হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০২৩ ১৬:০৩ পিএম
চলতি বছরের জুলাইয়ে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে কার্গো পণ্য আমদানি হয়েছে ৬৭ লাখ ৫৬ হাজার ৮২১ মেট্রিক টন। একই মাসে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয়েছে মাত্র ৯ হাজার ৪৬০ মেট্রিক টন। এই হিসাবে জুলাই মাসে দেশে কার্গো পণ্য আমদানি হয়েছে রপ্তানির চেয়ে প্রায় ৭১৪ গুণ বেশি।
শুধু জুলাইয়ে নয়, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে প্রতি মাসে রপ্তানির চেয়ে কয়েকশ গুণ বেশি আমদানি হচ্ছে কার্গো পণ্য। যার প্রভাব পড়ছে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে। রপ্তানির তুলনায় আমদানি বেশি হওয়ায় চাপ বাড়ছে দেশের রিজার্ভে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে হলে আমদানি কমিয়ে এনে রপ্তানি বাড়াতে হবে। না হয়, দেশের অর্থনীতি সামগ্রিকভাবে পিছিয়ে পড়বে।
গম, চিনি, লবণ, স্ক্র্যাপ, সিমেন্ট ক্লিংকার, কয়লাসহ অধিকাংশ খাদ্যপণ্য আমদানি-রপ্তানি হয় কার্গো জাহাজে। কার্গো জাহাজে আমদানি করা পণ্যগুলোকে কার্গো পণ্য হিসেবে চিহ্নিত করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে কার্গো পণ্য হিসেবে রপ্তানি হয় পাট, পাটের পণ্য, চামড়া, চা, ইউরিয়া। এ হিসেবে দেখা যায়, বাংলাদেশ যেসব কার্গো পণ্য আমদানি করে সেগুলো আমদানি না করে থাকার সুযোগ নেই। কারণ অধিকাংশ পণ্যই আসে শিল্প কারখানার কাঁচামাল হিসেবে।
বন্দরের এই কার্গো পণ্য আমদানির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত গত ১০ মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে কার্গো পণ্য আমদানি হয়েছে ৭ কোটি ১ লাখ ৯৬ হাজার ২৯৮ মেট্রিক টন। একই সময়ে বাংলাদেশ থেকে কার্গো পণ্য রপ্তানি হয়েছে মাত্র ১ লাখ ৬৯ হাজার ৪৮২ মেট্রিক টন। সেই হিসেবে গত ১০ মাসে কার্গো পণ্য আমদানি হয়েছে রপ্তানির চেয়ে ৪১৪ গুণ বেশি।
এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে কার্গো পণ্য আমদানি হয় ৬৪ লাখ ৯৪ হাজার ৭৯৯ মেট্রিক টন। এর বিপরীতে ওই মাসে বাংলাদেশ থেকে কোনো কার্গো পণ্য রপ্তানি হয়নি। ফেব্রুয়ারি মাসে ৬৪ লাখ ২৯ হাজার ৩৮০ মেট্রিক টন আমদানির বিপরীতে ওই মাসে রপ্তানি হয় ৪৭ হাজার ৫৫৭ মেট্রিক টন কার্গো পণ্য। মার্চে কার্গো পণ্য আমদানি হয় ৮৪ লাখ ৯৬ হাজার ১৭৯ মেট্রিক টন। এর বিপরীতে ওই মাসে বাংলাদেশ থেকে কার্গো পণ্য রপ্তানি হয় ৪৪১ মেট্রিক টন।
এপ্রিল মাসে আবারও বাংলাদেশ থেকে কোনো কার্গো পণ্য রপ্তানি করা হয়নি। অথচ ওই মাসে আমদানি হয়েছে ৭০ লাখ ১৭ হাজার ৩৬৪ মেট্রিক টন। মে মাসে কার্গো পণ্য আমদানি হয় ৬৫ লাখ ১ হাজার ২০৫ মেট্রিক টন। এর বিপরীতে ওই মাসে বাংলাদেশ থেকে কার্গো পণ্য রপ্তানি হয় ১ হাজার ৫৫৫ মেট্রিক টন। জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসেও একই অবস্থা। ওই তিন মাসে রপ্তানির চেয়ে কয়েকশ গুণ বেশি আমদানি হয়েছে। তবে সর্বশেষ দুই মাসে আগের আট মাসের তুলনায় কার্গো পণ্য রপ্তানি কিছুটা বেড়েছে। সেপ্টেম্বরে কার্গো পণ্য আমদানি হয় ৭০ লাখ ৮৩ হাজার ১৪৫ মেট্রিক টন। এর বিপরীতে ওই মাসে বাংলাদেশ থেকে কার্গো পণ্য রপ্তানি হয় ২০ হাজার ৪৪১ মেট্রিক টন। একইভাবে অক্টোবরে কার্গো পণ্য আমদানি হয় ৭১ লাখ ৯০ হাজার ৫৩৮ মেট্রিক টন। এর বিপরীতে ওই মাসে বাংলাদেশ থেকে কার্গো পণ্য রপ্তানি হয় ২০ হাজার ৪৪১ মেট্রিক টন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আলী আশরাফ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমদানির তুলনায় রপ্তানি বেশি হলে সেটি দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। যে দেশে রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি সেদেশ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ে। স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের দেশে দেখা গেছে আমদানি বেশি, সেই তুলনায় রপ্তানি অনেক কম। স্ক্র্যাপ, সিমেন্ট ক্লিংকার এগুলোর ৯০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। খাদ্যপণ্যের মধ্যে চাল ছাড়া অন্যান্য পণ্য যেমন গম, ডাল, তেল, চিনিÑ এগুলোও প্রায় ৯০ শতাংশ আমদানিনির্ভর। আমাদের এই আমদানিনির্ভরতা কমাতে হবে। অন্যথায় দেশ পিছিয়ে পড়বে।’
তিনি আরও বলেন, ‘খাদ্যপণ্য উৎপাদন বাড়াতে সরকারকে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে। যারা খাদ্যপণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত তারা যেন লোকসানে না পড়েন, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। খাদ্যপণ্য আমদানি কমানো গেলে তখন কার্গো পণ্য আমদানিও কমবে। শুধু আমদানি কমানো নয়, যেসব পণ্য রপ্তানি করা যায় সেগুলোর রপ্তানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি রপ্তানি বাড়ানো গেলে পণ্য আমদানি অনেক কমে আসবে।’