প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৬ নভেম্বর ২০২৩ ১৭:৪৫ পিএম
প্রবা ফটো
পুনর্গঠিত মুদ্রানীতি বা মনিটারি পলিসি কমিটির (এমপিসি) প্রথম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নীতি সুদহার করিডোর পুনঃনির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি পলিসি রেট বা ওভারনাইট রেপো সুদহার, নীতি সুদহার করিডোরের উর্ধ্বসীমা স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি (এসএলএফ) সুদহার, নীতি সুদহার করিডোরের নিম্নসীমা স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (এসডিএফ) সুদহার বাড়ানো হয়েছে। রবিবার (২৬ নভেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২২ নভেম্বর ২০২৩ তারিখ বিকাল ৫:০০ ঘটিকায় পুনর্গঠিত মনিটারি পলিসি কমিটি (এমপিসি) এর প্রথম সভা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কমিটির অন্যান্য সদস্য- কাজী ছাইদুর রহমান, ডেপুটি গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক; ড. মোঃ হাবিবুর রহমান, প্রধান অর্থনীতিবিদ, বাংলাদেশ ব্যাংক; ড. সাদিক আহমেদ, অর্থনীতিবিদ; ড. বিনায়ক সেন, মহাপরিচালক, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান; অধ্যাপক মাসুদা ইয়াসমিন, চেয়ারম্যান, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; এবং ড. মোঃ এজাজুল ইসলাম, নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক অংশগ্রহণ করেন।
সভায় অভ্যন্তরীণ এবং বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে বর্তমান সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং এর ভবিষ্যত গতি-প্রকৃতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এছাড়াও, বিদ্যমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি, বিনিময় হার, তারল্য ও সুদহার পরিস্থিতি এবং নীতি সুদহারের গতিবিধি নিয়ে বিশদভাবে পর্যালোচনা করা হয়। এক্ষেত্রে, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপসমূহ যেমন নীতি সুদহার বৃদ্ধি, আমানত ও ব্যাংক ঋণের সুদহারের সীমা তুলে দিয়ে তা বাজারমুখীকরণ, টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ প্রদান স্থগিতকরণ, আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রন এবং রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্স বৃদ্ধির কার্যকর ব্যবস্থাকরণ, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারকে বাজারমুখীকরণ, আমদানি মূল্য যাচাইসহ বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে তদারকি বৃদ্ধিকরণ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হতে অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যের আমদানি ব্যয় মেটানোর ব্যবস্থা ইত্যাদি সম্পর্কে কমিটির সদস্যবৃন্দকে অবহিত করা হয়। কমিটির সদস্যবৃন্দও এসকল বিষয়ে তাঁদের নিজ নিজ মতামত ব্যক্ত করেন। বাজারভিত্তিক বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ এবং ব্যাংকিং খাতে ক্রমবর্ধমান নন-পারফর্মিং লোন সমস্যা মোকাবেলায় বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নেয়ার পক্ষে সভায় গুরুত্বারোপ করা হয়। এছাড়াও, বর্তমানে বিরাজমান উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ বিনিময় হার এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উপর চাপ প্রশমনে বাংলাদেশ ব্যাংকের চলমান প্রচেষ্টাকে অব্যাহত রাখার ব্যাপারে সভায় ঐকমত্য পোষণ করা হয়।সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহীত নীতি পদক্ষেপ, বিশ্ব বাজারের পণ্য মূল্যে নিম্নমুখী গতিধারা, আসন্ন আমন ধানের ফলন ভালো হওয়ার সম্ভবনা এবং শীতকালীন ফসল সরবরাহ বৃদ্ধির সূত্রে আগামী মাসগুলোতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি সহনীয় মাত্রায় নেমে আসবে বলে সভায় আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।
বিস্তারিত আলোচনা ও পর্যালোচনা শেষে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি ডিসেম্বর/২৩ শেষে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে ৮ শতাংশে এবং জুন/২৪ শেষে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা এবং বিনিময় হার ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উপর চাপ প্রশমনের লক্ষ্যে সভায় নিম্নোক্ত সিদ্ধান্তসমূহ গৃহীত হয়ঃ
(১) পলিসি রেট তথা ওভারনাইট রেপো সুদহার বিদ্যমান শতকরা ৭.২৫ শতাংশ হতে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করে ৭.৭৫ শতাংশে পুনঃনির্ধারণ;
(২) নীতি সুদহার করিডোরের উর্ধ্বসীমা স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি (এসএলএফ) সুদহার বিদ্যমান শতকরা ৯.২৫ শতাংশ হতে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করে ৯.৭৫ শতাংশে পুনঃনির্ধারণ;
(৩) নীতি সুদহার করিডোরের নিম্নসীমা স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (এসডিএফ) সুদহার বিদ্যমান শতকরা ৫.২৫ শতাংশ হতে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করে ৫.৭৫ শতাংশে পুনঃনির্ধারণ;
(৪) ঋণের সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে সকল খাতে SMART (Six months Moving Average Rate of Treasury Bill) এর সাথে প্রযোজ্য বিদ্যমান মার্জিন ২৫ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করা; এবং
(৫) বিনিময় হারকে বাজারমুখী করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের চলমান প্রচেষ্টা জোরদারকরণ এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত রাখা।
উপরোক্ত সিদ্ধান্তসমূহ অবিলম্বে কার্যকর হবে। মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অনুসৃত সংকোচনমূলক পদক্ষেপ অব্যাহত রাখা হবে।