চট্টগ্রাম অফিস
প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর ২০২৩ ১৬:০০ পিএম
পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে জালিয়াতি রোধে চট্টগ্রাম বন্দরের আরও দুটি গেটে বসছে কন্টেইনার স্ক্যানার। চীন থেকে আমদানি করা এ দুটি কন্টেইনার স্ক্যানার বসানোর কাজ আগামী সপ্তাহে শুরু হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপকমিশনার ব্যারিস্টার বদরুজ্জামান মুন্সি।
তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য চারটিসহ মোট ছয়টি স্ক্যানার কিনছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর মধ্যে প্রথম দফায় দুটি কন্টেইনার স্ক্যানার গত সপ্তাহে চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছায়। আগামী সপ্তাহে কন্টেইনার স্ক্যানার দুটি বসানোর কাজ শুরু হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার বদরুজ্জামান মুন্সি বলেন, বন্দরের কোন গেটে বসানো হবে সেটি এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। এ নিয়ে আগামী শনিবার কাস্টম হাউসে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে এনবিআর চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে এটি নির্ধারণ করা হবে বলে তিনি জানান।
এ নিয়ে গত তিন বছরের ব্যবধানে বন্দরে স্থাপন করা হচ্ছে চারটি কন্টেইনার স্ক্যানার। এর আগে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বন্দরের ১ নম্বর গেট এবং এনসিটি ৩ নম্বর গেটে দুটি ফিক্সড স্ক্যানার স্থাপন করা হয়।
কাস্টম হাউস সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বন্দরের ১২টি গেটের মধ্যে সাতটি গেটে পাঁচটি ফিক্সড ও দুটি মোবাইল কন্টেইনার স্ক্যানার রয়েছে। নতুন দুটি কন্টেইনার স্ক্যানার বসানোর মধ্য দিয়ে বন্দরের ১২টি গেটের মধ্যে সাতটি গেটে বসতে যাচ্ছে ফিক্সড কন্টেইনার স্ক্যানার। এর মধ্যে বন্দরের এক নম্বর গেট, চার নম্বর গেট, পাঁচ নম্বর গেট, সিসিটি-২ টার্মিনাল এবং নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) তিন নম্বর গেটে ফিক্সড কন্টেইনার স্ক্যানার আগে থেকেই রয়েছে। এ ছাড়া সিসিটি-২ ও জিসিটি-২ নম্বর গেটে রয়েছে মোবাইল স্ক্যানার।
পাঁচ বছর আগে ২০১৭ সালের ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর ইউএস কোস্ট গার্ডের একটি প্রতিনিধিদল চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। ওই সময় তারা বন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থার ঘাটতি দূর করতে ১৬ দফা পরামর্শ দিয়েছিল। এর দুই বছর পর ২০১৯ সালের অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে সংস্থাটির তিন সদস্যের আরেকটি প্রতিনিধিদল বন্দরে আসে। এ সময় তারা বন্দরের নিরাপত্তা বিশ্বমানে উন্নীত করতে বন্দরের প্রতিটি গেটে স্ক্যানার বসানোর পাশাপাশি ইয়ার্ড থেকে ডেলিভারি কার্যক্রম সরিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেয়।
ইউএস কোস্ট গার্ডের পরামর্শের আলোকে বন্দরের গেটে স্ক্যানার বসানোর জন্য দুটি কন্টেইনার স্ক্যানার কেনার প্রক্রিয়া শুরু করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। একই সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরসহ স্থলবন্দরের জন্য স্ক্যানার কিনতে প্রক্রিয়া শুরু করে এনবিআর। প্রাথমিকভাবে এনবিআরের পক্ষ থেকে ছয়টি স্ক্যানার কেনার প্রস্তাব দেওয়া হয়। গত বছরের ২৩ নভেম্বর স্ক্যানার কেনার প্রস্তাবটি অনুমোদন দেয় সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে ৩২৭ কোটি এক লাখ ২৪ হাজার ৩৬৫ টাকা ব্যয়ে এই ছয়টি স্ক্যানার কেনা হচ্ছে। ছয়টি স্ক্যানারের মধ্যে প্রথম দফায় চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য দুটি কন্টেইনার স্ক্যানার আনা হয়। দুয়েক মাসের মধ্যে আরও দুটি কন্টেইনার স্ক্যানার আনা হবে। ওই দুটি কন্টেইনার স্ক্যানার বন্দরে স্থাপন করা হলে তখন বন্দরের ১২টি গেটের মধ্যে ১১টিই চলে আসবে স্ক্যানিংয়ের আওতায়। এর মধ্যে ৯টিতে থাকবে ফিক্সড স্ক্যানার, বাকি দুটিতে থাকবে মোবাইল স্ক্যানার।
উল্লেখ্য, আইএসপিএস কোড হলো একটি ফ্রেমওয়ার্ক যেটি নিশ্চিত করার মাধ্যমে বন্দর ও জাহাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। যেখানে ১১টি নির্দেশনা প্রদান করে সেগুলো নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। ওই নির্দেশনার প্রথম দফায় বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক কাঠামোর মাধ্যমে নিরাপত্তা হুমকি শনাক্তকরণ এবং প্রতিরোধে সক্ষমতা নিশ্চিত করতে হবে। আইএসপিএস কোডের শর্ত পূরণ করতেই এ দুটি স্ক্যানার কিনতে যাচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।