× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

আট বছরে সর্বনিম্ন এডিপি বাস্তবায়ন

এম আর মাসফি

প্রকাশ : ১৬ নভেম্বর ২০২৩ ২১:৪১ পিএম

 ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

দেশের অর্থ সংকট এতটাই প্রকট হয়ে উঠেছে যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নও কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে চলতি বছরের প্রথম চার মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার ১১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। সাম্প্রতিক কোনো বছরে এমন খারাপ পরিস্থিতি আর দেখা যায়নি। এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের একই সময়ে এ হার ছিল ১১ দশমিক ৪৮ শতাংশ। গতকাল বৃহস্পতিবার বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণে এ চিত্র দেখা যায়।

আইএমইডির প্রতিবেদন ঘেঁটে দেখা যায়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা এডিপি বরাদ্দ রয়েছে। এর মধ্যে সরকারের ৫৮টি বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ে জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে এডিপি বাস্তবায়নে অর্থ খরচ করেছে ৩১ হাজার ৬৯২ কোটি টাকা। অর্থাৎ বরাদ্দের বিপরীতে চার মাসে প্রকল্প বাস্তবায়নের হার ১১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এটি গত আট বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারের সংস্থাগুলোকে এখন বিদেশি ঋণের প্রকল্পগুলোর ওপর বেশি নির্ভর করতে হচ্ছে। গত তিন মাসে সরকারের অর্থায়ন থেকে যে টাকা খরচ হয়েছে এর আগে এত কম অর্থ খরচ করার রেকর্ড নেই। অর্থবছরের অক্টোবর পর্যন্ত সরকারের অর্থায়ন থেকে খরচ হয়েছে ১৮ হাজার ৮১৩ কোটি টাকা, যা মোট খরচের ১১ দশমিক ১৩ শতাংশ। কাছাকাছি কোনো সময়ে এর চেয়ে কম খরচ আর হয়নি। এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের একই সময়ে খরচ হয়েছে ১১ দশমিক ৯৪ শতাংশ, যা চলতি অর্থবছরের চেয়েও বেশি।

এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ১১ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এরপর গত কয়েক বছরে একই সময়ে অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এ ছাড়া বাকি বছরগুলোতে এর ওপরেই ছিল। এমনকি করোনার সময়ও ২০২০-২১ অর্থবছরে এ হার ছিল ১২ দশমিক ৭৯ শতাংশ।

বৈদেশিক ঋণে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) এক প্রকল্প পরিচালক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে আমরা বিদেশি ঋণের প্রকল্পে সরকারের থেকে সিডি ভ্যাটের বরাদ্দ নিতে না পারায় ঋণছাড় করতে পারছি না। তাহলে বুঝতে পারছেন দেশীয় প্রকল্পগুলোর কী অবস্থা। অর্থ সংকটে প্রকল্পগুলো খুবই ধীরগতিতে চলছে।

আইএমইডি সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১ হাজার ৩৯২টি প্রকল্পের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটের (এডিপি) বরাদ্দ ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা। প্রথম চার মাসে সব মন্ত্রণালয় এবং বিভাগ মিলে খরচ করছে ৩১ হাজার ৬৯২ কোটি টাকা।

হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে এখনও খরচের খাতা খুলতে পারেনি বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ। মাত্র ০.১০ শতাংশ খরচ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। গত অর্থবছর এক টাকাও খরচ করতে না পারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবার চার মাসে খরচ করেছে ৩ দশমিক ২৯ শতাংশ। এ ছাড়া ২ দশমিক ৯৮ শতাংশ খরচ করেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। ৩ দশমিক ৭ শতাংশ খরচ করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়। আর ৫ শতাংশের কম খরচ করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

চলতি অর্থবছরের চার মাসে খরচ এবং এডিপি বাস্তবায়ন হারে এগিয়ে রয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, রেলপথ মন্ত্রণালয়, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, সংসদবিষয়ক বিভাগ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়সহ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ।

স্থানীয় সরকার বিভাগ খরচ করেছে ৬ হাজার ৭২৩ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ বিভাগ খরচ করেছে ৩ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা। ৩ হাজার ১৩০ কোটি টাকা খরচ করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা খরচ করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। আর সর্বোচ্চ ৪২ দশমিক ৮৯ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করেছে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ। ৩০ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ইআরডি। লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ খরচ করেছে ২৫ দশমিক ৬০ শতাংশ। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় খরচ করেছে ২৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় খরচ করেছে ২৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ।

এদিকে আগের অর্থবছরের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়ন ৮ দশমিক ৫৮ শতাংশীয় পয়েন্ট কমে গিয়েছিল। সে অবস্থা থেকে কিছুটা উন্নতি হচ্ছে এ অর্থবছর। গত অর্থবছরে সরকারের এডিপি বাস্তবায়ন হার ছিল ৮৪ দশমিক ১৬ শতাংশ, যা আগের অর্থবছরে ছিল ৯২ দশমিক ৭৪ শতাংশ। 

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা আইএমইডির কর্মকর্তারা জানান, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে নির্মাণ উপকরণের দাম বাড়ায় অনেক প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে। প্রকল্প ব্যয়ে সরকারের কৃচ্ছ্রসাধন এবং তহবিলের সীমিত ছাড়ও এডিপি বাস্তবায়ন হার কমিয়েছে।

চলমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় অগ্রাধিকার অনুসারে বিভিন্ন প্রকল্পকে এ, বি ও সি ক্যাটাগরিতে ভাগ করেছে সরকার। সবচেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ বলে চিহ্নিত প্রকল্পগুলোকে রাখা হয়েছে ‘সি’ ক্যাটাগরিতে। এসব প্রকল্পের জন্য অর্থছাড় সাময়িকভাবে বন্ধ আছে বলে জানান পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। এ ছাড়া ‘বি’ ক্যাটাগরিভুক্ত প্রকল্পগুলোর জন্য ৭৫ শতাংশ অর্থছাড়ের কথা বলা হয়েছে। আর ‘এ’ ক্যাটাগরির প্রকল্পগুলোর জন্য নির্ধারিত তহবিলের ১০০ শতাংশই ছাড় করা যাবে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক পরিচালক ড. মুস্তফা কে মুজেরী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সরকারকে টাকা ছাপিয়ে অর্থের জোগান দিতে হচ্ছে। আবার রাজস্ব আহরণও লক্ষ্য অনুযায়ী হচ্ছে না। এ কারণে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অর্থছাড় করছে।’ 

তিনি বলেন, ‘সরকারের এখন পুরো মনোযোগ নির্বাচনের দিকে। ফলে তারা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তদারকির চেয়ে নির্বাচন-সংক্রান্ত কাজে বেশি সময় দিচ্ছে। ফলে এডিবি বাস্তবায়ন হার কমছে এবং আগামী কয়েক মাসও এডিপি বাস্তবায়নে ধীরগতি থাকবে।’


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা