ওবায়দুল আকবর রুবেল, ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম)
প্রকাশ : ১৬ নভেম্বর ২০২৩ ১৬:০৪ পিএম
আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০২৩ ১৮:২৫ পিএম
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে নিজ ছাদবাগানে তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা হামিদুর রহমান। সম্প্রতি তোলা ছবি। প্রবা ফটো
শখের বশে অনেক কাজই করে থাকে মানুষ। সেই শখের কাজ থেকে যদি আয়ের পথও তৈরি হয়, তবে তা সোনায় সোহাগাই বটে। বলছি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির হামিদুর রায়হানের কথা।
ছোটবেলা থেকেই বৃক্ষপ্রেমী হামিদুর শখের বশে ছাদে গড়ে তোলেন ছোট্ট এক বাগান। কয়েক বছরের ব্যবধানে সেই বাগানে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে হরেক রকমের প্রায় ৩০০ প্রজাতির ফুল ও ফলগাছ।
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ফটিকছড়ি পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা হামিদুর পেশায় একজন টেলিকম ব্যবসায়ী। ব্যবসার পাশাপাশি এই বাগান থেকেই গাছ ও চারা বিক্রি করে আয় হয় প্রায় ত্রিশ হাজার টাকা। ছাদবাগানের পাশাপাশি উপজেলার পাইন্দং ও নাজিরহাট পৌরসভা এলাকায় দুটি নার্সারিও আছে তার।
সরেজমিনে দেখা যায়, ছাদে সারিবদ্ধভাবে ড্রাম ও টবে দেশি-বিদেশি ফুল, ফল ও সবজির যেন রাজ্য গড়ে তুলেছেন হামিদুর। আছে লাউ, কুমড়া, পুঁইশাকের মতো সবজির জন্য বাঁশ দিয়ে তৈরি বিশেষ মাচা। এ সময়ের মৌসুমি সব ফুল, ফল ও সবজিতে শোভিত হয়ে আছে গোটা ছাদবাগান। গোলাপ, হাসনাহেনা, গাঁদা, জবা, টগর, রজনীগন্ধা; কমলা, মালটা, আপেল কুল, পেয়ারা, জাম্বুরা, আম, আমড়া, আতা, কামরাঙ্গা, আখ; পেঁপে, বেগুন, শিম, মুলা, লাউ, টমেটো, ধনেপাতা এবং তুলসী, পুদিনা, ঘৃতকুমারী, বিভিন্ন ঔষধি গাছÑ কী নেই এ ছাদবাগানে। যখন যা ফলাতে চেয়েছেন, আগ্রহ করে তিনি সবই ফলিয়েছেন।
হামিদুরের এই ছাদবাগান অনুপ্রাণিত করেছে এলাকার সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে। তার বাগান দেখতে প্রতিদিনই স্থানীয় ও দূরদূরান্তের বৃক্ষ ও প্রকৃতিপ্রেমীরা আসেন। এলাকায় যারা ছাদবাগান তৈরিতে আগ্রহী এবং শৌখিন চাষিদের সহযোগিতা করে থাকেন তিনি। ছাদবাগান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিভিন্ন পরামর্শের জন্যে প্রায়ই তার কাছে আসেন আগ্রহীরা। হামিদুর চেষ্টা করেন নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে সবাইকে সহযোগিতা করতে।
কথা হয় হামিদুর রায়হানের সঙ্গে। তিনি বলেন, দিনের সব ক্লান্তি মুছে যায় ছাদবাগানে এলে। কয়েক বছর আগে ছাদে টবের মধ্যে কয়েকটি ফুল ও ফলের চারা রোপণ করেছিলাম। ধীরে ধীরে বিভিন্ন ফল ও ফুলগাছ বাড়তে থাকে। আমার এই
ছোট্ট বাগান দেখতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন দর্শনার্থী আসেন। আমি তাদের সঙ্গে সময় কাটানো উপভোগ করি। ছোটবেলা থেকেই গাছের প্রতি ভালোবাসা ছিল। শখের বশে তৈরি করা বাগান থেকে উদ্যোক্তা হয়ে গেলাম। গাছ ও চারা বিক্রি করে মাসে এখান থেকেই ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করি। বর্তমানে আমার বাগানে প্রায় তিনশ প্রজাতির বিভিন্ন ফল ও ফুলের গাছ রয়েছে। এছাড়াও আছে বনসাই গাছ।
হামিদুর আরও বলেন, নিজের চাষের নিরাপদ ফল ও সবজি খেতে পারছি। শৌখিনতার পাশাপাশি মিটছে পরিবারের পুষ্টির চাহিদা।
ফটিকছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান বলেন, ‘ছাদবাগান কৃষির একটি নতুন সংস্করণ। খাদ্য পুষ্টি নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য ছাদগুলোকে সর্বোচ্চ ব্যবহারের গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। যারা ছাদবাগান করতে চান, তাদের কৃষি অফিস থেকে বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হবে বলে জানান এ কর্মকতা।’