বাজারদর
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:১৩ এএম
মুরগি ও গরুর মাংস। ছবি কোলাজ
বৃহস্পতিবার, দুপুর ২টা। রাজধানীর শুক্রাবাদ বাজারে ‘গরুর মাংস ৬০০ টাকা, ৬০০ টাকা’ বলে দাম হাঁকাচ্ছিলেন বিক্রেতারা। তাদের হাঁকডাকে সরগরম হয়ে উঠছিল দুপুরের নীরব বাজার। অথচ সপ্তাহ খানেক আগেও গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে। অর্থাৎ এ বাজারে তিন দিনের ব্যবধানে গরুর মাংসের দাম কমেছে ২০০ টাকা। শুধু শুক্রাবাদ নয়, গতকাল বৃহস্পতিবার কারওয়ান বাজার, মালিবাগ, রামপুরা, জোয়ারসাহারা ও গুলশানের কালাচাঁদপুর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি বাজারেই কমেছে গরুর মাংসের দাম।
বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মোর্তুজা জানালেন, ছয় মাসের ব্যবধানে গরুর দাম কমেছে ২৫ শতাংশ। দেশে গরুর উত্পাদন ভালো। তবে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে আসায় চাহিদা অনেক কমে গিয়েছিল।
শুক্রাবাদ বাজারের সততা মাংস বিতানের কর্ণধার মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানালেন, প্রতিটি গরুর দাম কমেছে ৩-৪ হাজার টাকা। তাই মাংসের দামও কিছুটা কমেছে। তবে বিক্রি করতে আমাদের ভিন্নপথ নিতে হয়েছে। তিনি বলেন, সলিড মাংস আমরা বিক্রি করছি ৯০০ টাকায়। তবে হাড্ডিসহ মাংস বিক্রি করে সাড়ে সাতশ টাকা কেজি দরে। আর মাংস, হাড্ডি ও চর্বিসহ ভাগা (বণ্টন) মাংস বিক্রি করছি কেজিপ্রতি ৬০০ টাকায়।
জনপ্রিয় গোস্ত বিতানের বিক্রেতা আলী হোসেন বলেন, ৩-৪ দিন ধরে শুধু মাংস বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকা কেজিতে, হাড্ডিসহ ৭০০ আর চর্বি, মাংস ও হাড্ডিসহ ৬০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হচ্ছে। কাস্টমার যেভাবে খাইতে চায় আমরা সেভাবে দিচ্ছি।
শুক্রাবাদ, মালিবাগ, রামপুরা বাজারে গরুর মাংস ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও কারওয়ান বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায়। দাম কমেছে বলে দোকানগুলোতে বেড়েছে ক্রেতাদের ভিড়।
কারওয়ান বাজারের মাংস বিক্রেতা আব্দুল কুদ্দুস বলেন, গরুর মাংস ৭০০-৭৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। গত বুধবার সরকারি লোকজন এসে জোর করে দর বেঁধে দিয়ে গেছে ৬০০ টাকা। তবে আজ (বৃহস্পতিবার) তা বিক্রি হয় ৭০০-৭৫০ টাকায়। একই বাজারের শাকিল হোসেন বলেন, ৭২০ টাকা কেজি দরে গরু কিনে পরিস্থিতি বুঝে ৭০০-৭৫০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। বাইরের দোকানগুলোতে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমরা দাম না কমালে বাজার হারাব।
জোয়ারসাহারা ও গুলশানের কালাচাঁদপুর বাজারে গরুর মাংস কেজি ৭০০ থেকে ৭২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এখানকার ব্যবসায়ীরা জানান, ৬০০ টাকায় যেসব মাংস বিক্রি হচ্ছে, সেগুলোর সঙ্গে চর্বি আর মাথার মাংসও রয়েছে। ৬০০ টাকা কেজি ধরে ব্যবসায়ীরা বাজার থেকে গরুই কিনে আনতে পারে না।
মাংসের দাম কমায় নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারে কিছুটা আশার আলো ফুটেছে। রামপুরার বাসিন্দা মো. হাবিবুর রহমান বলেন, দাম বেড়ে যাওয়ায় গরুর মাংস খাওয়া ভুলেই গিয়েছিলাম। দাম কমার কথা শুনে এক কেজি কিনে ফেললাম।
মুরগির দামও কমে আসছে
এদিকে গরুর মাংসের দাম কমে আসায় মুরগির দামও কমতে শুরু করেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির মাংসের দাম কেজিতে ১০ টাকা কমে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি মুরগির দাম বাজারভেদে কমেছে ২০-৩০ টাকা। বর্তমানে বিভিন্ন বাজারে সোনালি মুরগির কেজি ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা। কমেছে ডজনপ্রতি ফার্মের ডিমের দামও। এক ডজন ডিমের দাম ১১৫ থেকে ১২০ টাকা। ১ হালি ৪০ টাকা।
শুক্রাবাদের মুরগি বিক্রেতা মো. মাহসাদ হোসেন বলেন, সপ্তাহখানেক ধরে ব্রয়লার মুরগির দাম কমে আসছে। সোনালী মুরগি ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কারওয়ান বাজারে ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৮০ টাকা।
আবার বেড়েছে আলুর দাম
বাজারে শীতকালীন সবজির সরবরাহ বাড়লেও আবার বেড়েছে আলুর দাম। বাজারভেদে হল্যান্ডের আলু ৪৫-৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ইতঃপূর্বে আলুর দাম কেজিপ্রতি ৪০ টাকায় নেমেছিল। শুক্রাবাদ বাজারের ব্যবসায়ী বাচ্চু মিয়া বলেন, দেশি পেঁয়াজ ১২০ টাকা, আমদানি করা পেঁয়াজ ১১০, আলু ৫০, দেশি রসুন ২০০ ও আমদানি করা রসুন ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সবজি বিক্রেতা এনামুল হক বলেন, ফুলকপি প্রতি পিস ৫০ টাকা, পেঁপে ৩৫ টাকা, বাঁধাকপি ৫০, উচ্ছে ৮০, মিষ্টি কুমড়া ৫০, শিম ৬০-৮০, নতুন আলু ১০০, পুরোনো ৬০-৮০ এবং পাকা টমেটো ১৪০-১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কারওয়ান বাজারে প্রায় একই দামে এসব সবজি বিক্রি হতে দেখা গেছে। বাজারে পাঙাশ ১৮০ টাকা কেজি, তেলাপিয়া ২১০, কই ২০০, মলা ৩০০, পুঁটিমাছ ৩০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের মুদি দোকানি ফারুক হোসেন বলেন, সপ্তাহের ব্যবধানে চিনি, আটা ও ডালের দাম কমেনি। প্যাকেটজাত চিনি ১৫০ টাকা, দুই কেজি আটা ১২০ টাকা, দেশি মসুর ডাল ১৪০, ক্যাঙ্গারু ১৫০ ও মোটা মসুর ডাল ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।