× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

তাড়াহুড়া করে আরও ৪২ প্রকল্প উঠছে একনেকে

এম আর মাসফি

প্রকাশ : ০৮ নভেম্বর ২০২৩ ১০:১৪ এএম

আপডেট : ০৮ নভেম্বর ২০২৩ ১১:২৪ এএম

তাড়াহুড়া করে আরও ৪২ প্রকল্প উঠছে একনেকে

সর্বশেষ অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির একনেক সভায় ৮৪টি প্রকল্প উপস্থাপন করা হলেও প্রধানমন্ত্রীর ব্যস্ততার কারণে অনুমোদন পায় ৭৫টি। বাকি ৯টি প্রকল্প পরের একনেকে পাস করার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী। তাই তাড়াহুড়ো করে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) করা হচ্ছে একনেক সভা। যেখানে অনুমোদনের জন্য তোলা হচ্ছে ৪২ প্রকল্প। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এসব প্রকল্পের বেশিরভাগই নেওয়া হয়েছে তাড়াহুড়া করে। সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই না করেই সম্পূর্ণ হয়েছে পিইসি সভা।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ মাসে ৩ শতাধিক প্রকল্পের মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়েছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে ডিপিপি যাচাই-বাছাইয়ের পর কার্যপত্র তৈরি করে পিইসি সভা করতে হিমশিম খাচ্ছেন পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা। যে কারণে বেশিরভাগ প্রকল্পেই থেকে যাচ্ছে গলদ। কিছু প্রকল্পে বেশি ব্যয়ের প্রস্তাব অনুমোদন পেয়ে যাচ্ছে। এভাবে তাড়াহুড়া করে প্রকল্প নিতে গিয়ে সরকারের অর্থের অপচয় হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প যাচাই-বাছাইয়ের দায়িত্বে থাকা কয়েকজন কর্মকর্তা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘গত একনেক সভায় যে প্রকল্পগুলো অনুমোদন হয়েছে সেগুলোর মধ্যে কয়েকটির পিইসি সভাই হয়নি সঠিকভাবে। কয়েকটি প্রকল্পে যে পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো মানা হয়নি। তারপরও সেগুলো অনুমোদন পেয়েছে। কয়েকটি প্রকল্পে নতুন করে অঙ্গ যুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু সেগুলো আর যাচাই-বাছাই না করেই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি খাতে বেশি ব্যয় প্রস্তাবও পাওয়া গেছে।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার একনেক সভার জন্য যে প্রকল্পগুলো তোলা হচ্ছে, সেগুলোর অধিকাংশেরই পিইসি সভা তাড়াহুড়া করে হয়েছে। রাজনৈতিক চাপে বেশিরভাগ প্রকল্পেরই যাচাই-বাছাই সঠিকভাবে হয়নি। আগামী একনেকের কার্যতালিকায় শেরেবাংলা নগরে পার্ক তৈরির প্রকল্পটিকে এক নম্বরে রাখা হয়েছে। অথচ এটির পিইসি সভাই সঠিকভাবে হয়নি। বেশ কিছু খাতে ব্যয় বিভাজন নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও সেগুলো সংশোধন না করেই অনুমোদনের জন্য তোলা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পরিকল্পনা কমিশনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এত প্রকল্পের চাপ এলে আমরা সেসব কীভাবে দেখব? তাই সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই না করেই পিইসি সভা হয়ে যাচ্ছে। ব্যয় বিভাজন বা বিভিন্ন বিষয় যাচাই-বাছাইয়ের জন্য তো কিছুটা সময় প্রয়োজন।

যদিও পরিকল্পনা সচিব সত্যজিৎ কর্মকারের দাবি, প্রকল্প সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করেই একনেক সভার জন্য তোলা হচ্ছে। 

