প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০২৩ ২১:৩৫ পিএম
প্রবা ফটো
রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে খেলাপি ঋণ। ফলে বড় অঙ্কের প্রভিশন ঘাটতিতে পড়েছে। এতে মূলধন ঘাটতি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মূলধন ঘাটতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে করা রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের জুন ভিত্তিকি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) পর্যালোচনা করা হয়েছে। ওই পর্যালোচনা বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এ নির্দেশনা দেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সভাপত্বিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের এমডি এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, মাত্রাতিরিক্ত খেলাপি ঋণ, মূলধন ঘাটতি ও প্রভিশন ঘাটতিসহ এমওইউ’তে আরও যেসব বিষয় রয়েছে, তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা করা হয়েছে। এমওইউতে যেসব লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে, তার বেশিরভাগই অর্জন করতে পারেনি। তাই আগমী ডিসেম্বরের মধ্যে যতুটুক অর্জন করতে পারেনি, তা করার নির্দেশ দেয়া হয়।
তারা আরও জানান, এবারের আলোচনায় মূলধন ঘাটতির বিষয়টি বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। স্বল্প সময়ের মধ্যে তা থেকে বেরিয়ে আসতে বলেন গভর্নর। যেসব ব্যাংকের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণের হার (সিআরএআর) ও ক্যাপিটাল কনভারভেশন বাফার (সিসিবি) সাড়ে ১২ শতাংশের নিচে রয়েছে। তা দ্রুত সময়ের মধ্যে সাড়ে ১২ শতাংশে উন্নতি করতে বলা হয়।
দেশের ব্যাংক খাতের জন্য অনুসরণীয় ব্যাসেল-৩-এর মানদণ্ড অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণের হার (সিআরএআর) ১০ শতাংশ ও সিসিবি ন্যূনতম আড়াই শতাংশ থাকার কথা। যদিও চলতি বছরের জুন পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক ৫ দশমিক ১২ শতাংশ, জনতা ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ, রূপালী ৫ দশমিক ১২ শতাংশ এবং সোনালী ৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ সিআরএআর রাখতে পেরেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মূলধন ঘাটতি ছিল অগ্রণী ব্যাংকের। ব্যাংকটির ঘাটতির পরিমাণ ৩ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা। এর পর রূপালী ব্যাংকের ২ হাজার ২৩০ কোটি, জনতার ২ হাজার ১৮৯ কোটি এবং সোনালীর ১০ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, পরিশোধের সক্ষমতা যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই না করে ঋণ দেয়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের ঋণ আদায় কমে যাচ্ছে। বাড়ছে খেলাপি ঋণ। আর ঋণখেলাপির কারণে ঋণের গুণগত মান কমে যাচ্ছে। এতে বেড়ে যাচ্ছে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ এবং কমছে মূলধন সংরক্ষণের সক্ষমতা। আর সক্ষমতা কমে যাওয়ায় এসব ব্যাংকের ঝুঁকি সহনক্ষমতাও কমে যাচ্ছে।
এদিকে গত জুন শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হারও বেড়েছে। এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার সহনীয় পর্যায় নামিয়ে আনার জন্য নির্দেশনা দেন গভর্নর। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন শেষে চার ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ রয়েছে জনতা ব্যাংকে। জুন শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৫৪২ কোটি টাকা বা ৩২ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এরপর অগ্রণী ব্যাংকে ১৬ হাজার ৪৯৫ কোটি বা ২৩ দশমিক ৫১ শতাংশ, রূপালী ব্যাংকের ৮ হাজার ৩৯ কোটি বা ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ এবং সোনালী ব্যাংকের ১২ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা বা ১৪ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
বিশেজ্ঞরা বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর দুর্দশা নতুন নয়, বছরের পর বছর ধরে এ ব্যাংকগুলোর আর্থিক পরিস্থিতি খারাপ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকেও এমন কোনো উদ্যোগ আমরা দেখিনি, যেটির মাধ্যমে এ ব্যাংকগুলোর উন্নতি হবে। এমওইউ স্বাক্ষরসহ যেসব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, সেগুলো অকার্যকর হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। গতানুগতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে এ ব্যাংকগুলোর আর্থিক স্বাস্থ্য ভালো করা সম্ভব নয়। পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে হলে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে।