× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

তিনগুণ বেড়েছে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ

এম আর মাসফি

প্রকাশ : ২৬ নভেম্বর ২০২৩ ১৩:৪১ পিএম

আপডেট : ২৬ নভেম্বর ২০২৩ ১৫:০২ পিএম

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিবেশ অস্থিতিশীল হওয়ায় দেশের মেগা প্রকল্পগুলোর বিদেশি ঋণের সুদহার বেড়ে গেছে। ছবি- সংগৃহীত

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিবেশ অস্থিতিশীল হওয়ায় দেশের মেগা প্রকল্পগুলোর বিদেশি ঋণের সুদহার বেড়ে গেছে। ছবি- সংগৃহীত

দেশের মেগা প্রকল্পগুলোর বেশিরভাগই বাস্তবায়ন হচ্ছে বিদেশি ঋণে। হঠাৎ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিবেশ অস্থিতিশীল হওয়ায় বাজারভিত্তিক বিদেশি ঋণের সুদহার বেড়ে গেছে। ফলে সরকারের বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। গত অর্থবছরের প্রথম চার মাস জুলাই থেকে অক্টোবরে যেখানে বাংলাদেশকে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ করতে হয়েছিল ১৮ দশমিক ৭৭ কোটি ডলার, সেখানে চলতি অর্থবছরে প্রথম চার মাসে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে ৪৭ দশমিক ৭৪ কোটি ডলার। যা চলমান অর্থনৈতিক সংকটে দেশের জন্য ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে উপনীত হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাজারভিত্তিক বিদেশি ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়তে থাকায় এসব দেনা পরিশোধ বাংলাদেশের জন্য আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্যমতে, বাজারভিত্তিক ঋণ পরিশোধের চাপ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে পাওয়া মোট ৮ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার ঋণের মধ্যে ২৮ শতাংশই ছিল এ ধরনের ঋণ। যা আগের বছরের ২৩ দশমিক ৬ শতাংশের চেয়ে অনেকটাই বেড়েছে এবং মাত্র তিন বছর আগের চেয়ে দ্বিগুণ হয়েছে।

দেশের প্রথম সারির উন্নয়ন সহযোগী এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) গত অর্থবছরে বাংলাদেশের জন্য ১ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্রতিশ্রুতি দেয়। এর পাঁচ ভাগের চার ভাগে বাজারভিত্তিক সুদহার কার্যকর হবে, এতে সুদহার হবে ৫ থেকে ৭ শতাংশের মতো। গত দেড় বছর ধরে স্থানীয় মুদ্রা টাকার যে অবমূল্যায়ন ঘটছে, উচ্চ পরিশোধ ব্যয়ের পেছনে সেটিও ভূমিকা রাখছে। 

ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, উন্নয়ন সহযোগীদের থেকে স্থির সুদহার ও বাজারভিত্তিক সুদহার দুই ধরনের ঋণই নেয় বাংলাদেশ। স্থির সুদহার পদ্ধতিতে ঋণচুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সুদহার পরিশোধ করতে হয়। এই সুদহারের কোনো পরিবর্তন হয় না। অপরদিকে, বাজারভিত্তিক সুদহারের ঋণে বাংলাদেশকে সিকিউরড ওভারনাইট ফিন্যান্সিং রেট সোফর এবং ইউরো ইন্টারব্যাংক অফারড রেট (ইউরিবোর) হারে সুদ দিতে হয়। মাত্র দুবছর আগেও বাজারভিত্তিক ঋণ নিয়ে তেমন চিন্তার কোনো কারণ ছিল না, যখন সোফর হার ছিল ১ শতাংশের নিচে। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে তারপর থেকে সোফর সুদহার অনেকটাই বেড়ে গেছে। গত ১৪ অক্টোবর নাগাদ যা ছিল ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ। এ ছাড়া, বর্তমানে সোফর রেটের সঙ্গে স্প্রেড যোগ করে বিদেশি ঋণের জন্য বাংলাদেশকে সুদ দিতে হয়। এতে সুদহার শেষপর্যন্ত দাঁড়ায় ৬ থেকে ৭ শতাংশে। একই ঘটনা, ইউরিবোর-ভিত্তিক ঋণের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

ইআরডি প্রক্ষেপণ করেছে, চলতি অর্থবছরে প্রথমবারের মতো সুদ পরিশোধ ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। প্রক্ষেপণ অনুসারে, চলতি অর্থবছরে উন্নয়ন সহযোগীদের ১ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার সুদ দিতে হবে বাংলাদেশকে। সে তুলনায়, গত অর্থবছরে ৯৩৭ মিলিয়ন ডলার সুদ পরিশোধ করে বাংলাদেশ, তার আগের অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৪৯১ মিলিয়ন ডলার। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আগে বিশ্বব্যাংক-এডিবি থেকে আমরা ফিক্সড রেটে ঋণ পেতাম। এখন সেটা কমছে। যার কারণে আমাদের বাজারভিত্তিক সুদহারের ঋণ নিতে হচ্ছে। এই ঋণের কারণে শুধু সুদ পরিশোধের চাপ বাড়বে না; একই সঙ্গে আসল পরিশোধেও চাপ বাড়বে। কারণ বাজারভিত্তিক সুদহারের ঋণ পরিশোধের সময় কম থাকে। এই অবস্থায় বাজারভিত্তিক সুদহারের ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারকে সতর্ক হতে হবে। যেসব প্রকল্পে রিটার্ন আসবে না, সেসব প্রকল্প না নেওয়ায়ই ভালো।’ 

গত অর্থবছরে, বাংলাদেশ এডিবির থেকে ১ দশমিক ৮৫৪ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্রতিশ্রুতি পেয়েছে। এর মধ্যে ৭৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ হলো বাজারভিত্তিক। এডিবির থেকে নেওয়া বাজারভিত্তিক ঋণ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। সংস্থাটি বাংলাদেশকে ২ শতাংশ স্থির সুদে ঋণ দিলেও পর্যায়ক্রমে এ ধরনের ঋণ কমছে বলে জানিয়েছেন ইআরডির কর্মকর্তারা। 

বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে শূন্য সুদহার থেকে শুরু করে বাজারভিত্তিক সুদে ঋণ দিচ্ছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ ওয়াশিংটনভিত্তিক ঋণদাতাটির থেকে ৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার ঋণ প্রতিশ্রুতি পেয়েছিল, যা একক বছরের হিসাবে সর্বোচ্চ। ১ দশমিক ২৫ শতাংশ সুদ এবং শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জের শর্তে এ ঋণ পেয়েছে। কিন্তু চলতি অর্থবছর এবং আগামী অর্থবছরে ৯০০ মিলিয়ন করে মোট ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন বাজারভিত্তিক ঋণের প্রস্তাব রয়েছে।

ইআরডির প্রতিবেদন মতে, আগামী বছরগুলোতে দেশের বিদেশি ঋণ নেওয়ার সুযোগ বাড়বে। এ ছাড়া স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে উত্তরণ ঘটলে সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতের জন্যই বাজার থেকে ঋণ নেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। ২০২৬ সালে দেশের উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশ হওয়ার লক্ষ্যও নিয়েছে সরকার। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা