× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মূল্যস্ফীতির কাটা ঘায়ে কম মজুরির নুন

এম আর মাসফি

প্রকাশ : ২৫ নভেম্বর ২০২৩ ১৩:২৩ পিএম

আপডেট : ২৫ নভেম্বর ২০২৩ ১৩:৩২ পিএম

মূল্যস্ফীতির কাটা ঘায়ে কম মজুরির নুন

চরম মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না  দেশের কর্মজীবী-শ্রমজীবী সাধারণ মানুষ। স্বল্প মজুরিতে সংসার চালাতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠছে তাদের। সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মাসিক হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। উল্লেখ্য, গত অক্টোবরে রেকর্ড মূল্যস্ফীতিতে পড়েছে দেশের অর্থনীতি, যা গত এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ। বিবিএসের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, তিন মাস ধরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশের ওপর রয়েছে; যা অক্টোবরে পৌঁছেছে ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশে। এই মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতিও ছিল রেকর্ডের কাছাকাছি, ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এর আগে গত মে মাসে রেকর্ড মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। 

অন্যদিকে এই সময়ে কর্মজীবী-শ্রমজীবীদের সার্বিক মজুরি বেড়েছে ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ, যা খাদ্য মূল্যস্ফীতির তুলনায় তো বটেই, সার্বিক মূল্যস্ফীতির চেয়েও নিচে রয়েছে। ফলে দুমুঠো খেয়ে-পরে বাঁচতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ।

মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাল মেলাতে না পারলেও অক্টোবরে দেশে সবচেয়ে বেশি মজুরি বেড়েছে রংপুরে। এখানে মজুরি বেড়েছে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ। অর্থাৎ গত বছরের অক্টোবরে একজন শ্রমিক যেখানে ১০০ টাকা মজুরি পেয়েছেন, এ বছরের অক্টোবরে তার মজুরি বেড়ে হয়েছে ১০৯ টাকা ১৭ পয়সা। তবে মজুরি সবচেয়ে কম বেড়েছে সিলেটে ৬ দশমিক ২৬ শতাংশ। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এ অঞ্চলের সাধারণ শ্রমজীবীদের অবস্থা এখন সবচেয়ে কঠিন। বিবিএসের মজুরি-সংক্রান্ত তথ্যে আরও দেখা যায়, ঢাকায় মজুরি বেড়েছে ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ। চট্টগ্রামে বেড়েছে ৬ দশমিক ৫২ শতাংশ। রাজশাহীতে বেড়েছে ৭ দশমিক ২৭ শতাংশ। খুলনায় বেড়েছে ৭ দশমিক ১৬ শতাংশ। এ ছাড়া বরিশালে ৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ মজুরি বেড়েছে।

পরিসংখ্যান বলছে, অক্টোবরে রংপুরে সবচেয়ে বেশি মজুরি বেড়েছে নির্মাণ খাতে। এ খাতে মজুরি বেড়েছে ১২ দশমিক ১২ শতাংশ। পাশাপাশি কল-কারখানা খাতে ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ, সেবা খাতে ১১ দশমিক ১০ শতাংশ, মৎস্য খাতে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ এবং কৃষিকাজে ৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ মজুরি বেড়েছে। 

রংপুরে এবার আমনসহ বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে আমন ধান কাটার মৌসুম। তাই ধান কাটা-মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক ও শ্রমিকরা। এদিকে অন্যান্য কাজে শ্রমিক সংকট দেখা দেওয়ার কারণে এখানে মজুরি বেড়েছে। যারা অন্য সময়ে নির্মাণ বা কারখানার কাজে যুক্ত ছিলেন, তারাও এখন কৃষিকাজ করছেন।

এদিকে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতির চেয়ে মজুরি বৃদ্ধির হার এক বছর ধরেই কম। গত অক্টোবরে মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ। উল্লেখ্য, সাধারণত মূল্যস্ফীতির চেয়ে মজুরি বৃদ্ধির হার বেশি থাকে।

অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মতে, মূল্যস্ফীতি হলো এক ধরনের করের মতো, যা ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার ওপর চাপ বাড়ায়। খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় বিশেষ করে গরিব ও মধ্যবিত্তের সংসার চালাতে ভোগান্তি বেড়েছে। বর্তমানে বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেশ চড়া। কখনও ডিমের দাম বাড়ে আবার কখনও পেঁয়াজ ও আলুর। তাছাড়া শাকসবজি, মাছ-মাংসের দামও বেশি।

খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, আলু ও ডিম ডিস্টার্ব করেছে। এ কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। তবে একটা ভালো দিক হলো, মূল্যস্ফীতি লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে না, ধীরে ধীরে বাড়ছে। তারপরও আমরা এটা চাই না। আগামী মাসে কৃষকের ঘরে আমন ধান উঠবে। তখন মূল্যস্ফীতি কমবে বলে আশা প্রকাশ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী।

বিবিএসের হিসাবে, শহর-গ্রাম নির্বিশেষে খাদ্য মূল্যস্ফীতি প্রায় সমান। গ্রামে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৫৩ শতাংশ। শহরে এই হার কিছুটা বেড়ে হয়েছে ১২ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এর আগে গত আগস্টে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। অথচ চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার।

বিবিএস বলছে, অক্টোবরে আলু, মাছ, চাল, ডাল, তেল, লবণ, মাছ, মাংস, সবজি, মসলা ও তামাকজাতীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় খাদ্যে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে।

মূল্যস্ফীতির জন্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রায়ই আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিকে দায়ী করা হয়। তবে বেশ কিছুদিন ধরে বিশ্ববাজারে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম কমছে। যদিও এর প্রভাব দেশের বাজারে খুব একটা নেই। আমদানিকারকরা এজন্য ডলার-সংকট এবং আমদানির এলসি খোলার ওপর কড়াকড়িকে দায়ী করে থাকেন।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, ‘খাদ্য মূল্যস্ফীতি আরও ঝুঁকির মধ্যে চলে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে গত এক বছরে সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, তা তেমন কাজে আসেনি। তাই মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে আপৎকালীন ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। তা না হলে গরিব মানুষের কষ্ট আরও বাড়বে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা