× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

কোম্পানি আইন সংশোধন ও অটোমেশনে জোর দিচ্ছে সরকার

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৮ নভেম্বর ২০২৩ ২১:৫৮ পিএম

আপডেট : ১৮ নভেম্বর ২০২৩ ২২:১৪ পিএম

ঢাকা চেম্বার আয়োজিত ‘কোম্পানী আইন-১৯৯৪ এর সংস্কার’ শীর্ষক সেমিনার। প্রবা ফটো

ঢাকা চেম্বার আয়োজিত ‘কোম্পানী আইন-১৯৯৪ এর সংস্কার’ শীর্ষক সেমিনার। প্রবা ফটো

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেছেন, কোম্পানি আইন সংশোধনে নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ আইনকে অটোমেশনে আনতেও জোর দিচ্ছে সরকার। তবে এ আইন সংশোধন রাতারাতি সম্ভব নয়। শনিবার (১৮ নভেম্বর) ঢাকা চেম্বার আয়োজিত ‘কোম্পানী আইন-১৯৯৪ এর সংস্কার’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি। ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে তপন কান্তি ঘোষ বলেন, কোম্পানি আইন সংশোধন নিয়ে কাজ চলছে। আধুনিক ও উন্নত বিশ্বের আদলে তাদের কোম্পানি আইনকে ঢেলে না সাজাতে অনেক সময় লেগে যেতে পারে। নির্ধারিত কমিটি চেষ্টা করে যাচ্ছে। সবকিছু অনলাইন ভিত্তিক হবে। সেখানে পাসওয়ার্ড থাকবে। তা দিয়ে অফিসে না গিয়ে সেবা দেওয়া হবে। পাসওয়ার্ড খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটা ফাঁস হলে ব্যবসা ধরা খাবে। ব্যবসার জন্য নির্দিষ্ট মানসিকতা থাকতে হবে। 

তিনি বলেন, কোম্পানি আইনে বেশি মাত্রায় ক্ষমতা আরোপ ও শাস্তি দেওয়া বিধান না থাকা প্রয়োজন, কারণ এতে ব্যবসায়িক কার্যক্রম বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। আরজেএসসির কার্যক্রমে আরও অটোমেশন আনয়নে বর্তমানে বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে এবং আশা প্রকাশ করেন চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে এবং আশা প্রকাশ করেন। এ ছাড়াও অটোমেশন কার্যক্রম সম্পন্ন হলে সেবাপ্রাপ্তির লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নতুন করে আরজেএসসির শাখা অফিস স্থাপনের কোনো প্রয়োজন হবে না। প্রস্তাবিত কোম্পানি আইনে দেশের এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের কীভাবে আরও বেশি সহযোগিতা করা যায়, তা নিরূপণের ওপর জোরারোপ করেন বাণিজ্য সচিব তাপন কান্তি ঘোষ।  বাজার পরিস্থিতি বিষয়ে তিনি বলেন, সিন্ডিকেট বন্ধ করা সহজ নয়, এটা অনেক বড় বিষয়। এসব নিয়ে বাজার চলে। তবে সিন্ডিকেট যেন মাথাচাড়া না দিতে পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সুতরাং বাস্তবসম্মত কারণে অনেক কিছু করা যায় না।

অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার বলেন, তাদের ব্যবসায়ী সমাজের আস্থা বৃদ্ধি ও বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিদ্যমান কোম্পানি আইনের সংস্কার এবং দ্রুত বাস্তাবায়ন এখন সময়ের দাবি। দেশে ব্যবসা সহায়ক পরিবেশ উন্নয়নের পাশাপাশি করপোরেট খাতে জবাবদিহি নিশ্চিতকল্পে কোম্পানি আইন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে তিনি মতপ্রকাশ করেন। ডিসিসিআই সভাপতি উল্লেখ করেন, দীর্ঘদিনের পুরোনো এ আইনটি বর্তমানে দ্রুত পরিবর্তশীল বৈশিক পরিস্থিতি মোকাবিলা ও বেসরকারি খাতের সক্ষমতা বাড়াতে যথেষ্ট নয়। এলক্ষ্যে তথ্যপ্রযুক্তির সর্বাত্মক ব্যবহারের মাধ্যমে অটোমেশন কার্যক্রম বাস্তবায়ন, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থার ব্যবহার বাড়ানো এবং মেধাস্বত্ব আইনের ব্যবহার বাড়ানোর প্রস্তাব করেন ব্যারিস্টার সামীর সাত্তার। তিনি আরও বলেন, কোম্পানি আইনের যথাযথ বাস্তবায়নে আরজেএসসি সক্ষমতা আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।             

অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম বলেন, কোম্পানি আইনে ‘মার্জার এবং ‘একুইজেশন কে অন্তর্ভুক্তির কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, বর্তমানে কোনো কোম্পানির অবলুপ্তির প্রক্রিয়া বেশ দীর্ঘ ও ব্যয়সাপেক্ষ, তাই প্রস্তাবিত কোম্পানি আইনে বিষয়টি সহজীকরণে প্রয়োজনীয় সংশোধন করা প্রয়োজন। এছাড়াও তিনি খসড়া আইনে ‘বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর)’ এবং ‘মধ্যস্থতা কে বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করেন এবং সেই সাথে পাবলিক লিস্টেড কোম্পানি নয়, এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমে আরও স্বচ্ছতা আনায়নের লক্ষ্যে ‘ইন্ডিপেনডেন্ট ডিরেক্টর বাধ্যতামূলক করার দাবি জানান। সকল কোম্পনির ক্ষেত্রে ‘কোম্পানি সচিব’ নিয়োগ, কাজের পরিধি নির্ণয়, স্বচ্ছতা ও জাবাদিহি একান্ত অপরিহার্য বলে তিনি মতপ্রকাশ করেন।        

ঢাকা চেম্বার সভাপতি ব্যারিস্টার সমীর সাত্তারের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ইউনিলিভারের এমডি জাভেদ আক্তার, আইসিএবির সাবেক সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন, ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সের কান্ট্রি ম্যানেজার মার্টিন হলটম্যান, আইসিএমএবির চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান, আরজেএসসির রেজিস্টার মো. আব্দুস সামাদ আল আজাদ প্রমুখ।

কোম্পানি আইন যুগোপযোগী করতে হাইকোর্টের ১৪ পরামর্শ : জেলা ও বিভাগে আদালত প্রতিষ্ঠা, বর্তমান আইনকে সংশোধন করে ভারতের আদলে নতুন কোম্পানি আইন প্রণয়নসহ আইনটি যুগোপযোগী করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে ১৪টি পরামর্শ দিয়েছেন হাইকোর্ট। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এ পরামর্শ দেন হাইকোর্ট। হাইকোর্ট বলেছেন, বর্তমান কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ অনেক ক্ষেত্রেই প্রয়োগের অনুপযোগী। কোম্পানি আইন ১৯৯৪ এটিকে বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে এটি পুরোটাই কোম্পানি আইন ১৯১৩-ই রয়ে গেছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশকে উন্নত দেশের পর্যায়ে নিতে হলে অবশ্যই ১০৯ বছরের পুরোনো কোম্পানি আইন আমূল পরিবর্তন একান্তভাবে অপরিহার্য। তাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে আইনটি যুগোপযোগী করতে ১৪টি পরামর্শ দেন হাইকোর্ট। পরামর্শগুলো হলো অতি দ্রুততার সঙ্গে ভারতের কোম্পানি আইনের আদলে বাংলাদেশের কোম্পানি আইন সংশোধন করে নতুন কোম্পানি আইন প্রণয়ন এবং প্রতি বছর এ আইনের হালনাগাদী করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ। প্রতিটি জেলায় কোম্পানির সংখ্যানুপাতে এক বা একাধিক কোম্পানি আইনের ট্রাইব্যুনাল গঠন করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ।প্রতিটি বিভাগে একটি করে কোম্পানি আপিল্যাট ট্রাইব্যুনাল গঠন করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ। কোম্পানি আইনের অধীন অপরাধের জন্য বিশেষ  ফৌজদারি আদালত প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ। যৌথমূলধনী কোম্পানি ও কার্যসমূহের পরিদফতরকে (আরজেএসসি) আধুনিকীকরণ ও আইনি কাঠামো শাক্তিশালী করতে এবং এর সেবার উন্নয়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ। করপোরেট ল কোড বাংলায় প্রকাশ করে প্রত্যেক কোম্পানির অফিসে সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া। প্রত্যেক কোম্পানিতে একজন স্থায়ী আইন কর্মকর্তার পদ তৈরি করে স্থায়ী আইন কর্মকর্তা রাখা এবং কোম্পানি আইনে অভিজ্ঞ একজন আইনজীবীকে পরামর্শক রাখা বাধ্যতামূলক করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ। প্রতিটি জেলায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন কোম্পানি গঠন, ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন এবং নিয়মিত প্রতিটি কোম্পানির কর্মকর্তাদের বছরে অন্তত একবার এ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক করা। প্রতি কোম্পানিতে একজন করে নিরপেক্ষ পরিচালক, কোম্পানির সচিব, অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষক নিয়োগ বাধ্যতামূলক করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ। পরিশোধিত মূলধন পাঁচ কোটি টাকার উপরে হলে প্রত্যেক কোম্পানিতে সার্বক্ষণিক কোম্পানি সচিব রাখা বাধ্যতামূলক করে (যারা আইসিএসবির সদস্য হবে) প্রয়োজনীয় পরিপত্র ইস্যু করা। কোম্পানির কার্যালয় যে শহরে নিবন্ধিত, সে শহরে এজিএম বাধ্যতামূলক করে দ্রুত পরিপত্র ইস্যু করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ। শেয়ারবাজারের আইনের সঙ্গে সংঘাত এড়ানো, কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) অনাহত পরিস্থিতির অবসান, রিটার্ন দাখিল সহজতর করা ইত্যাদি বিষয় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ। এজিএমে বা অন্য কোথাও কোম্পানির পক্ষ থেকে শেয়ারহোল্ডারদের কোনোরূপ উপহার, উপঢৌকন, নগদ অর্থ দেওয়া সম্পূণরুপে নিষিদ্ধ করে বিধি প্রণয়ন। এজিএম অনুষ্ঠানে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির নিবন্ধন আপনা-আপনি বাতিল মর্মে বিধি প্রণয়ন, লাভ-ক্ষতির হিসাব, উদ্বৃত্তপত্র, রিটার্ন বা করের বিষয় আরজেএসসিতে দাখিল করার বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে বিধি-বিধান করার পরামর্শ দেন হাইকোর্ট।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা