প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২৩ ১৬:১০ পিএম
বিকাশের চিফ এক্সটার্নাল অ্যান্ড করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার মেজর জেনারেল শেখ মো. মনিরুল ইসলাম (অব.)। প্রবা ফটো
দেশে বিকাশই প্রথম ডিজিটাল সেভিংস সেবা নিয়ে আসে। বর্তমানে বিকাশ অ্যাপেই খোলা যাচ্ছে চার ব্যাংক এবং এক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সেভিংস সেবা। এক সাক্ষাৎকারে সেবার এসব দিক নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের চিফ এক্সটার্নাল অ্যান্ড করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার মেজর জেনারেল শেখ মো. মনিরুল ইসলাম (অব.)
প্রশ্ন : মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় বিকাশের সাফল্যকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
উত্তর : ঠিক এক যুগ আগেও উন্নয়নশীল বাংলাদেশের এক বিশাল জনগোষ্ঠী গতানুগতিক ব্যাংকিং সেবার বাইরে ছিল। বিকাশ এই জনগোষ্ঠীকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় এনে তাদের আর্থিক লেনদেনে দিয়েছে সচলতা, সক্ষমতা ও স্বাধীনতা। গত এক যুগের এ যাত্রায় বিকাশ পরিণত হয়েছে দেশের প্রতিটি পরিবারের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে। বর্তমানে বিকাশের ভেরিফায়েড গ্রাহকসংখ্যা সাত কোটিরও বেশি। গ্রাহকদের এই ভালোবাসা ও বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করেই ডিজিটাল লেনদেনের সমার্থক শব্দ হয়ে উঠেছে বিকাশ। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) একটি গবেষণায় দেখা যায়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও নারীর ক্ষমতায়নে অত্যন্ত শক্তিশালী ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বিকাশ। প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো অভিঘাত বা সংকটের সময় মানুষের আয়-ব্যয়ের ওপরও ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে বিকাশের। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকাশের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদীরের হাতে ‘ফিনটেক পাইওনিয়ার’ অ্যাওয়ার্ড তুলে দেন দেশের মোবাইল আর্থিক সেবা খাতে এই অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে।
প্রশ্ন : সঞ্চয়সহ আর কী কী সেবা যুক্ত হয়েছে?
উত্তর : গ্রাহককেন্দ্রিক কোম্পানি বিকাশ সব সময় তার গ্রাহকদের চাহিদার কথা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে। সেই মনোভাব থেকেই বিকাশ প্রতিনিয়ত নিয়ে আসছে নিত্যনতুন ডিজিটাল আর্থিক সেবা। বাংলাদেশে বিকাশই প্রথম ডিজিটাল সেভিংস সেবা নিয়ে আসে। বর্তমানে বিকাশ অ্যাপেই খোলা যাচ্ছে চার ব্যাংক এবং এক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সেভিংস সেবা। শুধু তাই নয়, বিকাশ অ্যাপে গ্রাহকরা নিতে পারছে একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের জামানতবিহীন ডিজিটাল ন্যানো লোন। কোথাও না গিয়ে ঘরে বসেই ব্যাংকে লোন ও সেভিংসের মতো সেবাগুলো মুহূর্তের মধ্যে পাওয়ার এ সুযোগ সারা দেশের মানুষের মধ্যে এক বিশাল সাড়া জাগিয়েছে। এ ছাড়াও সেন্ড মানি, ক্যাশ ইন, ক্যাশ আউট, মোবাইল রিচার্জ, মার্চেন্ট পেমেন্ট, ব্যাংক টু বিকাশ অ্যাড মানি, ইউটিলিটি বিল পেমেন্ট, বিভিন্ন সরকারি সেবা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ফি পেমেন্ট, ডোনেশন, টোল পেমেন্ট, বাস-ট্রেন-লঞ্চ-বিমান ও সিনেমার টিকিট কেনা, ইনস্যুরেন্স পেমেন্টের মতো অসংখ্য সেবা খুব সহজেই গ্রাহকরা পেয়ে যাচ্ছে বিকাশের প্ল্যাটফর্মে।
প্রশ্ন : ই-কমার্স ও আউটসোর্সিং খাতে কতখানি জায়গাজুড়ে অবস্থান করছে বিকাশ?
