প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ অক্টোবর ২০২৩ ১৬:২১ পিএম
আপডেট : ১৮ অক্টোবর ২০২৩ ১৬:৪৭ পিএম
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক। প্রবা ফটো
ডলার মার্কেটে অস্থিরতা, মূল্যস্ফীতি এবং ব্যাংক ঋণের সুদ হার নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। সমসাময়িক বিষয়গুলো নিয়ে আজ ব্যাংক ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেখানে নীতিগত যে পরিবর্তনগুলো আনা হয়েছে সেগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়নের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে। যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে সে পরিমাণ ডলার দেশে আসছে না। বরং পণ্যমূল্য পরিশোধের জন্য সময় বাড়িয়ে দিচ্ছেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। ফলে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক জানান, দেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এটা নিয়ন্ত্রণের জন্য বেশকিছু নীতিগত পরিবর্তন নিয়ে আসা হয়েছে কিন্তু এখনও পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। আশা করি আগামী দুই তিন মাসের মধ্যে পুরোপুরি বাস্তবায়ন হবে এবং একটা ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। দেশের ডলার সংকটের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের অনেকেই রপ্তানি মূল্য দেশে আনছেন না। বরং বিদেশি ক্রেতাদের পণ্যমূল্য পরিশোধের মেয়াদ বাড়িয়ে দিচ্ছেন। ফলে দেশ থেকে আমদানি মূল্য পরিশোধ বাবদ ডলার চলে গেলেও রপ্তানির বিপরীতে তুলনামূলক ডলার কম আসছে। তৈরি হচ্ছে ঘাটতি। এ বিষয়গুলো আমরা নজরে এনেছি এবং তা সমাধানের চেষ্টা করছি। মুখপাত্র আরও বলেন বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো তথ্য অনুযায়ী গত বছর ৫৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে। কিন্তু দেশে এসেছে ৪৬ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এখানে নয় বিলিয়ন ডলারের একটি ঘাটতি তৈরি হয়েছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে মুখপাত্র বলেন, অত্যাধিক মূল্যে ডলার কেনার জন্য ১০ ব্যাংকের ট্রেজারি কর্মকর্তাকে জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা মওকুফের বিষয়টি বিবেচনা করবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। আইন অনুযায়ী সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হবে। ভবিষ্যতে যদি কোনো ব্যাংক আইনের ব্যত্যয় ঘটায় তাহলে তাদের জরিমানা করা হবে। গণ্ডি বন্ধের জন্য ইতোমধ্যে আমরা বেশকিছু পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি। ৫০টিরও বেশি অনলাইন সাইট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের এ সমস্ত কার্যক্রম চলমান।
বুধবার (১৮ অক্টোবর) বৈঠক শেষে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার বাংলাদেশ এবিবি এর চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসাইন বলেন, আজকের বৈঠকে মূলত দুইটি বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে । এর মধ্যে একটি হলো সিআইবি। এটা নিয়ে আমাদের মধ্যে কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে। বুদ্ধিমত্তা বৃদ্ধির কিছু কৌশল আমরা হাতে নিয়েছি। আশা করি দ্রুত বিষয়টি সমাধান হয়ে যাবে। দ্বিতীয়টি হলো ঋণের সুদ হার। কারণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে আস্তে আস্তে ঋণের সুদ হার বৃদ্ধির কারণে তার অন্যের ওপর একটি চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু এটি স্বাভাবিক। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য এটা বাংলাদেশ ব্যাংকের একান্ত সিদ্ধান্ত। ঋণের পাশাপাশি আমানতের সুদ হারও আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পাবে তবে এটা অস্বাভাবিক কিছু নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
হুন্ডি বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, যারা অবৈধ পয়সা দিয়ে ডলার ব্যবসা করেন তাদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। কারণ আমরা যদি এখন ১৩০ টাকা ডলার রেট অফার করি তারা ১৪০ টাকা দিয়ে কিনবে। তাদের কাছে যেহেতু অবৈধ টাকা রয়েছে তাই যেভাবেই হোক তারা টাকা পাচার করবেই। এখানে ডলারের দাম ১৪০ বা ১৫০ টাকা কোন গুরুত্ব রাখে না। হঠাৎ হুন্ডির সঙ্গে ডলারের ফরমাল রেট মিলানোর কোন যৌক্তিকতা নেই। তা ছাড়া কারব মার্কেটে প্রতিবছরে ৩০ থেকে ৪০ মিলিয়ন ডলার লেনদেন হয়। যেটা বাংলাদেশের ওভারঅল লেনদেনের তুলনায় অতি নগণ্য। তাই এখানকার দাম নিয়ে ঘাবড়ানোর কোনো কারণ নেই। অনেক রপ্তানি মূল্য এখনও দেশে ফিরেনি। সেই রপ্তানি মূল্য দেশে আনার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কিছু কিছু ব্যাংক ঘোষিত দামের চেয়ে বেশি দরে রেমিটেন্স কিনছে সে বিষয়ে প্রশ্ন করলে তার উত্তর দিতে রাজি হননি এবিবি চেয়ারম্যান।