প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২৩ ২২:০৭ পিএম
বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সংগঠনটির ১০ প্রতিনিধি গভর্নরের সঙ্গে দেখা করেন। প্রবা ফটো
বর্তমানে পুনঃতফসিল করা ঋণের স্থিতি ২ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেওয়া বিশেষ নীতি সুবিধার কারণে ঋণ পুনঃতফসিলের পাহাড় তৈরি হয়েছে ব্যাংকগুলোতে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে কেউ যেন পুনঃতফসিল সুবিধা নিতে না পারে, সে বিষয়টি শক্তভাবে তদারকির পরামর্শ দিয়েছে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ)। সোমবার (৬ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সংগঠনটির ১০ প্রতিনিধি গভর্নরের সঙ্গে দেখা করেন। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে পরামর্শমূলক সভার অংশ ছিল এটি।
বৈঠক শেষে ইআরএফের সভাপতি রেফায়েতউল্লা মৃধা বলেন, অর্থনীতিকে কীভাবে আরও স্থিতিশীল করা যায় সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছে ইআরএফ। এর উত্তরে আমাদের অর্থনীতি খুব দ্রুত স্থিতিশীল অবস্থার দিকে যাবে বলে আশ্বাস দেন গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার। তিনি আরও জানান, এই মুহূর্তে রিজার্ভ থেকে আর কোনো বিনিয়োগ করবে না বাংলাদেশ ব্যাংক।
ইআরএফ সভাপতি বলেন, বিলাসী পণ্য আমদানিতে যেসব বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে তা যেন ঠিকমতো তদারকি করা হয়। আমদানি-রপ্তানির আড়ালে কোনোভাবেই যেন অর্থ পাচার না হয় সে বিষয়ে গুরুত্ব দিতে বলেছে সংগঠনটি।
প্রসঙ্গত, ব্যাংকগুলো সর্বশেষ ২০২২ সালে ৬৩ হাজার ৭১৯ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিল করেছে। তা অনুমোদন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আবার ব্যাংকগুলো নিজেরাও পুনঃ তফসিল করেছে। ফলে এসব ঋণ খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি। এরপরও গত বছরের শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা। গত জুন শেষে খেলাপি ঋণের এই অঙ্ক ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। পুনঃ তফসিল করা ঋণকে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা হলে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ২০ শতাংশ ছাড়িয়ে যেত।
আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ আগামী মাসের ডিসেম্বর পাওয়া যাবে। তার আগের দিন দাতা সংস্থাটির পর্ষদ সভায় ঋণ অনুমোদন হবে। আর স্টাফ পর্যায়ে ঋণের চুক্তি হওয়ায় এ ঋণ পাওয়া নিয়ে বিন্দুমাত্র সংশয়ের অবকাশ নেই।’
মূল্যস্ফীতির বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমরা বর্তমানে একেবারে তলানিতে এসেছি। আর তো নিচে নামার পথ নেই। আমরা সুড়ঙ্গের কাছ থেকে আলো দেখতে পাচ্ছি। চলতি অর্থবছরে আমরা রিবাউন্স (ঘুরে দাঁড়াব) করব। ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি হবে ৮ শতাংশ; যা আগামী জুনে সাড়ে ৬ শতাংশ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সিন্ডিকেট হচ্ছে। সেজন্য মানুষের কষ্ট হচ্ছে তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
অর্থ পাচারের জের টেনে আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, হুন্ডির চেয়ে ব্যবসার আড়ালে কমপক্ষে ১০ গুণ বেশি অর্থ পাচার হয়। যেমন– দুবাইতে ১৩ হাজার বাংলাদেশি কোম্পানি রয়েছে। এসব পাচারের অর্থে গড়া প্রতিষ্ঠান। একইভাবে পর্তুগালে আড়াই হাজার প্রতিষ্ঠান গড়া হয়েছে। অর্থের উৎস কিন্তু পাচার। আগে প্রতিমাসে প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে পাচার হতো। পরে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু এলসির পরিমাণ কমেনি। এজন্য এলসি বিল ৮-৯ বিলিয়নের স্থলে ৪-৫ বিলিয়নের স্তরে নেমেছে । এতে কিন্তু সরবরাহ কমেনি। তবে ডলার বাড়লে এলসির শর্ত তুলে দেওয়া হবে।