ্তানি আয়ের প্রায় সাড়ে ৪৬ শতাংশ ছিল নিট খাতের আর ওভেন খাতের ছিল সোয়া ৩৮ শতাংশ।
রপ্তানিকারকেরা বলছেন, করোনার পর থেকে বিশ্ববাজারে নিট পোশাকের চাহিদা অনেক বেড়েছে। এমনকি করোনাকালেও নিট পোশাকের চাহিদা ছিল অনেক বেশি। কারণ, করোনা সংক্রমণের প্রথম ঢেউয়ের সময় দেশে দেশে লকডাউন জারি করা হয়। স্কুল, কলেজ, অফিস, আদালত, ভ্রমণ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ঘরের বাইরে পরার পোশাকের চাহিদা ব্যাপকভাবে কমে যায়। বিক্রি না থাকায় বিদেশি ক্রেতারাও ক্রয়াদেশ কমিয়ে দেন। অন্যদিকে ঘরে পরার নিট পোশাকের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় রপ্তানিও বাড়তে থাকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, গত জুলাই–সেপ্টেম্বরে দেশের তৈরি পোশাকের মোট রপ্তানি আয়ের ৭০ শতাংশই এসেছে মাত্র নয়টি দেশ থেকে। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর রয়েছে যথাক্রমে জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, স্পেন, ইতালি, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস ও কানাডা। এ সময়ে এ নয়টি দেশ থেকে পোশাক রপ্তানি বাবদ আয় হয়েছে ৮১১ কোটি ডলার। উল্লিখিত ৯ দেশের বাইরের দেশগুলো থেকে পোশাক রপ্তানি বাবদ আয় ছিল ৩৫২ কোটি ডলার।