প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৯ নভেম্বর ২০২৩ ২১:৪০ পিএম
আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০২৩ ২২:২০ পিএম
রাজধানীর বনানীতে গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) সেমিনার
২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে এ পর্যন্ত ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত। ফলে আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে গেলেও এটা রপ্তানীকারকদের জন্য এক প্রকার প্রণোদনা হিসেবে কাজ করছে। অর্থাৎ ১ ডলারের বিপরীতে আগে ৮৫ টাকা পেলেও এখন রপ্তানীকরক পাচ্ছেন ১১৫ টাকার মতো।
কিন্তু উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে বাড়তি এ আয়ের সুযোগ নিতে পারছেন না তারা। ফলে রপ্তানীকারকরা বিশ্ব বাজারে তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হচ্ছেন। কারণ ভিয়েতনাম, ভারতের মতো প্রতিযোগী দেশগুলোতে মুদ্রার অবমূল্যায়ন হলেও তারা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রেখে বাড়তি সুবিধা নিতে পারছে। রবিবার (১৯ নভেম্বর) রাজধানীর বনানীতে গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) সেমিনারে বক্তরা এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশের জিডিটাল আর্থিক সেবার নতুন রূপায়ন শীর্ষক এ সেমিনারে সংস্থাটির অর্থনীতিবিদরা বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন পিআরআই চেয়ারম্যান ড. জায়েদি সাত্তার। সেমিনারে সামিষ্টক অর্থনীতি এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ইস্যু নিয়ে কথা বলেন সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক ড. এমএ রাজ্জাক।
তিনি বলেন, দেশিয় মুদ্রার অবমূল্যায়নের সঙ্গে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকলে তা রপ্তানীকারকদের জন্য বাড়তি সুবিধা দেয়। কিন্তু প্রতিযোগী দেশগুলোতে মুদ্রার অবমূল্যায়ন হলেও সেখানে মূল্যস্ফীতি ২ থেকে ৩ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। তাই ভারত ও ভিয়েতনাম বাড়তি সুবিধা পেলেও বাংলাদেশ প্রতিযোগীতা সক্ষমতার সুবিধা নিতে পারছে না। তবে পশ্চিমা দেশগুলো চীন থেকে পোশাক আমদানি হ্রাসের চেষ্টা করছে। ফলে সামনে এখাতে বাজার সম্প্রসারণের সুযোগ পাবে বলে মনে করছেন তিনি। যদিও শ্রম অধিকার একটি চ্যালেজ্ঞ হিসেবে দেখা দিতে পারে বলে মন্তব্য করেন এ অর্থনীতিবিদ।
সেমিনারে উদ্বোধনী বক্তব্যে ড. জায়েদি সাত্তার বলেন, ডলারের বিপরীতে টাকার ৩০ শতাংশ অবমূল্যায়ন মানে আমদানিতে ৩০ শতাংশ শুল্ক বেড়ে যাওয়া। আর এ বাড়তি শুল্কের বোঝা ভোক্তার উপর মূল্যস্ফীতির চাপ তৈরি করছে। তাই আমদানি শুল্ক কিছুটা হ্রাস করে মূল্যস্ফীতির চাপ কমানোর আহ্বান জানান এ অর্থনীতিবিদ। আর ট্যারিফ যৌক্তিক না করলে রপ্তানী বহুমুকীকরণ হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে কথা বলেন পিআরআইয়ের নিবার্হী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। কোন ধরণের নীতিমালা ছাড়া জিডিটাল ব্যাংকগুলোর অনুমোদন দেওয়ায় ধোয়াশা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন তিনি।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ডিজিটাল ব্যাংকগুলোর অনুমোদনের নীতিমালা এবং কাজের পরিধি এখন একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।’
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ডিজিটাল ব্যাংকের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমেরিকায় অধিকাংশ ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে স্টার্সআপ প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে। আর চীনে টেক জায়ান্ট কোম্পানিগুলো ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ে বিনিয়োগ করেছে। এ খাতে চীন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি আগ্রগামী দেশ। ভরতের ক্ষেত্রে দেখা গেছে প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকগুলোই ডিজিটাল ব্যাংক চালু করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ এসব ব্যাংক কীভাবে অনুমাদন পাবে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে টেক কিংবা আর্থিক খাতে যাদের অভিজজ্ঞতা নাই এমন প্রতিষ্ঠানের নতুন করে গ্রাহক তৈরি করতে বিপুল বিনিয়োগ করতে হবে বলে জানান তিনি। আর এসব ব্যাংকের গ্রাহক প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল, তাই নতুন নতুন সেবার মাধ্যমে তাদেরকে ধরে রাখাও একটি চ্যালেঞ্জ বলেন তিনি।