প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ নভেম্বর ২০২৩ ১১:০৬ এএম
আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০২৩ ১১:১০ এএম
মাঝেমধ্যেই বাজার থেকে প্যাকেটজাত চিনি উধাও হয়ে যেতে দেখা যায়। ১৫-২০ দিন ধরে আবারও পাইকারি বাজারে প্যাকেটজাত চিনির সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ফলে চাহিদামতো চিনি পাচ্ছেন না খুচরা বিক্রেতারা। এই সময়ের মধ্যে পণ্যটির দাম বেড়েছে কেজিতে প্রায় ১৫ টাকা। এদিকে পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে প্রতি বোতলে ১০ টাকা। বেড়েছে মসুর ডাল, ময়দা ও আটার দামও।
বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজার, তেজগাঁওয়ের কলমিলতা বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৫-২০ দিন ধরে বাজারে প্যাকেটজাত চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। খোলা চিনিরও সরবরাহ কমে গেছে।
কারওয়ান বাজারের সোনালী ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আবুল কাসেম বলেন, ‘১৫ দিন ধরে চিনি পাচ্ছি না। কোনো ডিলার চিনি দিচ্ছে না। মৌলভীবাজার থেকে অল্প কিছু চিনি এনে কোনোমতো কাস্টমার ধরে রেখেছি। অল্প অল্প করে বিক্রি করছি। ১৩৫ থেকে বেড়ে বর্তমানে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়।
ইয়াসিন জেনারেল স্টোরের ফারুক হোসেন বলেন, ২০-২৫ দিন ধরে প্যাকেটজাত চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। সামান্য যেটুকু পাওয়া তারও দাম বেড়ে গেছে। এক কেজি চিনি ১৫০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। দুই কেজি আটার প্যাকেটে ১৫ টাকা বেড়ে ১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মোটা মসুর ডাল ১০৫ থেকে বেড়ে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাঁচ কেজির পুষ্টি সয়াবিন তেল ৭৮৬ থেকে বেড়ে ৮০০ টাকা হয়েছে। সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের মুদি দোকানি জহিরুল ইসলামও একই কথা জানান। কলমিলতা কাঁচাবাজারের মুদি দোকানি মো. মোতাহার হোসেন ফারুক জানান, বাজারটিতে এক কেজির প্যাকেট চিনি ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের চিনি, তেল, আটা ও ময়দা বিক্রেতা আবুল কাসেম বলেন, খোলা আটার দাম ২ টাকা বেড়ে ৪২ টাকা হয়েছে। গত ১৫ দিনে তীর ব্র্যান্ডের ৫০ কেজির ময়দার বস্তার দাম ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা বেড়ে গেছে।
সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম বলেন, মোটা মসুর ডাল প্রতি কেজিতে ১০-১৫ টাকা বেড়ে ১২০ টাকায়, দেশি মসুর ডাল ১০ টাকা বেড়ে ১৪০ টাকা ও ক্যাঙ্গারু ডাল ১৫ টাকা বেড়ে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দোকানটিতে দেশি পেঁয়াজ ১২০ টাকা কেজি, আমদানি করা পেঁয়াজ ১২০ টাকা, দেশি রসুন ২২০ টাকা, আমদানি করা রসুন ১৯০ টাকা, ৫ লিটারের সয়াবিন তেল ৮২৫ টাকা থেকে বেড়ে ৮৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া আটার দাম ১০৫ টাকা থেকে বেড়ে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এই বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. শাকিবুর রহমান জানান, লম্বা বেগুন ৫০ টাকা কেজি, গোল বেগুন ৮০ টাকা, করলা ৬০, শিম ৬০, উচ্ছে ৭০ টাকা, পেঁপে ৩০, কাঁচা টমেটো ৮০, পাকা টমেটো ১৬০, প্রতি পিস বাঁধাকপি ৫০ ও ফুলকপি ৪০, নতুন আলু ১০০, লাল ছোট আলু ৭০ ও হল্যান্ডের আলু ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
একই বাজারের ডিম বিক্রেতা মো. মেহরাজ হোসেন বলেন, প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকা করে। আর প্রতি হালি ৪০-৪৫ টাকা। হাঁসের ডিম ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা রাকিব হোসেন রাজু বলেন, করলা ৫০ টাকা, শিম ৪০, টমেটো ৫০, বেগুন ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবির) তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে চিনিতে কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ। খোলা আটার দাম বেড়েছে ৯ দশমিক ২০ শতাংশ ও প্যাকেটে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। খোলা ময়দার দাম বেড়েছে ৮ দশমিক ৭০ ও প্যাকেটে ১২ শতাংশ। খোলা সয়াবিন তেলে লিটারে বেড়েছে ১ দশমিক ৬৭ শতাংশ। ৫ লিটারে বেড়েছে ১ দশমিক ২৭ শতাংশ।
বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ও দেশবন্ধু গ্রুপের কর্ণধার গোলাম রহমান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘চিনি আমদানির জন্য এলসি খুলতে পারছি না। প্রতি ডলার কিনতে হচ্ছে ১২৮ টাকা করে। ১২০ শতাংশ মার্জিন দিয়ে চিনি আমদানি করতে হচ্ছে ।’
তিনি বলেন, এক মেট্রিক টন চিনির আমদানি মূল্য ৪৪ হাজার টাকা। সেখানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ডিউটি কমিয়েছে প্রতি কেজিতে ১ টাকা ৫০ পয়সা। সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা না হলে চিনি আমদানি করা যাবে না। বর্তমানে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না হওয়ার পেছনে এসব কারণ দায়ী।