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে একনেকের ৬টি বৈঠকে ২০০টির মতো প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। গত একনেকেই অনুমোদন পেয়েছে ৭৫ প্রকল্প। আগামী একনেকে অনুমোদন পেতে যাচ্ছে আরও ৪২ প্রকল্প। বাস্তবতা হলো, সরকার চলমান প্রকল্পগুলোতেই চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ দিতে পারছে না। একেকটি প্রকল্প বছরের পর বছর ঝুলে আছে টাকার অভাবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে যে প্রকল্পগুলো এখন অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে, সেগুলো এডিপিতে বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। দেখা যাবে, আগামী দুই বছরে মন্ত্রণালয়গুলো তেমন বরাদ্দই দিতে পারবে না। ফলে প্রকল্পের মেয়াদ বেড়ে যাবে। আর মেয়াদ বাড়লে ব্যয়ও বাড়বে। গত নির্বাচনের আগে যেসব প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, সেগুলোর বেশিরভাগই এখনও মাঝপথে।

উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকার এডিপি নেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে ১ হাজার ৩০৯টি চলমান প্রকল্প রয়েছে। ৮২৫টি প্রকল্প বরাদ্দহীন নতুন প্রকল্প হিসেবে রাখা হয়েছে। সেই তালিকা থেকেই এখন প্রকল্প পাস করা হচ্ছে।

নির্বাচনের আগে-আগে বেশি প্রকল্প নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘আমরা অবশ্যই ভোটের রাজনীতি করি। প্রকল্প বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থাকে। ভোটের সময়ই বেশি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাব। এখন পর্যন্ত যত বড় প্রকল্পের উদ্বোধন হয়েছে, তা জনগণের কাজে লেগেছে।’

আগামী একনেকে যেসব প্রকল্প অনুমোদন পেতে যাচ্ছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এলাকায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পার্ক নির্মাণ, শেরেবাংলা নগর প্রশাসনিক এলাকায় বহুতল সরকারি অফিস ভবন নির্মাণ, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ১২৩ ফ্ল্যাট নির্মাণ, চট্টগ্রাম শহরে জলাবদ্ধতা দূর করতে খাল পুনরুদ্ধার সম্প্রসারণ সংস্কার ও উন্নয়ন; সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর অর্থনৈতিক অঞ্চলের সঙ্গে লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও ফেনী জেলার সংযোগকারী সড়ক যথাযথ মানে উন্নীত করা, ইলিয়টগঞ্জ মুরাদনগর রামচন্দ্রপুর বাঞ্ছারামপুর জেলা মহাসড়কটির প্রশস্ততা যথাযথভাবে বাড়ানো, ভাঙ্গা-যশোর-বেনাপোল মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করার জন্য ভূমি অধিগ্রহণ, গাবতলী সিটিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ক্লিনারদের জন্য বহুতলবিশিষ্ট আবাসিক ভবন নির্মাণ, বর্ধিত ঢাকা পানি সরবরাহে রেজিলিয়ান্স প্রকল্প, ঢাকা পানি সরবরাহ উন্নয়ন, ঢাকা স্যানিটেশন উন্নয়ন, বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় বিভিন্ন রাস্তা উন্নয়ন, জলাবদ্ধতা নিরসন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন।

এ ছাড়া একনেক সভায় উঠছে- মুগদা মেডিকেল কলেজের প্রয়োজনে অবকাঠামো নির্মাণ, মহেশখালী অর্থনৈতিক অঞ্চল তিন-এর গ্যাস বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ উন্নয়ন, যশোর রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা, সমগ্র দেশে শহর ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণ দ্বিতীয় পর্ব, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক মৌলভীবাজার প্রথম পর্যায়ে প্রকল্প, পার্বত্য চট্টগ্রাম পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প ইত্যাদি।

শেরেবাংলা নগরে পার্ক নির্মাণ প্রকল্প

স্থপতি লুই আই কানের নকশা অনুযায়ী রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের ফাঁকা স্থানে (পুরোনো বাণিজ্য মেলার মাঠ) সচিবালয় হওয়ার কথা ছিল। তবে সেখানে এখন সচিবালয় না হয়ে হচ্ছে পার্ক। সেই পার্ক নির্মাণে অভ্যন্তরীণ পয়োনিষ্কাশনে রেটশিডিউলের চেয়ে তিনগুণ বেশি ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া বেশি ব্যয় ধরা হয়েছে কয়েকটি খাতে, যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন।