উত্তর : বিকাশের যতগুলো পেমেন্ট সেবা রয়েছে, তার মাঝে অন্যতম হচ্ছে মার্চেন্ট পেমেন্ট। অনলাইনভিত্তিক কেনাকাটায় গ্রাহকের পছন্দের লেনেদেনের মাধ্যম হিসেবেও শীর্ষে রয়েছে বিকাশ। অনলাইন বা ফেসবুকভিত্তিক যেসব ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা রয়েছে, তাদের জন্য বিকাশ নিয়ে এসেছে পার্সোনাল রিটেইল অ্যাকাউন্ট (পিআরএ)। এ ছাড়াও বিকাশ লাখ লাখ ফ্রিল্যান্সারের কাজের ক্ষেত্রকে আরও সম্প্রসারিত করেছে। এখন রেমিট্যান্স সেবা ব্যবহার করে দেশের ফ্রিল্যান্সাররা খুব সহজেই তাদের পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট থেকে নিমেষেই নিজ নিজ বিকাশ অ্যাকাউন্টে টাকা নিয়ে আসতে পারছে। সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পেয়ে যাচ্ছে রেমিট্যান্সের ওপর সরকার ঘোষিত প্রণোদনাও। এমএফএসের মাধ্যমে যেকোনো সময় সহজে রেমিট্যান্স গ্রহণের সবচেয়ে বড় নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে বিকাশ। এই শক্তিশালী নেটওয়ার্কে বিশ্বের ৯০টিরও বেশি দেশ থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা তাদের কষ্টার্জিত রেমিট্যান্স ৮০টি আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার অর্গানাইজেশন (এমটিও) হয়ে দেশের ১৫টি ব্যাংকে সেটেলমেন্টের মাধ্যমে নিমিষেই প্রিয়জনের বিকাশ অ্যাকাউন্টে পাঠাতে পারছে।
প্রশ্ন : মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ঝুঁকি কেমন?
উত্তর : আর্থিক খাতে বিভিন্ন ধরনের প্রতারণা হয়, দুঃখজনকভাবে এমএফএস খাত এর বাইরে নয়। তবে গ্রাহককেন্দ্রিক বিকাশ এই ঝুঁকি মোকাবিলায় সব সময় সচেতন এবং বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে আসছে। বিকাশ নিয়মিতভাবে সাধারণ গ্রাহক ও স্টেকহোল্ডারদের জন্য বিভিন্ন রকম সচেতনতামূলক কর্মসূচি নিয়ে থাকে। প্রতারকদের পাতা ফাঁদ থেকে গ্রাহকদের রক্ষা করতে বিকাশ গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করে আসছে যেন কোনো অবস্থাতেই গ্রাহক তার অ্যাকাউন্টের গোপন পিন ও মোবাইলে আসা ওটিপি কারও সঙ্গে শেয়ার না করে। এ ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে নিয়মিত কর্মশালার আয়োজন করে থাকে বিকাশ।
প্রশ্ন : চার্জ কমানোর কি কোনো পরিকল্পনা আছে?
উত্তর : গ্রাহকের সুবিধা বিবেচনায় রেখে বিকাশ বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে আরও সাশ্রয়ী মূল্যে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে থাকে এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে। টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে সাধারণ গ্রাহকদের জন্য প্রিয় গ্রাহক, প্রিয় এজেন্টে এ রকম বেশ কিছু ব্যবস্থা রয়েছে। একজন গ্রাহক তার পছন্দের পাঁচজন ব্যক্তিকে কোনো খরচ ছাড়াই সেন্ড মানি করতে পারবে। একইভাবে প্রিয় এজেন্টের মাধ্যমে ক্যাশ আউটের ব্যয় ১৪ দশমিক ৯০ টাকায় কমিয়ে আনা হয়েছে অনেক দিন আগে থেকেই। আমরা উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখেছি, গ্রাহকের বড় অংশই পাঁচজনের বেশি ব্যক্তিকে টাকা পাঠায় না এবং ক্যাশ আউটের ক্ষেত্রে পরিচিত এবং বিশ্বাস করেন এমন এজেন্টের কাছ থেকেই সেবা নিয়ে থাকে। বিকাশের এসব উদ্যোগের কারণে গ্রাহকরা কম খরচের এসব সুবিধা পাচ্ছে।
প্রশ্ন : মোবাইল ব্যাংকিংয়ে আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে বলুন।
উত্তর : দেশে ডিজিটাল লেনদেনের ইকোসিস্টেম তৈরিতে বিকাশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দেশে ডিজিটাল পেমেন্টের পরিধি বাড়ানোর লক্ষ্যেও কাজ করছে বিকাশ। ডিজিটাল লেনদেন যত বাড়বে, তত খরচ ও সময় সাশ্রয় হবে, নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে। শুধু তাই নয়, এতে করে কার্বন নিঃসরণ কম হবে ও পরিবেশ সুরক্ষায় ভূমিকা রাখবে। বিকাশ আশা করে, সামনের দিনগুলোয় আরও বেশিসংখ্যক মানুষ বিকাশ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের সেবা ও পণ্যের মূল্য পরিশোধ করে একটি ক্যাশবিহীন, স্মার্ট অর্থনীতির পথে দেশকে এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখবে। ২০২৭ সালের মধ্যে ৭৫ শতাংশ পেমেন্ট ডিজিটাল মাধ্যমে নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।