শ্রমিক আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত ১২৩ কারখানা
প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১১ নভেম্বর ২০২৩ ২১:০২ পিএম
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৩ ২২:১০ পিএম
প্রবা ফটো
শিল্প পুলিশের ডিআইজি জাকির হোসেন খান বলেছেন, এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে পোশাকশ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোকে কেন্দ্র করে আন্দোলনে গাজীপুরে ১২৩টি কারখানায় ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চলেছে। এসব ঘটনায় বিভিন্ন থানায় ২২টি মামলায় এ পর্যন্ত ৮৮ জন গ্রেপ্তার হয়েছে।
শনিবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে গাজীপুরের কোনাবাড়িতে শ্রমিক আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত তুসুকা গার্মেন্টস পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
এদিকে পোশাকশ্রমিকদের জন্য ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি অনুযায়ী কার কত বেতন বাড়ল তা জানিয়েছে বিজিএমইএ।
ডিআইজি বলেন, গার্মেন্টস খাতে শ্রমিকের মজুরি বাড়ানোকে কেন্দ্র করে এখানে শ্রমিক অসন্তোষ এখনও থামেনি। শিল্প পুলিশ, গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশ, র্যাব, জেলা পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী- সবাই এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় কাজ করছে। এ পর্যন্ত ৮৮ জন গ্রেপ্তার হলেও অন্য আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে। আমাদের ধারণা, একটা গ্রুপ এদের উস্কানি দিচ্ছে আন্দোলন করার জন্য। এখানে যারা উস্কানি দিচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে।
তিনি আরও বলেন, সাধারণ শ্রমিকদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। যারা এই ধ্বংসাত্মক কাণ্ডে জড়িত এবং ওই শ্রমিকদের সাথে বহিরাগত লোক যুক্ত আছে, তারাই গ্রেপ্তার হবে। গাজীপুরের কোনাবাড়িতে ১৭টি কারখানা বন্ধ আছে। মালিক কর্তৃপক্ষ যাতে কারখানা চালু রাখে, আমরা তাদের সাথে কথা বলেছি। তারা দ্রতই উৎপাদনে যাবে।
৭ ক্যাটাগরির শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ
পোশাকশ্রমিকদের ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি অনুযায়ী কার কত বেতন বাড়ল, তা জানিয়েছে বিজিএমইএ। শনিবার বিজিএমইএ পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল এ তথ্য জানান।
বিজিএমইএর তথ্যে দেখা যায়, একজন অদক্ষ সহকারী মেশিন অপারেটরের বেতন ৮ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকা বেড়ে ১২ হাজার ৫০০ টাকা হয়েছে। সাধারণ মেশিন অপারেটরের বেতন ৮ হাজার ৪২০ টাকা থেকে ৪ হাজার ৬০৫ টাকা বাড়িয়ে ১৩ হাজার ২৫ টাকা করা হয়েছে। জুনিয়র সুইং মেশিন অপারেটর কার্টার, ফোল্ডার, অন্য শ্রমিকদের বেতন ৪ হাজার ৮০৩ টাকা বাড়িয়ে ১৩ হাজার ৫৫০ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া সুইং মেশিন অপারেটর এবং কোয়ালিটি ইন্সপেক্টরদের বেতন ৯ হাজার ৩৪৭ টাকা থেকে ১৪ হাজার ১৫০ টাকা করা হয়েছে। সাধারণ মেকানিক, সিনিয়র ম্যাকানিক সুইং অপারেটর এবং অন্য শ্রমিকদের বেতন ১৪ হাজার ৭৫০ টাকা করা হয়েছে, যা ছিল ৯ হাজার ৮৪৫ টাকা।
মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, যেহেতু শিল্প বেড়ে উঠছে, তাই শিল্পের সম্প্রসারণের সঙ্গে শ্রমিক ভাইবোনদের কল্যাণেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
গত ৭ নভেম্বর দেশের তৈরি পোশাকশ্রমিকদের জন্য সাড়ে ১২ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি চূড়ান্ত করেছে নিম্নতম মজুরি বোর্ড। মজুরি বোর্ডের বৈঠকের পর মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে এ ঘোষণা দেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই আমরা এটা ঘোষণা করছি। ন্যূনতম মজুরি ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়বে। ৮ হাজার টাকা থেকে সাড়ে ১২ হাজার টাকা হবে। সঙ্গে বছরে ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট থাকবে।
বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, প্রথম মজুরি বোর্ড গঠনের পর ১৯৯৪ সালে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৯৩০ টাকা করা হয়। তারপর ১২ বছর পর করা হয় ১ হাজার ৬৬২ টাকা। ২০১০ সালে ৩ হাজার টাকা করা হয়। এর তিন বছর পার হতেই ২০১৩ সালে ৫ হাজার ৩০০ টাকা বেতন নির্ধারণ করা হয়। এরপর ২০১৮ সালে আবার ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয় ৮ হাজার টাকা। এবার সাড়ে ৪ হাজার টাকা বাড়িয়ে সাড়ে ১২ হাজার টাকা করা হয়েছে।
সাভার-আশুলিয়ায় শতাধিক কারখানা বন্ধ
আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিক বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের ঘটনায় শতাধিক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া শ্রমিক অসন্তোষের জেরে পাঁচটি মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে
শনিবার টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের ইউনিক, শিমুলতলা, জামগড়া, ছয়তলা, নরসিংহপুর, নিশ্চিন্তপুর ও বিশমাইল-জিরাবো সড়কের কাঠগড়া আমতলা, বড় রাঙ্গামাটিয়ার অধিকাংশ পোশাক কারখানার সদর দরজায় ঝুলছে বন্ধের নোটিস।
এ সময় বেশকিছু কারখানার সামনে কাজে যোগ দিতে এসে বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিলেন অনেক শ্রমিক। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কারখানাগুলো ও আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়।
কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হওয়ার বিষয়টি শ্রমিকদের মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়ে জানিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আগামী অ্যাপারেলস লিমিটেডের এক শ্রমিক বলেন, আন্দোলনের কারণে কারখানা কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটি ঘোষণা করেছে। আমাদের মোবাইলে বন্ধের মেসেজ পাঠানো হয়েছে। এছাড়া কারখানার গেটেও টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে বন্ধের নোটিস। অনেকেই কারখানায় গিয়ে নোটিস দেখে ফিরে গেছে।
কারখানা কর্তৃপক্ষ যে আইনের মাধ্যমে ছুটি ঘোষণা করেছে, সেই আইনে কারখানা যতদিন বন্ধ থাকবে, ততদিনের বেতন পাবে না শ্রমিকরা।
আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, শ্রমিক আন্দোলনের মুখে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে একশর বেশি কারখানা শ্রম আইনের-১৩-এর ১ ধারায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাই মিলে এখানে ১ হাজার ৭৯২টি কারখানার মধ্যে ১৩০টি বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে কিছু কারখানায় সাধারণ ছুটি ছিল; এগুলো আগামীকাল (আজ) খুলবে। আজকে শ্রমিকরা সড়কে অবস্থান নিয়ে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলেও পারেনি।
মামলা ও গ্রেপ্তারের বিষয়ে তিনি বলেন, এ পর্যন্ত অসন্তোষের ঘটনায় পাঁচটি মামলায় চারজনকে আটক করা হয়েছে। এসব মামলায় ১৬ জন এজাহারনামীয়, বাকি সবাই অজ্ঞাতনামা আসামি। অজ্ঞাত কতজন আসামি তা এখনই বলা যাচ্ছে না। কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যেন হয়রানির শিকার না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।
তবে প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর কাছে তথ্য রয়েছে- তিন মামলায় অজ্ঞাত দেড় হাজার জন ও উস্কানিদাতাদের আসামি করা হয়েছে।