গত ৬ নভেম্বর প্রকল্পটির মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। তবে সোমবার পিইসি সভা হয়ে এত দ্রুত কীভাবে প্রকল্প সংশোধন হয়ে একনেকে উঠছে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

শেরেবাংলা নগরে পার্ক নির্মাণে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রকল্প প্রস্তাব বিশ্লেষণ করে পরিকল্পনা কমিশন বলছে, প্রকল্পে ৭৮৪ দশমিক ৮৪ বর্গমিটার পয়োনিষ্কাশন বাবদ ৬৩ লাখ ৫১ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। পিডব্লিউডির রেটশিডিউল-২০২২ অনুযায়ী স্পেশাল টাইপ ভবনের জন্য অভ্যন্তরীণ পয়োনিষ্কাশন বাবদ প্রতি বর্গমিটারে ব্যয় হওয়ার কথা ২ হাজার ৬৯৫ টাকা। কিন্তু প্রস্তাবিত প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৯০ টাকা করে। এটি বেশি বলে মনে করা হচ্ছে।

এছাড়া প্রকল্পের আওতায় ২০ হাজার গ্যালনের দুটি ভূগর্ভস্থ জলাধার নির্মাণ বাবদ ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৫২ লাখ ৪২ হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রতি গ্যালন ১৩১ টাকা ধরা হয়েছে। পিডব্লিউডি রেটশিডিউল ২০২২ (সংশোধিত) অনুসারে প্রতি গ্যালনের দাম হওয়ার কথা ১১৭ টাকা। সে হিসাবে ব্যয় ধরার কথা মোট ৪৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এ বিষয়ে পিইসি সভায় প্রশ্ন তোলা হবে।

প্রকল্প প্রস্তাবে ব্যায়াম ও বাচ্চাদের খেলার সামগ্রী বাবদ ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এইচটি কেবল ও আনুষঙ্গিক কাজে থোক ধরা হয়েছে আরও ১ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এগুলো রেটশিডিউলবহির্ভূত আইটেম হওয়ায় তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটির মাধ্যমে বাজারদর যাচাই করে নির্ধারণের প্রয়োজন ছিল। এ বিষয়েও প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। এছাড়া পাশাপাশি দুটি সার্ভিস ব্লক ৭৮৪ দশমিক ৮৪ বর্গমিটার নির্মাণ বাবদ ৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। এই ব্যয় প্রাক্কলনের ক্ষেত্রে প্রিলিমিনারি কস্ট এস্টিমেট অনুসরণ করা হয়েছে কি না তা নিয়েও পিইসি সভায় প্রশ্ন তোলা হবে বলে জানা গেছে।

প্রকল্পে দুই টন ওজনের ৬টি এসির প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু পার্কের কোথায় এই এসি বসবে, কেন বসবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়নি। এ সম্পর্কেও পিইসি সভায় আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। 

সার্বিক বিষয়ে এ সম্পর্কে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত-অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) এমদাদ উল্লাহ মিয়ান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘কয়েকটি খাতে ব্যয় বেশি ধরা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। পিইসি সভায় এসব বিষয়ে জানতে চাওয়া হবে। তবে পার্কটি হওয়া দরকার। পার্ক হলে জায়গাটি অযথা পড়ে থাকবে না।’

প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, শেরেবাংলা নগর এলাকায় ১০৩ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থপতি লুই আই কানের মাস্টারপ্ল্যানে নির্দেশিত মোট ২৯ দশমিক ৭৯ একর উন্মুক্ত জায়গায় পরিকল্পিত ল্যান্ড স্কেপিং ও পার্কের সুবিধাদি স্থাপনের মাধ্যমে সামগ্রিক পরিবেশের উন্নতি ঘটানো হবে। এখানে পায়ে চলার পথ, খেলার মাঠসহ রমনা পার্কের মতো পার্ক তৈরি করা হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা