প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৯ নভেম্বর ২০২৩ ২১:৫৬ পিএম
আপডেট : ২৯ নভেম্বর ২০২৩ ২১:৫৬ পিএম
দেশের ঐতিহ্যবাহী জামদানি শিল্পের উন্নয়নে সাড়ে ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ভিলেজ স্থাপনের প্রকল্প হাতে নিয়েছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি প্রকল্পটির অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। জামদানি ভিলেজ স্থাপনের মাধ্যমে আদর্শ গবেষণা ও নকশা উন্নয়ন কেন্দ্র তৈরি করা হবে। একই সঙ্গে থাকবে প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্র। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে নেওয়া জামদানি ভিলেজ স্থাপন প্রকল্পটি সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড। বাস্তবায়নকাল নির্ধারণ করা হয়েছে চলতি বছর থেকে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত। জামদানি ভিলেজটি স্থাপন করা হবে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জে।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছে, জামদানি শিল্পের উন্নয়নে গবেষণা ও নকশা উন্নয়ন কার্যক্রম জোরদার করা, উৎপাদিত জামদানি পণ্যের বাজারজাতকরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন, জামদানি পণ্যের ক্রেতাসাধারণের জন্য উন্নত পরিবেশ নিশ্চিত এবং পরিবর্তিত বাজারে ভোক্তার চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে নতুন নতুন ডিজাইন উদ্ভাবন করা হবে।
প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, অসাধারণ নকশায় সমৃদ্ধ জামদানি মূলত মসলিনেরই একটি প্রকার, যা নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও, রূপগঞ্জ ও সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চলের বয়ন শিল্পীদের হাতে অনবদ্য শিল্পকর্মে রূপ নিয়েছে। ইউনেস্কো কর্তৃক ২০১৩ সালে জামদানি বয়ন শিল্পকে ‘ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ’-এর মর্যাদা ও স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। ২০১৬ সালে জামদানি পণ্য বাংলাদেশের ভৌগোলিক সূচক হিসেবে পরিগণিত হয়েছে, যা দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন।
সর্বশেষ ২০১৮ সালের তাঁত শুমারি অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জ সদরে ৬২টি, আড়াইহাজারে ২০০টি, সোনারগাঁয়ে ২ হাজার ৭৯৯টি, রূপগঞ্জে ৩ হাজার ১৮৫টিসহ নারায়ণগঞ্জ জেলায় মোট ৬ হাজার ২৪৬টি জামদানি তাঁত বিদ্যমান। নারায়ণগঞ্জ জেলায় মোট ৩ হাজার ৯৮৪টি তাঁত শিল্পী পরিবারের মধ্যে প্রায় ২ হাজার ৬০০ জামদানি তাঁত শিল্পী পরিবার রয়েছে, যাদের মধ্যে দুই হাজারেরও অধিক প্রান্তিক তাঁত শিল্পী।
এলাকা নির্বাচনের যৌক্তিকতা বিষয়ে বাস্তবায়নকারী সংস্থা জানিয়েছে, বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদ ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ ওয়ার্ল্ড ক্রাফট সিটির মর্যাদা লাভ করেছে। তা ছাড়া, প্রকল্পটি শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্বতীরে ঢাকাই মসলিন হাউসের পাশে মনোরম পরিবেশে অবস্থিত। সার্বিক বিবেচনায়, নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার তারাবতে ঢাকাই মসলিন হাউসের পার্শ্ববর্তী স্থানে প্রকল্প এলাকা নির্বাচন করা হয়।
উল্লেখ্য, অধিকাংশ তাঁত শিল্পী পরিবারই হতদরিদ্র এবং মানবেতর জীবনযাপন করছেন বিধায় উন্নত কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণ, উৎপাদিত জামদানি পণ্যের বাজারজাতকরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং জামদানি পণ্যের ক্রেতা সাধারণের জন্য উন্নত পরিবেশ নিশ্চিত করতে আলোচ্য প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছেÑ প্রদর্শনী-কাম-বিক্রয় কেন্দ্র, বায়ারস রিফ্রেসমেন্ট ও অফিস ভবন নির্মাণ, ভূমি উন্নয়ন আরসিসি অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণ, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, ডিজিটাল সার্ভে ও মাটি পরীক্ষা; গবেষণা, অফিস যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি ক্রয়, আসবাবপত্র ক্রয়।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কিছু সংশোধনের সুপারিশ করা হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তীকালে সংশোধিত ডিপিপি কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগে পাঠায় বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড। এরপরই পিইসি সভার সিদ্ধান্ত পরিপালন করে প্রকল্পটি অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়।
জানা গেছে, গত ১৮ সেপ্টেম্বর ৩২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির অনুমোদন দেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। পরে বর্তমান সরকারের সর্বশেষ একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদনের বিষয়ে অবহিত করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা।